চোখ ফুলে ঢোল। চেহারায়ও নেই লাবণ্য। চার দিন আগের চুলের জেল্লাও গেছে কমে। টানা কয়েক দিনের অনুষ্ঠান বলে কথা। সবে মেয়ের হলুদ গেল। এখনো ছেলের বাড়ির হলুদ অনুষ্ঠান আছে। এরপর বিয়ে, বৌভাত। কয়েক দিন ধরে চলা যেকোনো আয়োজন বা উৎসবেই এমন হয়।
সামনে আসছে দুর্গাপূজা। ষষ্ঠী থেকেই নানা কাজ, নানা অনুষ্ঠান। দশমীতে শেষ। এ রকম সময় সাজ ফুটে উঠবে, ত্বক যদি থাকে ভালো। তবে দৌড়াদৌড়ির প্রভাবটা পড়ে চেহারায়। অনুষ্ঠানের আগে, পরে, মাঝে এ কারণে যতটুকু সময় পাওয়া যায়, ত্বকের যত্ন নিতে হবে।
রাতে
ত্বকচর্চায় সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টি সহায়তা করে, আট ঘণ্টা কুম্ভকর্ণের ঘুম। যা প্রায় অসম্ভবই। তবে রাতের কয়েকটি কাজ রাতেই শেষ করুন। যেমন ত্বক থেকে মেকআপ তোলা। এই কাজটা সহজ করে করার উপায় বাতলে দিলেন রূপবিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন। ত্বক বেশি শুষ্ক হলে নারকেল তেল, না হলে বেবি অয়েল তুলায় নিয়ে মেকআপ তুলে ফেলুন। সময় লাগবে দুই থেকে তিন মিনিট। এরপর গরম পানিতে একটি তোয়ালে ভিজিয়ে ভালোভাবে চেপে নিন। মুখ মুছে নিন এবার। এরপর ধুয়ে নিন। ব্যস ঝামেলা শেষ। অনুষ্ঠানগুলোতে পানি কম পান করা হয় ব্যস্ততার কারণে। ত্বকের শুষ্কতা আর শারীরিক চাপ কমাতে সহায়তা করবে গোসল। যাঁদের উচ্চরক্তচাপের সমস্যা আছে, ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল সারুন। রক্তচাপ কম থাকলে গরম পানি দিয়ে গোসল করে নিন।
গোসল করার পরও যদি ক্লান্তি না কাটে, তাহলে পানিতে পা ডুবিয়ে রাখার পরামর্শ দিলেন আফরোজা পারভীন। ধৈর্য ধরে ১৫ মিনিট এই কাজ করলে রক্তসঞ্চালন ভালো হবে, ভেতর থেকে আরাম বোধ করবেন।
রাতেই চেষ্টা করুন চুল ব্লো ড্রাই করে ফেলতে। এক ঢিলে দুই পাখি মারার মতো হবে। চুলের স্বাস্থ্যও ঠিক থাকবে, আবার পরের দিনের জন্য চুল তৈরি হয়ে থাকবে। ঘুমানোর আগে অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার বা ক্রিম ব্যবহার করবেন।
দিনের শুরুতে
যে–ই কাজটি দিন শেষে রাতে করেছেন, সেটি দিয়েই দিন শুরু করুন। অর্থাৎ মুখ ধুয়ে ভালো করে ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে। সকালের নাশতায় ভিটামিন সি আছে এমন ফলের রস, কলা বা খেজুর রাখবেন। এতে সারা দিন দৌড়ঝাঁপের শক্তি পেয়ে যাবেন।
ঘুম থেকে উঠে অনেকের চোখে ফোলা ভাব থাকে। কম পানি খাওয়ার জন্য অনেকের আবার চোখ বসে যায়। দেখে ক্লান্ত লাগে। চোখ ফোলা লাগলে গাঢ় বাদামি রঙের আইশ্যাডো চোখের ওপরে, নিচে, পাশে লাগান। নাটকীয়তা ভাব চলে আসবে চোখের সাজে, ফোলা ভাবও কমে যাবে। চোখ বসানো থাকলে চোখের চারপাশে হালকা রঙের শিমারি, চকচকে আইশ্যাডো লাগাবেন। কাজল ও আইলাইনার বাদ দেবেন এ ক্ষেত্রে।
সাজে সতেজ
সারা দিন চেহারায় সতেজ ভাব ধরে রাখবে হালকা মেকআপ। চোখের সাজে আইশ্যাডো বাদ। মাসকারা দিন। একঘেয়েমি কাটাতে চোখে আলগা পাপড়ি লাগাতে পারেন। মোটা করে আইলাইনার দিতে পারেন। একটু ওপরের দিকে টানা আইলাইনারে চোখ ফুটে উঠবে হাসির রেখা। একইভাবে ঠোঁটকে একটু বাড়িয়ে আঁকলে চেহারায় হাস্যোজ্জ্বলভাব চলে আসবে। সাজের সময় লিপস্টিক আর ব্লাশঅন একদমই হালকা রাখবেন। তবে সারা দিনের জন্য মেকআপ করলে সেটা ম্যাট ও ক্রিমভিত্তিক হলেই ভালো বলে মনে করেন আফরোজা পারভীন।
টুকটাক
হাত-মুখ ধোয়ার সময় কমপক্ষে ২৫ বার মুখে পানির ঝাপটা দিন। এতে ত্বক ভেতর থেকে পরিষ্কার হয়ে যাবে। শুষ্কতা চলে যাবে। পানির ঝাপটায় প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজারের কাজও হয়ে যাবে। রোদের পোড়া ভাব দূর করতে টক দই আর হলুদের পাউডার একসঙ্গে মিশিয়ে ১০ মিনিট মালিশ করলেই ভালো ফল পাবেন। চুলের জন্য সবচেয়ে ভালো কাজ করবে তেল। তেল মালিশ করে অন্তত ৩০ মিনিট রেখে দেবেন। অনুষ্ঠানের সময় আপনার কথামতো বাধ্য হয়ে থাকবে।
উৎসব যে কদিনেরই হোক না কেন, টানা হলে কিছুটা ক্লান্তি চলে আসে সবার মধ্যেই। সাজ যেহেতু গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় এ সময়, ত্বক ভালো রাখতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা ও পানি খাওয়া—এ দুটো বিষয় খেয়াল রাখলে শারীরিক অনেক ঝামেলাই কমে যাবে। চেহারায়ও থাকবে সতেজ ভাব।