আজ সোমবার সকালে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘ঢাকা গ্লোবাল ডায়ালগ-২০১৯’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন উন্নয়নের স্বার্থে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে টেকসই প্রত্যাবাসনে বিশ্ব সম্প্রদায়কে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আঞ্চলিক নিরাপত্তার প্রসঙ্গে আমি বলতে চাই, নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা নাগরিক শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, এ অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্যও হুমকিস্বরূপ। বিশ্ব সম্প্রদায়কে বিষয়টি অনুধাবন করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।’
এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর আর্থসামাজিক উন্নয়ন এবং নিরাপত্তা ও শান্তি বজায় রাখার জন্য ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিস) এবং ভারতের অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ওআরএফ) যৌথভাবে তিন দিনব্যাপী এই ডায়ালগের আয়োজন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগর-সংলগ্ন দেশগুলোর অর্থনীতি ও নিরাপত্তার জন্য এ অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা অত্যাবশ্যক।
শেখ হাসিনা বলেন, সমুদ্রসীমা ও সামুদ্রিক অর্থনীতির ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ মনে করে, পরস্পরের সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতা বা ‘জিরো-সাম গেম’ বঙ্গোপসাগর বা ভারত মহাসাগরের ‘নীল অর্থনীতি’ বিকাশের জন্য সহায়ক নয়। বরং তা এ অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধক।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আরও মনে করি, সমুদ্র সম্পদের টেকসই ব্যবহার ও এর মাধ্যমে “নীল অর্থনীতির” টেকসই উন্নয়নের জন্য সমুদ্র তীরবর্তী দেশগুলোর মধ্যে সহায়তাপূর্ণ, সৌহার্দ্যপূর্ণ, মর্যাদাপূর্ণ ও সমতাপূর্ণ সম্পর্ক আবশ্যক।’

এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা জোরদারকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ সর্বদা বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগর এলাকায় শান্তিপূর্ণ ও সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক জোরদারে সচেষ্ট। বাংলাদেশ তার দুই প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা সম্পর্কিত বিরোধ শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করেছে। সমস্যা সমাধানে আমাদের এরূপ সহযোগিতা ও প্রচেষ্টা অন্য অঞ্চলের জন্য শিক্ষণীয় হতে পারে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সভাপতি ড. সামির শরণ এবং বিসের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম আবদুর রহমান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে ‘আগামীর বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি ভিডিও উপস্থাপনা ও পরিবেশিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগর এলাকায় জলদস্যুতা, সশস্ত্র ডাকাতি, উপকূলবর্তী ও সামুদ্রিক এলাকায় সন্ত্রাসী আক্রমণ, মানব পাচার, অস্ত্র ও মাদক পাচারের মতো অপ্রথাগত নিরাপত্তা ঝুঁকি নিরসনে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘কোনো একক দেশের পক্ষে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, মাছসহ সামুদ্রিক সম্পদের মাত্রাতিরিক্ত আহরণ ও নানাবিধ দূষণ এই এলাকার সামুদ্রিক পরিবেশকে বিপন্ন করে তুলেছে। শুধু বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগর নয়, বিশ্বের সব সাগর-মহাসাগরই আজ এ ধরনের বহুবিধ সমস্যায় আক্রান্ত।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিবছর বিশ্বের সাগর-মহাসাগরগুলোতে যোগ হচ্ছে ৮ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য। দূষণ ও সামুদ্রিক সম্পদের মাত্রাতিরিক্ত আহরণ সামুদ্রিক বাস্তুসংস্থানকে বিনষ্ট করছে। পৃথিবীর সামগ্রিক পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে মানুষের জীবন-জীবিকা।
জলবায়ু পরিবর্তনে তেমন কোনো ভূমিকা না থাকলেও বাংলাদেশকে এর প্রভাবে অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে আখ্যায়িত করে সরকারপ্রধান বলেন,‘এর ফলে সৃষ্ট বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, খরা, নদীভাঙনসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগকে সঙ্গে নিয়েই আমাদের বসবাস করতে হয়।’ এ প্রসঙ্গে তিনি অতি সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এর প্রসঙ্গ টেনে দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের সক্ষমতা অর্জনেরও উদাহরণ দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন বিরাট এক ঘূর্ণিঝড় আমাদের আক্রমণ করতে এসেছিল। এ রকম প্রতিনিয়তই আমাদের মোকাবিলা করতে হয়। তবে, দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা এখন যথেষ্ট সচেতন এবং দুর্যোগকালীন করণীয় বিষয়েও আমরা যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে থাকি। আর প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচিও আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।’

তাঁর সরকার নিজস্ব অর্থায়নে ‘ট্রাস্ট ফান্ড’ গঠনসহ বেশ কিছু অভিযোজন এবং প্রশমনমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে শতবর্ষব্যাপী ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ গ্রহণ করা হয়েছে।
ভৌগোলিক কারণে ভারত মহাসাগরের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই স্থান দিয়ে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রপথ অতিক্রম করেছে, যা এশিয়ার বৃহৎ অর্থনীতিগুলোর জ্বালানি ও রসদের জোগান দেয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিশ্বের কনটেইনার শিপমেন্টের অর্ধেক এবং সমুদ্রবাহিত তেল বাণিজ্যের শতকরা ৮০ ভাগ অতিক্রান্ত হয় ভারত মহাসাগর দিয়ে। বিশ্বের প্রমাণিত তেল মজুতের শতকরা ১৬ দশমিক ৮ ভাগ ও প্রাকৃতিক গ্যাস মজুতের শতকরা ২৭ দশমিক ৯ ভাগ এই মহাসাগর ও তৎসংলগ্ন সাগরে অবস্থিত।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here