বিশ্বকাপে পাঁচ ম্যাচের বেশি খেলতে পারব না, এমন কথা কখনো কাউকে বলিনি…।

বুধবার বাংলাদেশ দল বিশ্বকাপে অংশ নিতে ভারতের আসাম রাজ্যের গুয়াহাটিতে রওয়ানা হওয়ার পর ১২ মিনিট ১০ সেকেন্ডের এক ভিডিও বার্তায় তামিম ইকবাল উপরের কথা বলেন। তিনি যোগ করেন, ‘কেউ কেউ বলছে, আমি নাকি বলেছি পাঁচ ম্যাচের বেশি খেলব না। এটা মিথ্যা। আমি কখনো কোথাও বলিনি যে, পাঁচ ম্যাচের বেশি খেলব না।’ আগেরদিন অনেক নাটকের পর ইনজুরি ইস্যুতে তামিমকে বাদ দিয়ে ১৫ সদস্যের বাংলাদেশ দল বিসিবি ঘোষণা করে বিশ্বকাপের জন্য। তামিম বলেন, ‘আমাকে মিডলঅর্ডারে ব্যাট করতে বলেছিল। ১৭ বছর ধরে ওপেন করছি, তাই মেনে নিতে পারিনি।’ এই বাঁ-হাতি অভিজ্ঞ ওপেনার অভিযোগ করেন, ফিজিও রিপোর্টে তার বিশ্বকাপে খেলতে কোনো বাধা ছিল না। এদিকে বিশ্বকাপ দল থেকে তামিমের বাদ পড়া মেনে নিতে পারছেন না তার ভক্তরা। তামিমকে বিশ্বকাপ দলে অন্তর্ভুক্ত করতে ও জাতীয় দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব থেকে চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে অব্যাহতি দিতে বুধবার বিসিবিকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট সাপোর্টার্স গ্র“পের পক্ষে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী আল মামুন রাসেল।

ভিডিও বার্তায় নিজের পঞ্চম বিশ্বকাপ মিস করা তামিম অনেকটা অভিযোগের সুরে বলেন যে, তিনি যাতে বিশ্বকাপে খেলতে না পারেন সেজন্য তাকে শর্ত দেওয়া হয়, যার কোনো প্রয়োজন ছিল না। এ প্রসঙ্গে তিনি বিশদ ব্যাখা দেন, ‘বোর্ডের উচ্চ পর্যায়ের একজন আমাকে ফোন করে বলেন, তুমি বিশ্বকাপে খেলতে যাবা; কিন্তু তোমাকে তো ম্যানেজ করে খেলতে হবে। একটা কাজ করো, তুমি প্রথম ম্যাচ খেলো না।’ তামিম ওই কর্মকর্তাকে শুধরে দেন যে, এখনো ১২/১৩ দিন হাতে সময় আছে। এই সময়ের মধ্যে ভালো অবস্থায় তিনি পৌঁছেও তো যেতে পারেন। তাহলে খেলবেন না কেন? প্রত্যুত্তরে বিসিবির ওই উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তি বলেন, ‘ঠিক আছে, তুমি যদি খেলো, তাহলে আমরা পরিকল্পনা করছি, তুমি নিচের দিকে খেলবা।’

১৭ বছর ধরে বাংলাদেশের হয়ে ইনিংস উদ্বোধন করে আসছেন তামিম। স্বাভাবিকভাবেই তার পক্ষে অবাস্তব উপদেশ মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। যুক্তিসংগত কারণেই তিনি তা মেনে নিতে পারেননি। ‘আমার আসলে তিন কিংবা চারে ব্যাটিং করার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। স্বাভাবিকভাবে কথাটা আমি ভালোভাবে নিইনি। আমি উত্তেজিত হয়ে গিয়েছিলাম। কারণ, বিষয়টি আমার পছন্দ হয়নি,’ বলেছেন অবজ্ঞার শিকার হওয়া তামিম। তার সংযোজন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে আমাকে জোর করে বাধা দেওয়া হচ্ছে এবং তা ইচ্ছা করে। তখন বললাম, যদি আপনাদের এমন চিন্তাধারা থাকে, তাহলে আমাকে পাঠায়েন না। আমি এই নোংরামির মধ্যে থাকতে চাই না।’

এর আগে ভিডিও বার্তার শুরুতে তামিম বলেন, ‘আমার গলায় ইনফেকশন হয়েছে, তাই স্পষ্ট করে বলতে পারছি না। স্ট্যাটাস দেখেই বুঝতে পেরেছেন, এই কয়েকদিনে যা যা লেখা হয়েছে আর আসলে যা ঘটেছে তা একদমই আলাদা। যা ঘটেছে, পুরো জিনিসটাই ধাপে ধাপে জানাই। কারণ আমার যারা ভক্ত এবং যারা ক্রিকেটভক্ত তাদের জানা উচিত।’ তিনি যোগ করেন, ‘সবাই জানেন, আমার অবসরে যাওয়ার কারণ ছিল। প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে ফিরে আসি। এরপর দুই মাস আমি প্রচুর পরিমাণে কষ্ট করেছি নিজেকে ফিট করে তোলার জন্য। যারা এই প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত ছিলেন, ফিজিও থেকে শুরু করে সবাই একমত হবেন, এমন কোনো সেশন নেই যেটা তারা চেয়েছেন; কিন্তু আমি করিনি।’

তামিম বলেন, ‘খেলা শুরু হওয়ার সময় যখন চলে এলো, আমি মানসিকভাবে ভালো ছিলাম না। নিজের জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করলে বুঝতে পারবেন, এটা সহজ না। প্রথম ম্যাচে ৩০-৩৫ ওভার ফিল্ডিং করলাম, ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাইনি যদিও। পরের ম্যাচে ব্যাটিংয়ের সুযোগ এলো। আমার জন্য যেটা সম্ভাব্য সেরা আউটকাম দরকার ছিল; কিন্তু আমরা ম্যাচ হেরে যাই। ওই সময় আমার দরকার ছিল রান করা, ব্যাটিংটা কেমন হচ্ছে ফিল করা। যেভাবে ব্যাটিং করেছি তাতে খুশি ছিলাম। আমি মাত্র ৪৪ রান করেছি, তবে আÍবিশ্বাসী ছিলাম বড় কিছুর জন্য। সেটি হয়নি দুর্ভাগ্যজনকভাবে। সেই ম্যাচের পর আমি মানসিক দিক দিয়ে খুশি ছিলাম। যা শেষ ৪-৫ মাস হয়েছে, সেগুলো মাথায় অতটা ছিল না। আবার বিশ্বকাপ খেলতে মুখিয়ে ছিলাম।’ তিনি যোগ করেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই এতদিন পর যখন ক্রিকেট খেলব, চোট থেকে সেরে উঠব, ব্যথা-অস্বস্তি থাকবেই। প্রথম ম্যাচের পরও ব্যথা অনুভব করেছি। যখন খেলা শেষ হলো, আমার অবস্থান ফিজিওকে বললাম যে আমি কেমন বোধ করছি। ঠিক ওই মুহূর্তে তিন নির্বাচক ড্রেসিংরুমে আসেন। একটা জিনিস পরিষ্কার করতে চাই, আমি কোনো সময়, কোনো মুহূর্তে কাউকে বলিনি যে, পাঁচটা ম্যাচের বেশি খেলতে পারব না।

যে কোনো সুস্থ মানুষের সঙ্গেও এমন হতে পারে, দুটি ম্যাচ খেলার পর ইনজুরি হলো, এরপর দেশে পাঠিয়ে দিলেন। বদলি নিতে পারেন। এ কারণে আমি এ জিনিসটা পরিষ্কার করি। বলার পর যখন হোটেলে যাই, আমাকে আশ্বস্ত করে ফিজিওর রিপোর্ট।

কোনো জায়গায় বলা হয়নি পাঁচ ম্যাচ-দুই ম্যাচ, ইনজুরি, খেলতে পারব না। হ্যাঁ, আমার ব্যথা ছিল, এটা অস্বীকার করছি না। তারপর যেটা ঘটেছে, মিডিয়াতে যেটা আসছে ইনজুরি, পাঁচ ম্যাচ…মনে হয় না বিশ্বকাপে না যাওয়ার পেছনে এটার বড় অবদান ছিল।

তামিম তার বক্তব্য শেষ করেন এভাবে, এটাই যা আসলে ঘটেছিল। এরচেয়ে বেশি কিছু আমার বলার নেই। আমি নিজের থেকে যতটুকু ফিল করেছি, যেটা ঘটেছে সেটা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করলাম।

তবে শুভকামনা জানাব, যে ১৫ জন বিশ্বকাপে গেছে, তারা যতটুকু সম্ভব বাংলাদেশের জন্য সাফল্য নিয়ে আসবে। আরও অনেক কিছুই ঘটেছে এটা আপনারা দেখেছেন আমি নিশ্চিত। একটা কাহিনি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হতে পারে, দুটো কাহিনি ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। কিন্তু একজনের সঙ্গে তিন-চার মাসে যদি সাত-আটটা কাহিনি হয় তাহলে সেটা ইচ্ছাকৃত হয়। আমাকে সবাই মনে রেখেন। ভুলে যেয়েন না।