নোবেল পুরস্কারের প্রবর্তক আলফ্রেড নোবেলের করে যাওয়া উইল থেকে জানা যায় কারা নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হবেন এই সংক্রান্ত ঘোষণার কথা। কিন্ত এই পর্যন্ত সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়েছে সর্বমোট ১১২ বার। মোট ১১৬ ব্যক্তি এ পুরস্কারে ভূষিত হন। এটি উইলে লেখা আছে, ‘তাঁদেরকেই সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হবে যারা একটি আদর্শগত প্রবণতার মাধ্যমে অনন্যসাধারণ কোন কাজ প্রদর্শন করতে পারবেন’। এই উইলের সাথে সামঞ্জস্য না থাকায় বা কোন আদর্শের জন্ম দিতে না পারায় অনেক বড় বড় সাহিত্যিক নোবেল পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। রাশিয়ান গ্রেট তলস্তয় এবং নরওয়ের বিখ্যাত নাট্যকার হেনরিক ইবসেনের নোবেল না পাওয়াটা এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য।
সাহিত্যে নোবেল পাওয়াদের নারীদের পরিচয় এবং তাঁদের প্রধানতম কাজ নিয়ে আজকের প্রবন্ধ। সাহিত্যে ২০১৮ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন উল্গা তোকারজুক। পোলিশ এই লেখক ২০১৮ সালে তিনি ম্যান বুকার পুরস্কারে ভূষিত হন। তাঁর সাহিত্যে নোবেল পাওয়ার বছর যদিও ’১৮ , তবে এটার ঘোষোণা আছে ২০১৯ সালে। তিনি বুদ্ধিজীবী ও এক্টিভিস্ট হিসেবে পোল্যান্ডে সমাধিক পরিচিত। তোকারজুকের বিখ্যাত সাহিত্যকর্মগুলো হল- ‘দি বুকস অভ জ্যাকব’, ‘ড্রাইভ ইউর ওন প্লাউ ওভার দি বোন্স অভ দি ডেড’, এবং ‘ফ্লাইটস’। তোকারজুকের খ্যাতি তাঁর লেখার পৌরাণিক ভঙ্গির জন্য । পেশায় তিনি একজন বিশেষজ্ঞ সাইকোলজিস্ট।
সাহিত্যে নোবেল পাওয়া নারীদের মধ্যে চতুর্দশতম সাহিত্যিক হলেন কানাডিয়ান লেখক এলিস মনরো। মনরো তার সারাজীবনের সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ নোবেল পুরস্কার পান ২০১৩ সালে। তিনি মূলত তাঁর ছোটগল্পের জন্য বিখ্যাত। এবং তাঁর গল্পে দক্ষিণ পশ্চিম অন্টারিও এলাকা , স্কচ আইরিশ বংশোদ্ভূত জনগোষ্ঠীর চারিত্রিক বৈশিষ্ঠ্যগাথা বর্ণনা করেছেন। সাধারণ মানুষের জটিল ও মনোগত দিক ও প্রকাশিত হয়েছে তাঁর লেখনীতে।
২০০৯ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন জার্মান- রোমানীয় সাহিত্যিক হার্টা মুলার। তিনি কাব্যিক ঢঙে উপন্যাস লেখার জন্য বিখ্যাত। সাহিত্যজগতে তার পদার্পণ ১৯৮২ সালে ‘নাদির্স’ নামক ছোটগল্পের সংকলন দিয়ে। মুলারের বিখ্যাত সাহিত্যকরর্ম হলো ‘ দি হাংগার এঞ্জেল’, যেটা প্রকাশিত হয় ২০০৯ সালে। ইউক্রেনের একটি ক্যাম্পে লিও অবার্গ নামক এক যুবকের উপর ঘটে যাওয়া অনাচারের কাহিনী নিয়ে রচিত এই উপন্যাস সাহিত্য মহলে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল।
২০০৭ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন ইরানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ উপন্যাসিক ডরিস লেসিং। দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিটিশ অধ্যুষিত এলাকায় ঘটে যাওয়া বর্ণবাদী বৈষম্যের স্বরূপ তুলে ধরে লিখেন ‘দ্য গ্রাস ইজ সিংগিং’। তার আরেকটা বিখ্যাত সাহিত্যকর্ম হলো ‘ দ্য গোল্ডেন নোটবুক’। রাজৈতিক ও এবং নারীবাদী লেখিকা হিসেবে উনি সাহিত্যমহলে বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন। ২০০৪ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান এলফ্রিদে জেলিনেক। অস্ট্রিয়ান এই বিখ্যাত উপন্যাসিক ও নাট্যকারের উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম হল ‘লিসা’স শ্যাডো’ এবং ‘দ্য পিয়ানো টিচার’। নারীর যৌনতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করার অভি্যোগে এই সাহিত্যিক অনেকটা বিতর্কিত পাঠকমহলে।
১৯৯৬ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন পোলিশ কবি, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক মারিয়া উইস্লোয়া জিম্ব্রস্কা। তার কাব্যিক প্রতিভা নিয়ে প্রশংসা করতে গিয়ে নোবেল কমিটি তাঁকে ‘মোজার্ট অভ পোয়েট্টি’ সম্বোধন করেন। তাঁর কবিতায় তিনি যুদ্ধ ও ত্রাসের স্বরূপ প্রকাশ করেছেন স্বভাবসুল্ভ তীর্যক কিন্তু হাস্যরসাত্মক ভঙিমায়। তার প্রথম কবিতা ‘ আই এম লুকিং ফর আ ওয়ার্ড’ প্রকাশিত হয় ১৯৪৫ সালে । টনি মরিসন আমেরিকার বিখ্যাত লেখক। মারা যান এই বছরে। মরিসন তার ‘ বিলাভেড’ উপন্যাসের জন্য পাঠকের কাছে সমাদৃত। বিলাভেড প্রকাশিত হয় ১৯৮৭ সালে। আফ্রিকান –আমেরিকান এক ভদ্র মহিলার নির্যাতিত হবার বর্ণনা নিয়ে এই উপন্যাস রচিত। পরে এই উপন্যাসের জন্য মরিসন পুলিৎজার পুরস্কার লাভ করেন। পরে এই উপন্যাসের কাহিনী সিনেমা নির্মিত হয়। সিনেমায় কেন্দ্রীয় চরিত্র সেথের জায়গায় অভিনয় করেন অপরা উইনফ্রে। তার আরেকটা উল্লেখযোগ্য কর্ম হল ‘ দ্য ব্লুয়েস্ট আই’। টনি মরিসন সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন ১৯৯৩ সালে।
নাদিন গোর্ডিমার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন ১৯৯১ সালে। নোবেল কমিটি তাঁর সাহিত্যকর্মকে ‘মানবতার জন্য একটা বড় উপকার’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তাঁর রচনাকর্মের মূল উপজীব্য বিষয় হলো বর্ণবাদ ও বর্ণবৈষম্য। তার বিখ্যাত সাহিত্য কর্ম হল, ‘দ্য কঞ্জারভেসনিষ্ট’।
নেলী সাছস সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন ১৯৬৬ সালে। জার্মানি বংশোদ্ভূত এই সাহিত্যিক বেড়ে ওঠেন সুইডেনে। কবি ও নাট্যকার এই সাহিত্যিকের লেখার মূল উপজীব্য ছিলো নাতসী বাহিনীর শাসনামলে ইহুদীদের ভোগান্তি। তাঁর বিখ্যাত সাহিত্যকর্ম হল- ’এলিঃ এ মিস্ট্রি প্লে প্লে অভ দ্য সাফারিংস অভ ইজরায়েল’ সাহিত্যে প্রথম হলোকাস্ট নাটক হিসেবে এটি সমাধিক পরিচিত।
গ্যাব্রিয়েল মিস্ত্রেল সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন ১৯৪৫ সালে। চিলির এই কবি লাতিন আমেরিকার প্রথম নারী যিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। তার কাব্যগ্রন্থ ‘ডেস্পেয়ার’ প্রকাশিত হয় ১৯২২ সালে এবং এর মাধ্যমে পাঠকমহলে তাঁর পরিচিতি গড়ে ওঠে। পার্ল এস বাক এর জন্ম আমেরিকায়, বেড়ে ওঠা চায়নায়। ত্রিশটির ও অধিক উপন্যাসের রচয়িতা এই সাহিত্যিক নোবেল পুরস্কার লাভ করেন ১৯৩৮ সালে। তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত সাহিত্যকর্ম হলো- ‘দ্য গুড আর্থ’। সিগ্রিদ আন্ডেস মূলত বিখ্যাত মধ্যযুগের সাহিত্যের প্রতি তাঁর আগ্রহের জন্য। তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন ১৯২৮ সালে। তাঁর উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম হলো- ক্রিস্টিন লাভ্রান্ডেটার। এই ঐতিহাসিক ট্রিলজি প্রকাশিত হয় ১৯২০ সালে। এ উপন্যাসত্রয়ের মূল চরিত্র চতুর্দশ শতকের একজন নারী। গ্রাজিয়া ডেলেদ্দা প্রথম ইতালিয়ান নারী সাহিত্যিক যিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তাঁর সাহিত্যকর্মে নিজভূমি, ভালোবাসা, পরিবার এবং পাপ ছিল উপজীব্য। গ্রাজিয়ের বিখ্যাত সাহিত্যকর্ম হলো- ‘লা মাদ্রে’। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র একজন সার্দিনিয়ান মা যার সন্তান একজন সুন্দরীর বিধবার প্রেমে পড়ে। গ্রাজিয়া নোবেল পুরস্কার লাভ করেন ১৯২৬ সালে।
সাহিত্যে নোবেলজয়ী প্রথম নারী হলেন সেল্মা ল্যাজারলফ। ১৯০৯ সালে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন। সুইডিশ এই সাহিত্যিকের সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে নোবেল উচ্চকিত প্রশংসা করেছিলেন। তিনি মূলত শিশু সাহিত্যের জন্য বিখ্যাত। তাঁর বিখ্যাত সাহিত্যকর্ম হলো- ‘ দ্য ওয়ান্ডারফুল এডভেঞ্চার্স অভ নিলস’। বইটি ১৯০৬ সালে প্রকাশিত হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here