গত বুধবার দিল্লিতে মন্ত্রিপরিষদের এক বৈঠকে অযোধ্যার ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ মামলার রায় নিয়ে কোনো বিতর্কিত মন্তব্য না করতে মন্ত্রিসভার সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে শান্তি বজায় রাখারও আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে নরেন্দ্র মোদি দেশে এই মুহুর্তে মৈত্রী ও সম্প্রীতির পরিবেশ বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, অযোধ্যা মামলার বিষয়টি নিয়ে সবাইকে এই বিষয়ে অপ্রয়োজনীয় মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং দেশে সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে।
বিজয় এবং পরাজয়ের দাঁড়িপাল্লায় এই রায়টিকে দেখা উচিৎ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন নরেন্দ্র মোদি।
আবার আগামী ১৭ নভেম্বরের মধ্যে বাবরি মসজিদের রায় আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, ওই দিন ভারতের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈর মেয়াদ শেষ হবে।
২০১০ সালে অযোধ্যা মামলার শুনানিতে এলাহাবাদ হাইকোর্ট যে রায় দেয়, তাতে ২.৭৭ একরের ওই জমি সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড, হিন্দু মহাসভার রাম লাল্লা সংগঠন এবং নির্মোহী আখড়া সম্প্রদায়ের মধ্যে তিন ভাগে ভাগ করে দিতে বলা হয়। ওই জমির মালিকানা নিয়ে এর পর থেকে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড, নির্মোহী আখড়া না ভগবান রামচন্দ্রের (রাম লালা) শুরু হয় সেই বিবাদ।
প্রসঙ্গত, ১৯৯২ সালে হিন্দুরা ওই বিতর্কিত জায়গায় একত্রিত হয়ে মোগল সম্রাট বাবরের নামের ষোড়শ শতকের মসজিদটি ধ্বংস করে দেন। এ নিয়ে পরবর্তী দাঙ্গায় দুই হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
এ ছাড়া এই মসজিদ নিয়ে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে বিতর্কে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। মুসলমানরা সেখানে নতুন একটি মসজিদ গড়তে চান। হিন্দুদের দাবি, সেখানে তাদের দেবতা রামের জন্ম হয়েছিল। কাজেই তারা সেখানে রামমন্দির নির্মাণ করতে চান।
১৫২৬ সালে মোগল সম্রাট বাবর মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। ১৮৮৫ সালে মসজিদ প্রাঙ্গণে হিন্দু ধর্মীয় সংস্থাগুলো দেবতা রামের সম্মানে একটি মন্দির নির্মাণের অনুমিত চাইলে তা প্রত্যাখ্যাত হয়।
১৯৪৯ সালে একদল হিন্দু মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে রামের একটি মূর্তি স্থাপন করেন। কিন্তু সেটি না সরিয়ে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। এ ছাড়া একজন হিন্দু ধর্মীয় গুরুকে সেটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেয়া হয়।
১৯৮৬ সালে ফয়জাবাদ জেলা প্রশাসন মসজিদ প্রাঙ্গণ হিন্দুদের ধর্মীয় আচার পালনের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। এর পর ১৯৯২ সাল পর্যন্ত পরিস্থিতি বেশ শান্তই ছিল। কিন্তু ওই বছর বর্তমানে ক্ষমতাসীন বিজেপিসহ বিভিন্ন উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মসজিদটি ধ্বংস করে দেন।