চলতি শিক্ষাবর্ষের দুই মাসেও শিক্ষার্থীদের হাতে সব বই পৌঁছেনি। স্কুলগুলোতে শুরু হয়নি পুরো ক্লাস। নিয়মিত ক্লাসেও আসছে না অধিকাংশ শিক্ষার্থী। এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে শুরু হয়েছে শিক্ষক আন্দোলন।
জাতীয়করণের দাবিতে টানা পঞ্চম দিনের মতো ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থানের পাশাপাশি গতকাল রোববার অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। আজ সোমবার ‘গেদারিং ফর ন্যাশনালাইজেশন’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন তারা। এ ছাড়া জাতীয়করণের দাবিতে গতকাল থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
বই সংকটের পাশাপাশি শিক্ষক-কর্মচারীদের এসব কর্মসূচি ঘিরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম চরম ব্যাহত হচ্ছে বলে জানা গেছে। এতে শিক্ষার্থীদের চরম শিখন ঘাটতিতে পড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট অভিভাবকরা। এ বিষয়ে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড-এনসিটিবির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. একেএম রিয়াজুল হাসান রোববার আমার দেশকে জানিয়েছেন, চলতি বছরের বিনামূল্যের পাঠ্যবই ফেব্রুয়ারির মধ্যেই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানোর টার্গেট রয়েছে তাদের।
৪০ কোটির মধ্যে এ পর্যন্ত ২৮ কোটি বই ছাপা হয়েছে। ২৬ কোটি বই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলে গেছে। ২ কোটি বই বাইন্ডিংয়ের অপেক্ষায় পড়ে আছে। ষষ্ঠ থেকে নবম-দশমের তিন কোটির মতো বই ঐচ্ছিক, যা শেষ দিকে ছাপা হবে। সে হিসাবে ৯ কোটির মতো বই ছাপা বাকি আছে, যা ১০-১২ দিনে শেষ করা সম্ভব। বর্তমানে প্রতিদিন ৮০ লাখ বই ছাপা হচ্ছে বলেও তিনি জানান। তবে শিক্ষক আন্দোলনে শিখন ঘাটতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
এদিকে শিক্ষক আন্দোলনে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে আন্দোলনরত ‘এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোট’-এর সদস্য সচিব ও বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষক-কর্মচারী ফোরামের সভাপতি প্রিন্সিপাল দেলাওয়ার হোসেন আজীজী আমার দেশকে বলেন, রোববার দেশের বিভিন্ন এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালিত হয়েছে।
তিনি বলেন, রোববারের মধ্যে শতভাগ উৎসব ভাতার প্রজ্ঞাপন জারি এবং বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধির ব্যাপারে সুস্পষ্ট ঘোষণা দেওয়া না হলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির পাশাপাশি আজ সোমবার ‘গেদারিং ফর ন্যাশনালাইজেশন’ কর্মসূচি পালিত হবে। দাবি পূরণের আশ্বাস পেলেই তারা ক্লাসে ফিরে যাবেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন। সারা দেশে জাতীয়করণ প্রত্যাশী ৩১ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঁচ লক্ষাধিক শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছে বলেও জানান এই শিক্ষক নেতা।
এদিকে জাতীয়করণের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেছেন বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। রোববার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এই অবস্থান করে বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
আন্দোলকারীরা জানান, বৈষম্যের শিকার সারা বাংলাদেশের তৃতীয় ধাপে জাতীয়করণ হতে বাদ পড়া চলমান যোগ্য বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের আওতাভুক্ত এবং ৩ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে প্রেরিত চিঠির দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে রোববার সকাল ১০ টায় প্রথম দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়। কর্মসূচিতে সারা বাংলাদেশের বৈষম্য শিকার শিক্ষকরা উপস্থিত হয়ে তাদের দাবি আদায়ে মন্ত্রণালয়ের সু-পদক্ষেপ কামনা করেন।
বাংলাদেশ বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ফিরোজ উদ্দিন আমার দেশকে বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা এ কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।
বই সংকট আর শিক্ষক আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি প্রসঙ্গে অভিভাবক ঐক্য ফোরামের আহ্বায়ক জিয়াউল কবির দুলু আমার দেশকে বলেন, শিক্ষকরা বর্তমানে মহান পেশার পরিবর্তে বাণিজ্য হিসেবে নিয়েছেন। যে কারণে তারা ক্লাসে শিক্ষা দেওয়ার প্রধান দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে নিজেদের দাবি-দাওয়া নিয়ে বেশি ব্যস্ত। কোনো দাবি থাকলে ক্লাস বন্ধ না রেখে প্রয়োজনে ছুটির দিনে শুক্র-শনিবার আন্দোলন করার পরামর্শ দেন তিনি। অন্যদিকে শিক্ষকদের দাবির বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে দেখে তাদের ক্লাসে পাঠাতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানান এই অভিভাবক নেতা।
এ ছাড়া শিক্ষা খাতের সব প্রতিষ্ঠানে এখনো ফ্যাসিবাদের দোসররা বসে থাকায় তারা বই ছাপাসহ বিভিন্ন কাজ ব্যাহত করছে দাবি করে তিনি এ বিষয়ে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
