সাকিব আল হাসান পারেননি, তবে পারলেন তামিম ইকবাল। ফরচুন বরিশালকে পাইয়ে দিলেন শিরোপার স্বাদ। সুবাদে নতুন ‘রাজা’ পেল বিপিএল। দশম আসরের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট কীর্তনখোলা পাড়ের। তিন তিনবার পা ফসকানোর পর প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতলো তারা। ফাইনালের মহাযজ্ঞে কুমিল্লাকে রুখে দিয়েছে তারা।
শুক্রবার ফাইনালের মহামঞ্চে টসে হেরে ব্যাট করতে নামে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। মিরপুরে বরিশালের বোলারের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ৬ উইকেট ১৫৪ রানেই থামে কুমিল্লার ইনিংস। জবাবে দিতে নেমে ১৯ ওভারেই জয়ের বন্দরে পৌঁছায় বরিশাল। জয় তুলে নেয় ৬ উইকেটে।
বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে লক্ষ্যটা নাগালেই পেয়েছিল বরিশাল। সহজ লক্ষ্যটা আরো সহজ হয়ে যায় উদ্বোধনী জুটিতে। মেহেদী মিরাজকে নিয়ে দলকে অর্ধেক পথ পাড়ি করে দেন তামিম ইকবাল। দু’জনের ৮ ওভারের যুগলবন্দীতে আসে ৭৬ রান। তামিমের বিদায়েই ভাঙে জুটি।
আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হতে তামিমের প্রয়োজন ছিল ১০ রান, যা অনায়াসেই আদায় করে নেন তিনি। এরপর ছুটছিলেন বেশ ভালোভাবেই। এমনকি মইন আলির শিকার হবার আগে ওই ওভারেই নেন ১৪ রান। তামিম আউট হন ২৬ বলে ৩৯ করে। ৪৯২ রান নিয়ে শেষ করেন ২০২৪ বিপিএল।
৬ রান যোগ হতেই ফেরেন আরেক ওপেনার মেহেদী মিরাজ। তিনিও মইন আলির শিকার। তার ব্যাটে আসে ২৬ বলে ২৯। এই সময় ম্যাচে ফেরার বেশ কয়েকটি সুযোগ পায় কুমিল্লা। তবে কাইল মায়ার্সকে দুই-দুইবার জীবন দিয়ে সেই সুযোগ হাতছাড়া করে তারা।
জীবন পেয়ে মায়ার্স এরপর ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেন। মুশফিকের সাথে তার ৪৩ বলে ৫৯ রানের জুটি সমীকরণ আরো সহজ করে দেয় বরিশালে। মায়ার্স আউট হন ৩০ বলে ৪৬ করে, মোস্তাফিজের বলে। একই ওভারে ফেরেন মুশফিকও। তার ব্যাটে আসে ১৮ বলে ১৩ রান। জয় থেকে বরিশাল তখন মাত্র ১১ রান দূরে, হাতে ১৮ বল আর ৬ উইকেট।
সহজ সমীকরণ পূরণে ভুল করেননি মাহমুদউল্লাহ আর ডেভিড মিলার। ১৯তম ওভারের শেষ বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে মিলার নিশ্চিত করেন দলের জয়। সেই সাথে শিরোপাও। বল সীমানা ছোঁয়ার আগেই অবশ্য দৌড়ে মাঠে চলে আসেন বরিশালের গর্বিত ক্রিকেটাররা। মাতেন উল্লাসে। মাহমুদউল্লাহ ৭ ও মিলার ৮ রানে অপরাজিত থাকেন।
এর আগে বল হাতে হাত খোলার আগেই লিটন-হৃয়দের বেঁধে ফেলে বরিশাল। মইন-চার্লরাও থিতু হতে পারেননি। যদিও জ্বলে উঠেন আন্দ্রে রাসেল, তবে তাকে উড়তে দেননি সাইফুদ্দীন।
এদিন পাওয়ার প্লেতেই নীরবতা ভর করে কুমিল্লা শিবিরে। তিন তিনটা উইকেট হারিয়ে বেশ চাপে পড়ে যায় তারা। যার শুরুটা হয় প্রথম ওভারেই সুনিল নারিনকে হারিয়ে। জীবন পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি নারিন, এক বল আগে জীবন পাওয়া ম্যাকয়েরই অসাধারণ ক্যাচ হয়ে ফেরেন ৫ রানে।
তিনে নামা তাওহীদ হৃদয়কে বেশ আত্মবিশ্বাসী লাগছিল, ব্যাটেও বল আসছিল তার। তবে দায়িত্ব নিতে পারেননি, বড় হয়নি ইনিংস। ফুলারের বল কাট করতে গিয়ে ক্যাচ দেন মাহমুদউল্লাহকে। ফেরেন ১০ বলে ১৫ করে। ৪৬২ রান নিয়ে বিপিএল শেষ হয় তার।
এক ওভার পর ফেরেন লিটন (১৬)। ফুলারের বলে যেভাবে ক্যাচ তুলে দেন তিনি, তাকে আত্মহত্যা বলাই বোধহয় ভালো হবে। জোড়া ছক্কা হাঁকিয়ে ছন্দে ফেরার আভাস দিয়েছিলেন জনসন চার্লস, তবে তারও দৌড় থামে ১৫ রানে। আর মইন আলি (৩) রান আউট হলে বিপদে পড়ে কুমিল্লা। ১১.৫ ওভারে ৭৯ রানে ৫ উইকেট হারায় তারা।
বিপর্যয় সামলে দলকে তিন অংকের ঘরে পৌঁছান জাকের আলি ও মাহিদুল অঙ্কন। মাহিদুল ৩৫ বলে ৩৮ করে ফেরেন সাইফুদ্দীনের শিকার হয়ে। এরপরেই মাঠে আসেন আন্দ্রে রাসেল। ১৯তম ওভারে ম্যাকয়কে তিন ছক্কা হাঁকান তিনি। সুবাদে দেড় শ’ স্পর্শ করে কুমিল্লা।
শেষ ওভারে রাসেলকে ঠাণ্ডা মাথায় নিয়ন্ত্রণ করেন সাইফুদ্দীন। একটা নো বল আর তিনটে ওয়াইড দিলেও কোনো বাউন্ডারি হাঁকাতে দেনন। ফলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছায়নি কুমিল্লা। রাসেল ১৪ বলে ২৭* ও জাকের আলি ২৪ বলে অপরাজিত থাকেন ১২ রানে।