দল পুনর্গঠনের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিএনপি। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে এই প্রক্রিয়া শুরু করল দলটি। জানা গেছে, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, কৃষক দল, মৎস্যজীবী দল, তাঁতী দলসহ সব অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন পুনর্গঠনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। এসব সংগঠনে আগামীতে কাদের নেতৃত্বে আনা যায় এবং কমিটির বর্তমান শীর্ষ নেতাদের কোথায় পদায়ন করা হবে- সেগুলো নিয়ে এখন দলের ভেতরে কাজ চলছে। এই বিষয়গুলো চূড়ান্ত হলেই পর্যায়ক্রমে প্রতিটি কমিটিই বিলুপ্ত করে নতুন নেতৃত্বে অঙ্গ সংগঠনগুলো সাজানো হবে।

বিগত আন্দোলনে রাজপথে ছাত্রদলের হতাশাজনক পারফরম্যান্সে খুবই ক্ষুব্ধ ছিলেন বিএনপির হাইকমান্ড। অথচ রাজপথের আন্দোলনে ছাত্রদলের ওপর সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল ছিল দলটি। তাই আন্দোলন শেষ হওয়ার দুই মাসের মধ্যেই ভেঙে দেয়া হলো ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি। বিদায়ী কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিবকে সভাপতি এবং সহ-সভাপতি নাসির উদ্দীন নাসিরকে সাধারণ সম্পাদক করে সরাসরি গঠন করা হয়েছে সাত সদস্যের নতুন আংশিক কমিটি।

বিএনপির সূত্র মতে, বিএনপির অঙ্গ সংগঠন পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শেষ হলে মূল দল পুনর্গঠনে হাত দেয়া হতে পারে। এ ক্ষেত্রে দলের স্থায়ী কমিটিসহ কেন্দ্রীয় কমিটির শূন্যপদগুলো পূরণ করা হবে। স্থায়ী কমিটিতে পাঁচটিসহ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির প্রায় ১৩০টি পদ এখন শূন্য। তবে অঙ্গ সংগঠন পুনর্গঠনের মধ্যেও এই প্রক্রিয়া চলতে পারে। সম্প্রতি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির দু’টি শূন্যপদ পূরণ করা হয়েছে।
সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে বিএনপি বছরের বেশি সময় ধরে রাজপথে আন্দোলন করলেও চূড়ান্ত সফলতা আসেনি। বিএনপির বর্জন ও আন্দোলনের মধ্যেই গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের মধ্য দিয়ে টানা চতুর্থ বারের মতো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের পর দলের সাংগঠনিক দুর্বলতার বিষয়টি নিয়েও অনুসন্ধানে নামে বিএনপির হাইকমান্ড।

দলটির মূল্যায়নে উঠে আসে, আন্দোলনের মাঠে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসংগঠনগুলো রাজপথে কার্যকর ও প্রত্যাশিত ভূমিকা রাখতে পারেনি। এমন মূল্যায়নের ভিত্তিতে আগামীর আন্দোলন সামনে রেখে নিষ্ক্রিয় সংগঠনগুলো পুনর্গঠনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেন হাইকমান্ড। এরই মধ্যে এ পুনর্গঠনের রূপরেখাও চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এর অংশ হিসেবে আন্দোলন-সংগ্রামে বিএনপির ভ্যানগার্ড হিসেবে পরিচিত ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে।
জানা গেছে, বিগত আন্দোলনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির পারফরম্যান্সেও অসন্তুষ্ট হাইকমান্ড। দলের দায়িত্বশীল অনেক নেতা মনে করেন, এবারের আন্দোলনে ঢাকার রাজপথে এই দু’টি সংগঠন প্রত্যাশিত পারফরম্যান্স দেখাতে পারেনি। তবে গ্রেফতার হওয়ার কারণে পুরো আন্দোলনজুড়ে মূল নেতৃত্বকে পায়নি উত্তর বিএনপি। দক্ষিণের অবস্থাও ছিল প্রায় একই।

দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান গত ১০ সেপ্টেম্বর আত্মসমর্পণ করলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠান। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন। আমান কারাগারে যাওয়ার পর বিএনপি চেয়ারপারসনের অন্যতম উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা: ফরহাদ হালিম ডোনারকে মহানগর উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করা হয়। এরপর বিএনপির আন্দোলনের মধ্যে গত ২ নভেম্বর উত্তরের সদস্যসচিব আমিনুল হককে গুলশান-২ এলাকা থেকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরপর তার বিরুদ্ধে একে একে ১২টি মামলা দায়ের করা হয়। নির্বাচনের পর গত ৯ ফেব্রুয়ারি জামিনে মুক্তি পান তিনি। মহানগরের কোনো কোনো নেতা বলেছেন, ফরহাদ হালিম ডোনার আন্দোলনের মাঠে মহানগরের নেতাদের পাননি বলে দলের হাইকমান্ডকে কিছু দিন অবহিত করেছেন। তবে অনেকে মনে করেন, মূল নেতৃত্ব বাইরে থাকলে আন্দোলনের ক্ষেত্রে এই ধরনের সমন্বয়হীনতা, অসামঞ্জস্য পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। মহানগর দক্ষিণের রাজপথে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সবচেয়ে সক্রিয় দেখা গেছে তানভীর আহমেদ রবিন ও তার বেল্টের নেতাকর্মীদের। তবে রবিনের গ্রেফতারের পর দক্ষিণ নীরব হয়ে পরে। দক্ষিণের সভাপতি আব্দুস সালাম হরতাল-অবরোধ শুরু হওয়ার পর থেকেই নিরাপদ অবস্থানে চলে যান। আত্মগোপনে থেকেই তিনি আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছেন বলে মহানগরের কোনো কোনো নেতা বলেছেন।