সূচকের অস্থিরতায় দেশের পুঁজিবাজারে গেলো সপ্তাহে বিক্রির চাপ ছিল ৪২ শতাংশ। ক্রেতার চাপ ছিল ৩১ শতাংশ। টাকায় ও শেয়ার মোট লেনদেন, শেয়ারপ্রতি আয় (পিই) বাড়লেও সূচকের পতন ঠিকই ছিল। এক হাজার ২৯১ কোটি টাকা বাজার থেকে উধাও হয়ে গেছে। সার্বিক পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা কমেছে। স্বল্পমেয়াদি লাভের জন্য বিনিয়োগকারীরা কিছু খাতকে নির্দিষ্ট করছে। তবে বিচক্ষণ বিনিয়োগকারীদের ক্রমাগত বিক্রির চাপের কারণে সূচকে অস্থিরতা কাটছে না।
পুরো সপ্তাহের লেনদেনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, সূচকগুলো নেতিবাচক প্রবণতায় ছিল। তবে আগের সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা কমেছে নেতিবাচক হার। ডিএসইতে মোট লেনদেনে টাকার পরিমাণ আগের সপ্তাহের তুলনায় ৪.১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থাৎ সারা সপ্তাহে ১০৩ কোটি ৭২ লাখ ৯৮ হাজার ১১৮টি শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ড বেচাকেনা হয়েছে তিন হাজার ৫০৮ কোটি ৩৮ লাখ ৬০ হাজার টাকায়। যেখানে আগের সপ্তাহে ১০২ কোটি ৪৯ লাখ ৬৩ হাজার ৯৩৬টি শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ড বেচাকেনা হয়েছিল মোট তিন হাজার ৩৭০ কোটি ১৪ লাখ ৭০ হাজার টাকায়। প্রতি দিনের বিক্রিতে টাকার হারও গড়ে ৪.১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আগের সপ্তাহের ৮৪২ কোটি ৫৩ লাখ ৭০ হাজার টাকার দৈনিক লেনদেনের জায়গায় গেলো সপ্তাহে হয়েছে ৮৭৭ কোটি ৯ লাখ ৬০ হাজার টাকার। সপ্তাহে মোট শেয়ার লেনদেন এক কোটি ২২ লাখেরও বেশি ছিল। শেয়ারপ্রতি আয়ও গেলো সপ্তাহে বেড়ে হয়েছে ১২.৯৮। যেটা আগের সপ্তাহে ছিল ১২.৫০।
সূচকও উল্লেখযোগ্য হারে পয়েন্ট হারিয়েছে। কিন্তু ডিএসই এসএমই সূচক ৯.৩৯ শতাংশ বেড়েছে। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গত সপ্তাহে ১৯.৪২ পয়েন্ট কমেছে। আর ডিএসই-৩- সূচক ১২.৭৮ পয়েন্ট এবং শরিয়াহ সূচক ০.৭০ পয়েন্ট কমেছে। আর তালিকাভুক্ত ৪০৯টি কোম্পানির মধ্যে লেনদেনে অংশ নিয়ে দর বৃদ্ধিতে লাভবান হয়েছে ১৩৬টি কোম্পানির শেয়ার। এটা আগের সপ্তাহের তুলনায় বেড়েছে। তবে দরপতনের শিকার ২৩২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩১টি কোম্পানির। আর ১১টি কোম্পানি গত সপ্তাহে লেনদেনে অংশ নেয়নি। বাজার মূলধন গত সপ্তাহে আরো ০.১৭ শতাংশ কমেছে। এক হাজার ২৯১ কোটি ২৬ লাখ টাকা। তবে এই হার আগের সপ্তাহের তুলনায় অনেক কম। বর্তমানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমে সাত লাখ ৬০ হাজার ৭২৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকায় নেমে এসেছে।
আর চট্টগ্রাম স্টকে পুরো সপ্তাহে দুই কোটি ৭৮ লাখ ৬৪ হাজার ৭৬০টি শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ড হাতবদল হয়েছে ৬৭ কোটি ৩৫ লাখ ৯৪ হাজার ৮২৫ টাকায়। শেয়ার বিক্রির পরিমাণ আগের সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা বাড়লেও টাকায় মোট লেনদেনও কমেছে। এখানে ভালো মৌলভিত্তিসম্পন্ন এ শ্রেণীর কোম্পানির শেয়ারের দাপট কিছুটা বেড়ে এখন ৪২.২২ শতাংশ এবং বি শ্রেণীর কিছুটা বেড়ে ৩৯.৩৬ শতাংশ হয়েছে। তবে এন শ্রেণীর নতুন শেয়ারের অংশীদারিত্ব কমে ১৬.৮৮ শতাংশ। আর জেড শ্রেণীর কোম্পানির শেয়ারের অংশীদারিত্ব ১.৫৫ শতাংশ ছিল। লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানির সংখ্যা গত সপ্তাহে কমেছে। ৩৩৭টি কোম্পানির মধ্যে ১২৬টি দরবৃদ্ধিতে ছিল। তবে দরপতনের শিকার ১৮৩টি এবং দর অপরিবর্তিত ২৮টি। এ দিকে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েল ক্যাপিট্যালের পর্যালোচনায় বলছে, প্রতিদিন গড় লেনদেন বেড়েছে ৪.১ শতাংশ। সপ্তাহজুড়ে, ১৬৭টি শেয়ারের দাম বেড়েছে এবং ১৭৩টির কমেছে। গত সপ্তাহে ১০টি খাতে ভালো অবস্থানে ছিল। যার মধ্যে পেপার, সিমেন্ট এবং ফুড শীর্ষ লাভকারী। ৮টি সেক্টর লোকসানে ছিল। যার মধ্যে আইটি, এফআই এবং বিবিধ শীর্ষ লুজার ছিল। মূল্য এবং টার্নওভার বৃদ্ধির উপর ভিত্তি করে সর্বাধিক জনপ্রিয় ছিল মুন্নু ফেব্রিক্স। বিএসইসি বাজারের তারল্যকে সমর্থন করার জন্য অব্যাহতভাবে কাজ করছে। সব বিবেচনায়, আগামী সপ্তাহে নিম্ন লেনদেন কার্যক্রমের কারণে বাজার কিছুটা মন্দা যেতে পারে।