প্রায় এক বছর ধরে করোনা মহামারির তাণ্ডবে সারা বিশ্ব বিপর্যস্ত। এই ভাইরাসের প্রতিষেধক হিসেবে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের টিকা ইতিমধ্যে আবিষ্কৃত হয়েছে। কোনো কোনো দেশে তা প্রয়োগও শুরু হয়েছে। বিধ্বংসী এই মহামারির তাণ্ডব থেকে মুক্তির স্বপ্নে যখন গোটা বিশ্ব বিভোর তখন মহামারিটির নতুন এক প্রজাতির সন্ধান মিলেছে যুক্তরাজ্যে। ইতালিতেও পাওয়া গেছে নতুন প্রজাতিটি।
করোনার নতুন এই প্রজাতি অনেক বেশি সংক্রমণপ্রবণ বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে বিশ্বব্যাপী দেখা দিয়েছে নতুন উদ্বেগ ও আতঙ্ক। নতুন প্রজাতির করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে ইতিমধ্যে ২০টিরও বেশি দেশ যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আকাশপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে।
যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ভাইরাস প্রথমে দক্ষিণ আফ্রিকায় দেখা গিয়েছিল। এই প্রজাতির করোনাভাইরাস পুরোনো প্রজাতির তুলনায় ৭০ শতাংশ বেশি গতিতে ছড়ায়। তবে নতুন ধরনের এই ভাইরাস মানবদেহের জন্য আরও মারাত্মক কি না, সেই বিষয়ে কিছুই জানা যায়নি।
গেল সপ্তাহে যুক্তরাজ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে এই ভাইরাস সম্পর্কে অবগত করে। লন্ডনে নতুন করে যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তাদের অধিকাংশের দেহে নতুন প্রজাতির এই করোনার দেখা মিলেছে। দেশটির জনস্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, রবিবার এই ভাইরাসে এক হাজার ১০০ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
এই ভাইরাস ঠেকাতে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী জনসন আগামী ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত লন্ডন এবং দক্ষিণপূর্ব ইংল্যান্ডে লকডাউন ঘোষণা করেছেন। গত শনিবার জনসন বলেছেন, ‘যত দিন যাচ্ছে, ততই এই ভাইরাস সম্পর্কে আমরা বেশি করে জানছি। ভাইরাস যদি চরিত্র বদল করে আক্রমণ করে, তবে আমাদেরও আত্মরক্ষার চরিত্র বদল করতে হবে।’
ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক বলেছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়া যাচ্ছে না, ততক্ষণ পর্যন্ত এই নতুন ধরনের ভাইরাসকে আটকানো কঠিন। কারণ, এই ভাইরাস অতি দ্রুত ছড়ায়।’ যুক্তরাজ্যে এখন করোনার প্রতিষেধক দেয়া চলছে। এখন ৮০ বছরের বেশি বয়সীদের এই প্রতিষেধক দেয়া হচ্ছে।
ভাইরাসের চরিত্র বদল করা নতুন নয়। করোনাভাইরাসেরও বিভিন্ন প্রজাতি আছে। তবে এখনো পর্যন্ত সেই প্রজাতিগুলোর মধ্যে আর বেশি ক্ষতিকারক কিছু দেখা যায়নি। কিন্তু নতুন করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, তা আগের তুলনায় অনেক বেশি ছোঁয়াচে এবং ভয়ংকর, যা দ্রুত ছড়াচ্ছে।
গত মাসে দেখা গিয়েছিল, লাখ লাখ মিংক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। আবার স্পেনে একটি নতুন ধরনের করোনাভাইরাস পাওয়া গিয়েছিল, যা ইউরোপের নানা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু দুটি ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ওই ভাইরাস মূল করোনাভাইরাসের থেকে মারাত্মক নয়। কিন্তু যুক্তরাজ্যে গত সপ্তাহে যে নতুন ধরনের করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে, তা আগের থেকে অনেক দ্রুত ছড়াচ্ছে।
তবে এই ভাইরাসে মানুষের অসুস্থতা আরও জটিল চেহারা নিচ্ছে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা এমনিতেই মারাত্মক। ফলে করোনা হলে তাতে জীবনের ঝুঁকি থাকে। সে জন্যই দ্রুত করোনা ছড়ালে তা আরও মারাত্মক হয়ে উঠতে বাধ্য।