মুসলিমবিদ্বেষী নাগরিকত্ব আইন ও কাশ্মীর ইস্যুতে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের সমালোচনার জেরে দেশটি থেকে পামওয়েল কেনা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। তবে আর্থিক লোকসান হলেও সত্য বলতে পিছপা হবেন না বলে জানিয়েছেন মাহাথির।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়, নাগরিকত্ব ইস্যুতে মোদি সরকারের কঠোর সমালোচনার জেরে সোমবার এ সিদ্ধান্ত নেয় দিল্লি।
বার্ষিক ৯ মিলিয়ন টনেরও বেশি পাম তেল কেনা ভারত এ খাতে বিশ্বের বৃহত্তম আমদানিকারক দেশ । মূলত ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়া থেকে এ তেল সংগ্রহ করে দেশটি। মালয়েশিয়ার বদলে এখন প্রতি টনে ১০ মার্কিন ডলার বেশি দিয়ে অপরিশোধিত পাম অয়েল ইন্দোনেশিয়া থেকে কিনছে ভারত।
মালয়েশিয়া থেকে পামওয়েল না কিনতে নিজ দেশের আমদানিকারকদের সতর্ক করে দিয়েছে ভারত সরকার। নির্দেশনা অনুযায়ী, ইতিমধ্যে কুয়ালালামপুর থেকে পাম তেলা কেনা বন্ধ করে দিয়েছে ব্যবসায়ীরা।
অন্যদিকে রফতানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হুট করেই বড় ধাক্কা লেগেছে মালয়েশিয়ার অর্থনীতিতে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পামওয়েল উৎপাদক দেশ হিসেবে মালয়েশিয়ার ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। অন্যদিকে ভারত এ তেলের বৃহত্তম ক্রেতা।
ভারতে অশোধিত তেল পরিশোধনের সঙ্গে যুক্ত একজন শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তির জানান, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে মালয়েশিয়া থেকে অপরিশোধিত পাম তেল আমদানিতে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে সরকারের নির্দেশনার (অনানুষ্ঠানিক) কারণে কেউ কিনছে না।’
তিনি আরও জানান, সরকারের নির্দেশনার ফলে এখন বেশি দামে ইন্দোনেশিয়া থেকে পাম তেল আমদানি করতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।
আমরা মালয়েশিয়া থেকে ক্রুড পাম তেল (সিপিও) আমদানি করতে পারি। তবে সরকার বলে দিয়েছে, চালান আটকে গেলে আমাদের কাছে আসবেন না। আর কেউই চায় না তাদের চালান বন্দরে আটকে যাক- মুম্বাইভিত্তিক একজন ব্যবসায়ী রয়টার্সকে এই তথ্য জানান।
কাশ্মীরে নিপীড়িত মুসলমানদের পক্ষাবলম্বন করায় মালয়েশিয়াকে একঘরে করার পরিকল্পনা নিয়েছিল ভারত। এ জন্য গত অক্টোবরে মালয়েশিয়া থেকে পামওয়েল কেনা বন্ধের পরিকল্পনা করেছিল দেশটি।
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট কাশ্মীরের বিশেষ স্বায়ত্তশাসনের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে রাজ্যটিতে দীর্ঘদিন যোগাযোগ অচলাবস্থা আরোপ করেছিল বিজেপি সরকার। সেখানে সহিংসতায় বেশ কয়েকজন কাশ্মীরি নিহত হয়েছেন। অধিকাংশ রাজনীতিবীদ, শিশুসহ বহু কাশ্মীরিকে কারাগারে আটক করা হয়েছে।
জানা যায়, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিয়ে অধিকৃত কাশ্মীরে ভারতের দখলদারিত্ব ও নৃশংসতার সমালোচনা করেছেন। সেখানে তিনি শান্তিপূর্ণ উপায়ে ভারত-পাকিস্তানকে কাশ্মীর সংকট সমাধানের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
তার ওই বক্তব্যের পর ভারতীয় উগ্র হিন্দুত্ববাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমর্থকরা সামাজিক মাধ্যমে বয়কট মালয়েশিয়া প্রচার চালিয়েছেন। পরে মোদি সরকারের মুসলিমবিদ্বেষী নাগরিকত্ব আইন নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন মাহাথির।
ক্ষোভ প্রকাশ করে মাহাথির বলেছিলেন, ‘আমি দুঃখের সঙ্গে দেখছি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র বলে দাবি করা ভারত এখন কিছু মুসলিমদের নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করতে উদ্যোগ নিচ্ছে। আমরা যদি এখানে এটি বাস্তবায়ন করি, আমি জানি না তাহলে কী ঘটবে! বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতা তৈরি হবে এবং সবাই ভোগান্তির শিকার হবে।’