ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসে তাইওয়ানকে চীনের সাথে মিশিয়ে দেয়া নিয়ে কড়া মনোভাব দেখালো চিন। মঙ্গলবার থেকে চীনের ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশন শুরু হয়েছে। এই অধিবেশন থেকেই বাইরের দেশগুলো আন্দাজ করতে পারে, আগামী বছরে বিভিন্ন নীতি নিয়ে বেজিংয়ের অবস্থান কেমন হবে?
তাইওয়ান নিয়ে চীনের প্রধানমন্ত্রী সেখানে বলেন, ‘চীনের সাথে তাইওয়ানের মিশে যাওয়ার ব্যাপারে তারা খুবই কড়া অবস্থান নেবেন। চীনের কমিউনিস্ট পার্টি তাইওয়ান সমস্যার সমাধান করার বিষয়ে বদ্ধপরিকর।’
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনিপিংয়ের দীর্ঘমেয়াদী নীতির কেন্দ্রস্থলে আছে তাইওয়ান। চীনের সাথে যুক্ত হলে তাকে স্বশাসিত এলাকা করার চিন্তাভাবনাও আছে। কিন্তু চীনের প্রধানমন্ত্রী তাইওয়ান নিয়ে যা বলেছেন, তাতে একটা বিষয় এবার বাদ দেয়া হয়েছে। আগে প্রতিবার চীন তাইওয়ান প্রসঙ্গে শান্তিপূর্ণ সমাধানের কথা বলত। এবার বলেনি।
তাইওয়ানের খাঁড়িতে চীনের নৌ ও বিমানবাহিনীর নিয়মিত মহড়া চলছে। আর পিপলস কংগ্রেসে চীনের নেতারা তাইওয়ান নিয়ে অনেক বেশি কড়া মনোভাব দেখিয়েছেন।
জানুয়ারিতে তাইওয়ানের মানুষ ডেমোক্রেটিভ প্রগ্রেসিভ পার্টির পক্ষে ভোট দিয়েছে এবং তার প্রধান লাই চিং-তে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হবেন। এই নিয়ে পরপর তিনবার এই দল ক্ষমতায় থাকবে। তারা মনে করে তাইওয়ান সার্বভৌম, কিন্তু তারা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করতে চায় না। কারণ, চীনের কাছে সেটা হলো ‘রেড লাইন’, যা অতিক্রম করলে বড় বিপদ হতে পারে।
তাইওয়ানে নির্বাচনের আগে বেজিং বলেন, লাই হলেন ভয়ঙ্কর বিচ্ছিন্নতাবাদী। আর তাইওয়ান স্বাধীনতা ঘোষণা করলে তা যেকোনো মূল্যে মোকাবিলা করা হবে।
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী লি পিপলস কংগ্রেসে একই কথা বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, তাইওয়ানের স্বাধীনতা, বিচ্ছিন্নতাবাদ এবং বাইরের দেশের প্রভাবের প্রবল বিরোধিতা করা হবে।
লি যে রিপোর্ট দিয়েছেন, তাতে প্রতিরক্ষা বাজেট সাত দশমিক দুই শতাংশ বাড়াবার কথা আছে। ২০০৫ সালের তুলনায় প্রতিরক্ষা বাজেট দ্বিগুণেরও বেশি করলো চীন।
বড় কোনো নীতি-পরিবর্তন নেই?
তাইওয়ানের তামকাং বিশ্ববিদ্যালযের চীন বিশেষজ্ঞ চাং উ-উয়ে বলেন, ‘লি তার রিপোর্টে যে ভাষা ব্যবহার করেছেন, তাকে খুব বেশি বাড়িয়ে দেখা হচ্ছে। এখনো শান্তিপূর্ণ উপায়ে তাইওয়ান সমস্যার সমাধানই চীনের কাছে প্রাধান্য পাচ্ছে। শান্তিপূর্ণ নয় এমন পন্থা হলো তাদের কাছে শেষ বিকল্প।’
তিনি জানিয়েছেন, ‘বেজিংয়ের সরকারি মিডিয়া কখনোই জোর করে তাইয়ানের এক হয়ে যাওয়ার মতো কথা বলে না। খুব বেশি হলে তারা বলে, শান্তিপূর্ণ নয়, এমন বিকল্প যেন বাতিল না করা হয়।’
তাইওয়ানের ন্যাশনাল চেংগছি বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনের রাজনীতি বিশেষজ্ঞ ওয়াং সিন-সিয়েন বলেন, ‘তাইওয়ানের রিইউনিফিকেশনের আগে বলা হয়েছে, খাঁড়ির ওপারের সাথে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা হবে।’
তার মতে, ‘প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতিতে শান্তিপূর্ণভাবে এক হওয়াকে দু’টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘পিপলস কংগ্রেসে সরকার কাজের রিপোর্ট দেয়। সেখানে তাইওয়ান নিয়ে চীনের নীতির কোনো ভয়ঙ্কর পরিবর্তনের কথা থাকে না। আর শান্তিপূর্ণ কথাটা বাদ দেয়া নিয়ে যে হইচই হচ্ছে, তা এবারই প্রথম হলো না।’
চীনের কৌশল :
তবে ওয়াং বলেন, ‘তাইওয়ান নিয়ে বিবৃতি থেকে তাইওয়ান নিয়ে চীনের আসল নীতি খুঁজে পাওয়া যাবে না। এটা হতেই পারে, বেজিং কথা কম বলবে, কাজের ক্ষেত্রে আরো কড়া হবে।’
তার মতে, তাইওয়ান নিয়ে চীন ‘গ্রে জোন’ কৌশল নেবে।’ সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল স্ট্র্য়াটেজিক স্টাডিজের ব্যাখ্যা, গ্রে জোন অপারেশন মানে, সরাসরি যুদ্ধের থেকে কম কোনো অপারেশন। তথ্য, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাইবারের ক্ষেত্রে এই অপারেশন হতে পারে।
ওয়াং মনে করছেন, ‘চীন এখন আগে থেকে বলে কিছু করবে না। তারা কী করতে চাইছে, তা গোপন রাখাই তারা পছন্দ করছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের মতো অনেক দেশই মনে করে, তাইওয়ান স্বাধীন কোনো দেশ নয়। কিন্তু আমেরিকা আবার জোর করে তাইওয়ান দখল করে নেয়ার তীব্র বিরোধী। সেরকম পরিস্থিতি এলে আমেরিকা তাইওয়ানকে সাহায্য করার বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এক্ষেত্রে ‘গ্রে জোন’ কৌশল হতে পারে, বিশ্বের নজর এড়ানো।
ওয়াংয়ের মতে, ‘এই ধরনের অপারেশনের চ্যালেঞ্জ প্রচুর।’
সূত্র : ডয়চে ভেলে