জাবি শিক্ষক সমিতির ৪ জন সাধারণ সম্পাদক হল ত্যাগ ও পদত্যাগের দাবির সতে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের অপসারণ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনার পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে মঙ্গলবার বিকাল ৪টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দুপুরে সিন্ডিকেটের জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
একই সাতে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের অপসারণের দাবিতে চলমান আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলা হওয়ার পরও শিক্ষক সমিতির নীরব ভূমিকা পালন করার কারণে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষসহ চারজন পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। পদত্যাগকারীরা হলেন- কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন তুহিন, সদস্য অধ্যাপক মাহবুব কবির ও অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক
অধ্যাপক সোহেল রানা এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
সোহেল রানা বলেন, আমরা চারজন পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যেহেতু শিক্ষক সমিতি এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ, তাই এ কমিটি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আস্থা হারিয়েছে। তাই আমরা এই কমিটিতে থাকছি না।
জাহাঙ্গীরনগরে অস্থিরতার শুরু গত আগস্টে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তখন আন্দোলন শুরু করেন। এর মধ্যেই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে উপাচার্য ফারজানার কাছে চাঁদা চাওয়ার অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনার পরে ছাত্রলীগের দুই শীর্ষনেতাকে পদ হারাতে হলেও তারা অভিযোগ অস্বীকার করে উল্টো অধ্যাপক ফারজানার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন।-বিডিনিউজ
উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাদের অর্থ দিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে, যার অডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় একই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা ‘ঈদ সালামী’ হিসেবে ১ কোটি টাকা পাওয়ার কথা স্বীকারও করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তার তদন্তের দাবিতে নতুন কর্মসূচিতে নামে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
চাপের মুখে উপাচার্য ফারজানা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসলেও তা ফলপ্রসূ না হওয়ায় গত ১৯ সেপ্টেম্বর তার পদত্যাগের দাবিতে শুরু হয় আন্দোলন, গত সপ্তাহ থেকে আন্দোলনকারীরা শুরু করে ধর্মঘট।
এরপর সোমবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে রাখেন আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীর। মঙ্গলবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে উপাচার্যকে বাসা থেকে বের করে কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সেখানে উপস্থিত হন তার সমর্থক শিক্ষক-কর্মকর্তারা।
দুই পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাক-বিত-া চলার মধ্যেই বেলা পৌনে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানার নেতৃত্বে একটি মিছিল সেখানে আসে। সেই মিছিল থেকে আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হয় ছাত্রলীগ কর্মীরা। তারা এলোপাতাড়ি মারধর করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এসময় একাধিক শিক্ষককেও চ্যাংদোলা করে দূরে নিয়ে ফেলতে দেখা যায়। আন্দোলনকারীরা বলছেন, উপাচার্যের বাসভবনের সামনে এই হামলায় আট শিক্ষকসহ অন্তত ২৫ জন আহত হন। সেখানে দায়িত্ব পালন করার সময় চার সাংবাদিকও ছাত্রলীগ কর্মীদের মারধরের শিকার হন।
হামলার বিষয়ে প্রশ্ন করলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানা বলেন, আমরা শিবিরমুক্ত ক্যাম্পাস চাই। আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে শিবির সংশ্লিষ্টতার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল।
অন্যদিকে আন্দোলকারীদের মুখপাত্র দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, আন্দোলনে কোনো শিবির সংশ্লিষ্টতা নেই। যে কোনো শক্তিকে প্রতিহত করার জন্য শিবির ব্লেইম দেওয়াটা পুরোনো অপকৌশল। বুয়েটের আবরারকে এভাবেই হত্য্ াকরা হয়েছে, এখানেও একইভাবে অভিযোগ তুলে হামলা চালানো হয়েছে।
আন্দোলনে থাকা শিক্ষক পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক খবির উদ্দিন বলেন, উপাচার্যপন্থি শিক্ষকদের উপস্থিতি ও প্রত্যক্ষ উসকানিতে ছাত্রলীগ আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। শিক্ষকদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা। ছাত্রলীগ যখন আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে তখন ভিসিপন্থি শিক্ষকরা তাদেরকে স্বাগত জানিয়ে হাততালি দিয়েছে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ঘটনাস্থলে মব তৈরি হয়েছিল। চেষ্টা করেও আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। বড় ঘটনা এড়াতে আমরা তৎপর আছি।
মারধরের ঘটনার আধা ঘণ্টা পরে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম তার সমর্থক শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে নিজের কার্যালয়ে যান। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের সামনে সহকর্মী ও ছাত্রলীগ কর্মীদের ‘গণঅভ্যুত্থানের’ জন্য ধন্যবাদ জানান।
শুধু ‘শারীরিক ধাক্কাধাক্কিকে’ হামলা বলা যায় কি না- সেই প্রশ্ন করে উপাচার্য বলেন, ওরা আহত হয়েছে শারিরিকভাবে-আপনারা বলতে পারেন। আমাদের মেয়েদেরকেও তারা ধাক্কা দিয়েছে, শিক্ষক মেয়েদেরকে। আমি এবং ট্রেজারার, আমরা মর্মাহত, তারা আমাদের যে ভাষায় গালাগালি করেছে।
আন্দোলনের পেছনে জামায়াতপন্থিদের হাত রয়েছে মন্তব্য করে অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেন, তদন্ত শুধু আমি করব না। সরকারের উচিৎ হবে এই চক্রটাকে দেখা । এরা কোথায় ছড়িয়ে আছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর অবস্থা কেন খারাপ হচ্ছে।
একই সাতে জরুরি বৈঠকে বসে সিন্ডিকেট; সেখানেই বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ঘোষণা আসে।