নতুন আইন ফলে মাথায় হেলমেট আর সাথে ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলেই একসাথে জরিমানা গুণতে হবে ৩৫ হাজার টাকা অথবা খাটতে হবে ৬ থেকে দুই বছরের জেল। তার উপরে যদি না থেকে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন তাহলে তো আর কথায় নেই। সেই সাতে ৩৫ হাজারের জরিমানা গিয়ে দাঁড়াবে ৮৫ হাজারে। সাথে জেলতো থাকছেই। নতুন সড়ক আইনে এমনই কঠোর শাস্তি আর জরিমানার বিধান রেখে গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার। নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়নে এই আইনে গাড়ির ফিটনেসের উপরও
দেওয়া হয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। রাস্তায় ফিটনেস বিহীন গাড়ি নামালে ৬ মাসের কারাদ- ভোগের পাশাপাশি জরিমানাও দিতে হতে পারে ২৫ হাজার। এছাড়া ফিটনেস বিহীন গাড়িকে জ্বালানি দিতেও পেট্রোল পাম্পগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে হাইকোর্ট।
নতুন সড়ক আইনের এ কঠোর শাস্তি আর জরিমানার চাপ পড়েছে চট্টগ্রামের বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) কার্যালয়ে। গাড়ির ডিজিটাল নম্বর প্লেট, ফিটনেস সনদ ও লাইসেন্স সংগ্রহ করতে বিআরটিএতে লম্বা লাইন ধরেছেন যানবাহনের মালিক-চালকরা। বাড়তি এই চাপ সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন বিআরটিএ’র কর্মকর্তারা।
বিআরটিএর তথ্য মতে, নতুন সড়ক আইন কার্যকর করার পর পূর্বের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে গাড়ির ফিটনেস সনদ বিতরণ ও রেজিস্ট্রেশনের আবেদন। গত দুই কার্য দিবসে ১৩৫৮টি যানবাহনের ফিটনেস সনদ দিয়েছে বিআরটিএ। যারমধ্যে ৩ নভেম্বর দেওয়া হয়েছে ৬৯৭টি ও ৪ নভেম্বর দেওয়া হয়েছে ৬৬১টি ফিটনেস সনদ। নতুন আইন কার্যকরের পূর্বের দুই কার্য দিবসে এর সংখ্যা ছিল ৮৮১টি।
যানবাহন রেজিস্ট্রেশনের আবেদনে চাপ ছিল আরো বেশি। গত দুই কার্য দিবসে শুধুমাত্র মেট্রো এলাকায় আবেদন পড়েছে ৩৩৩টি। যা আইন কার্যকরের পূর্বের দুই কার্যদিবসের প্রায় তিনগুণ। কারণ, আইন কার্যকরের পূর্বের দুই কার্যদিবসে এর সংখ্যা ছিল মাত্র ১২৯টি। আইন কার্যকরের পর রেজিস্ট্রেশনের জন্য সব থেকে বেশি আবেদন মোটরসাইকেলের। কারণ, ৩৩৩টি আবেদনের মধ্যে মোটরসাইকেলের সংখ্যা ছিল ২৯৫টি। বাকি রেজিস্ট্রেশনের মধ্যে এম্বুলেন্স ছিল ২টি, বাস ৩টি, ডেলিভারি ভ্যান ১টি, জিপ ৩টি, মাইক্রোবাস ১টি, প্রাইভেট কার ১৯টি, পিকআপ ১টি, ট্রাক ১টি, অন্যান্য বিভিন্ন ধরণের মোট ৬টি যানবাহন।
তবে ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদনে ভাটা পড়েছে। আইন কার্যকরের পূর্বের আবেদনের চেয়ে অর্ধেক আবেদন পড়েছে গত দুই কার্যদিবসে। ৩ নভেম্বর মেট্রো থেকে লাইসেন্সের আবেদন পড়েছে ১১৭টি ও জেলা থেকে ৪৫ টি। ৪ নভেম্বর মেট্রো থেকে লাইসেন্সের আবেদন পড়েছে ৯৪ ও জেলা থেকে ২১৫টি। সব মিলিয়ে গত দুই কার্যদিবসে লাইসেন্সের জন্য আবেদন পড়েছে ৪৭১টি যা পূর্বে ছিল ৭ শ’রও বেশি। শিক্ষাগত যোগ্যতা বাধ্যতামূলক করায় লাইসেন্স আবেদনকারীর সংখ্যা কমেছে বলে জানান চট্টগ্রাম বিআরটিএ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (সার্কেল-২) উসমান সরওয়ার আলম।
তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘নতুন সড়ক আইনে শাস্তি ও জরিমানার বিধান কঠোর হওয়ায় যানবাহনের মালিক-চালকরা গাড়ির কাগজপত্র ঠিক করতে বিআরটিএতে আসছে। তাইতো গত দুই দিনে দ্বিগুণ হয়েছে গাড়ির ফিটনেস সনদ বিতরণ ও রেজিস্ট্রেশনের আবেদন। পাশাপাশি ভিড় জমিয়েছিলেন ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য চালকরা। তবে নতুন আইনে চালককে ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে হলে সর্বনিম্ম অষ্টম শ্রেণি পাস হতে হবে। ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে চালকরা ভিড় জমালেও শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকায় অনেকেই আবেদন করতে পারেননি। লাইসেন্স ছাড়া বাকি সব দিকেই চাপ বেড়েছে। যা সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্মকর্তাদের’।
এদিকে অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএ’র চট্টগ্রাম কার্যালয়ে দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট এস এম মনজুরুল হক পূর্বকোণকে বলেন, ‘নতুন আইনে গেজেট প্রকাশ করা হলেও আইনটি মোবাইল কোর্ট আইনে এখনো তফসিলভুক্ত হয়নি। তফসিলভুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত কোথাও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা যাবে না। তবে নতুন এই আইন মোবাইল কোর্ট আইনে তফসিলভুক্ত করতে কাজ করা হচ্ছে। আশাকরছি দ্রুত এ কাজ সম্পন্ন হবে এবং আগামী সোমবার নতুন আইনে আমরা অভিযানও পরিচালনা করতে পারবো’। তবে প্রথমদিকে লিফলেট বিতরণ ও চালকদের সচেতনতা বৃদ্ধি করা হবে বলে জানান তিনি’।