খামেনির মৃত্যুর পর ইরানের নেতৃত্বে কারা আসতে পারেন?

খামেনির মৃত্যুর পর ইরানের নেতৃত্বে কারা আসতে পারেন
খামেনির মৃত্যুর পর ইরানের নেতৃত্বে কারা আসতে পারেন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | আরটিএনএন
ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির বয়স এখন ৮৬ বছর। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে মন্তব্য করেছেন যে, তিনি খামেনির ‘অবস্থান’ জানেন, তবে এখনই তাকে ‘হত্যা’ করার ইচ্ছা নেই। একইসঙ্গে ট্রাম্প ইরানকে ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ’ করারও আহ্বান জানিয়েছেন।

এই মন্তব্যের পরপরই খামেনির সম্ভাব্য মৃত্যু এবং ইরানের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে জোরালো আলোচনা শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে, যখন ইসরাইলি বিমান হামলায় খামেনির বেশ কয়েকজন ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা—যাদের মধ্যে বিপ্লবী গার্ডের প্রধান হোসেইন সালামি, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির প্রধান আমির আলী হাজিজাদেহ এবং গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি নিহত হয়েছেন।

এই ঘটনায় ইরানের বর্তমান শাসন কাঠামো এবং ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। যদি খামেনি অকস্মাৎ নিহত হন, তাহলে কে হবেন ইরানের পরবর্তী সর্বোচ্চ নেতা? এ বিষয়ে দ্য ইকোনোমিক টাইমস ও ইন্ডিয়া টুডে সম্ভাব্য কয়েকজনের নাম প্রকাশ করেছে:

🔸 মোজতবা খামেনি
খামেনির ৫৫ বছর বয়সী পুত্র মোজতবা একজন মধ্যম স্তরের ধর্মীয় নেতা, যিনি মূলত পর্দার অন্তরালে থেকেই কাজ করে থাকেন। নিরাপত্তা এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিপ্লবী গার্ডের সঙ্গে তার গভীর যোগাযোগ রয়েছে। ধারণা করা হয়, খামেনি তাকে গোপনে উত্তরসূরি হিসেবে প্রস্তুত করছেন। তবে বংশানুক্রমিক ক্ষমতা হস্তান্তর ইরানের মতো রক্ষণশীল সমাজে বিতর্কের জন্ম দিতে পারে।

🔸 আলিরেজা আরাফি
খামেনির ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত আলিরেজা আরাফি কুম শহরের শুক্রবারের নামাজের ইমাম, বিশেষজ্ঞ পরিষদের উপ-সভাপতি এবং গার্ডিয়ান কাউন্সিলের সদস্য। তার অভিজ্ঞতা ও রাজনৈতিক বোঝাপড়া তাকে শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত করে।

🔸 আলী আসগর হেজাজি
সর্বোচ্চ নেতার দপ্তরের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিষয়ক উপ-পরিচালক হেজাজিকে ইরানের সবচেয়ে ক্ষমতাধর গোয়েন্দা কর্মকর্তা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যদিও তিনি ধর্মীয় নেতা নন, তার প্রভাবশালী অবস্থান এবং খামেনির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তাকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে।

🔸 মোহাম্মদ গোলপায়েগানি
খামেনির দপ্তরের দীর্ঘদিনের প্রধান কর্মী গোলপায়েগানি অত্যন্ত বিশ্বস্ত ও গোপনীয়তায় বিশ্বাসী ব্যক্তি। জনসমক্ষে কম দেখা গেলেও, রাষ্ট্রযন্ত্র পরিচালনায় তার গভীর জ্ঞান এবং ভূমিকা তাকে ক্ষমতার কেন্দ্রস্থলে রেখেছে।

🔸 আলী আকবর বেলায়াতি
সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং খামেনির অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা বেলায়াতি ইরানের বৈদেশিক নীতিতে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয়। বয়স এবং শারীরিক দুর্বলতা তার সম্ভাবনাকে কিছুটা দুর্বল করলেও, তার অভিজ্ঞতা তাকে একজন সম্মানিত প্রার্থী করে তোলে।

🔸 কামাল খারাজী
আরেক সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল খারাজী বর্তমানে ইরানের কৌশলগত পররাষ্ট্র নীতির কাউন্সিলের নেতৃত্বে রয়েছেন। তুলনামূলকভাবে মধ্যপন্থী হলেও তিনি সর্বদা ক্ষমতাসীনদের ঘনিষ্ঠ। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অভিজ্ঞ খারাজিকে একজন দক্ষ প্রযুক্তিবিদ ও কৌশলবিদ হিসেবে দেখা হয়।

🔸 আলী লারিজানি
ইরানের পার্লামেন্টের সাবেক স্পিকার আলী লারিজানি কোম শহরের প্রভাবশালী ধর্মীয় পরিবার থেকে এসেছেন। খামেনি ও নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা রয়েছে, তবে তিনি কিছুটা স্বাধীনচেতা বলেও পরিচিত। তার অভিজ্ঞতা এবং শাসনপ্রেম তাকে অন্যতম সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরেছে।

বর্তমানে ইরানের রাজনৈতিক পরিবেশ অত্যন্ত স্পর্শকাতর। খামেনির মৃত্যু বা অক্ষমতার পরিস্থিতিতে কে হবেন তার উত্তরসূরি—তা নির্ভর করবে দেশের অভ্যন্তরীণ শক্তির ভারসাম্য এবং ধর্মীয় ও সামরিক এলিটদের সিদ্ধান্তের উপর।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here