নিয়মরক্ষার ম্যাচ বলেই কী বৃষ্টি নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে বিরতি নিল! কলম্বোর প্রেমাদাসায় এশিয়া কাপ ফাইনালের আগে শুক্রবার সুপার ফোরের শেষ ম্যাচ রইল বৃষ্টিবিহীন। ব্যাটে-বলে সাকিব, তানজিমরা উজ্জীবিত নৈপুণ্যে নিউজিল্যান্ড সিরিজের জন্য আত্মবিশ্বাসের জ্বালানি ভরে নিলেন। ৫৯ রানে চার উইকেট হারানো বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান (৮০) ও তাওহিদ হৃদয়ের (৫৪) ফিফটির বদৌলতে ২৬৫ রানের লড়াকু পুঁজি সংগ্রহ করে। এরপর শুবমান গিলের সেঞ্চুরির বাধা টপকে বাংলাদেশ এক বল বাকি থাকতেই ছয় রানে হারিয়েছে ভারতকে। শেষ ওভারে তানজিম হাসান সাকিবের দুরন্ত বোলিং ২০১২ সালের পর এশিয়া কাপে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশকে প্রথম জয় এনে দিল।
ম্যাচ শেষে প্রেমাদাসায় বেজে ওঠে ‘বাংলাদেশ… বাংলাদেশ’ গান। মোহাম্মদ শামির রানআউটের মধ্য দিয়ে ২৫৯ রানে থেমে যাওয়া ভারতের প্রায় অর্ধেক রান একাই করেছেন শুবমান গিল। ১১৭ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করা গিল ১২১ রান করেন ১৩৩ বলে। টুর্নামেন্টের শততম ছয় মেরে পরের বলেই হৃদয়ের ক্যাচে পরিণত হন তিনি মেহেদী হাসানের বলে। ৩২ ম্যাচে এটি গিলের পঞ্চম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। অক্ষর প্যাটেল ৩৪ বলে ৪২ রানের ইনিংস খেলে ডেথ ওভারের রাজা মোস্তাফিজুর রহমানের শিকারে পরিণত হন। আট ওভারে ৫০ রানে তিন উইকেট নেওয়া বাঁ-হাতি মোস্তাফিজ এ নিয়ে তিনবার আউট করলেন রবীন্দ্র জাদেজাকে। ২৬ বল ও নয় রানের ব্যবধানে মোস্তাফিজের এই কীর্তি। নিজের ডেব্যু ম্যাচে তানজিম হাসান সাকিব নেন দুটি উইকেট।
বাংলাদেশ এবার দেশে ফিরে হোম সিরিজের জন্য প্রস্তুতি নেবে। আর ভারত আগামীকাল রোববার এশিয়া কাপের ফাইনালে মুখোমুখি হবে শ্রীলংকার।
টানা দুই হারে এশিয়া কাপের সুপার ফোর থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর নিয়ম রক্ষার শেষ ম্যাচে জ্বলে উঠল নির্ভার বাংলাদেশ। ইবাদত হোসেনের ইনজুরির কারণে এশিয়া কাপের দলে জায়গা পেয়েছেন তানজিম। প্রথম চার ম্যাচে ড্রেসিংরুমে বসেই কাটাতে হয়েছে তাকে। সব হারানোর পর শেষ ম্যাচে একাদশে সুযোগ মিলেছে তার। দারুণ পারফরম্যান্সে সেই সুযোগ কাজেও লাগিয়েছেন। ব্যাট হাতে ১৪* রানের পর প্রথম ওভারেই পেয়েছেন রোহিত শর্মার উইকেট। এরপর ফেরান অনূর্ধ্ব-১৯ দল থেকেই লড়াই হওয়া তিলক ভর্মাকে। তারও কাল অভিষেক হয়।
২০২০ যুব বিশ্বকাপের ফাইনালেও তিলককে আউট করেছিলেন তানজিম। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম স্পেলেই টানা ছয় ওভার বোলিং করে মাত্র ১৫ রান দিয়ে এক মেডেনে নেন দুই উইকেট। শেষ ওভারে দারুণ বৈচিত্র্যে ম্যাচ জিতিয়ে ফেরেন তানজিমই। এছাড়া মেহেদী হাসান দুটি এবং একটি করে উইকেট নেন সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজ।
এরআগে টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় ভারত। চার উইকেটে ৫৯ রান থেকে ছয় উইকেটে ১৬১। বাংলাদেশের ইনিংস তখন ধূসর দেখাচ্ছিল। কে ভেবেছিল, সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে স্কোর বোর্ডে জমা হবে ২৬৫। অথচ হয়েছে ঠিক তাই। সেটা সম্ভব হয়েছে দুজনের জন্য। অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের ৮০ এবং তাওহিদ হৃদয়ের ৫৪ মূর্ছে যাওয়া ইনিংসকে সঞ্চিত করেছে দারুণভাবে। নাসুম আহমেদের নামোল্লেখ করাটাও বাঞ্ছনীয়। আটে নেমে নাসুম ৪৫ বলে ৪৪ রানের দুর্দমনীয় ইনিংস খেলেন। নয় ও দশে যথাক্রমে মেহেদী হাসান (২৩ বলে ২৯*) এবং তানজিম হাসান সাকিবও (আট বলে ২৯*) যথেষ্ট অবদান রেখেছেন ইনিংস স্ফীত করতে।
সাকিব (৮৫ বলে ৮০) ও হৃদয়ের (৮১ বলে ৫৪) ফিফটির সঙ্গে লোয়ার অর্ডারের দৃঢ়তায় বাংলাদেশ নিয়মরক্ষার ম্যাচে লড়াকু পুঁজি পেয়ে যায়। ইনিংসের শুরুতে অবশ্য চিত্র ছিল ভিন্ন। দুর্বল শট নির্বাচনে ২৮ রানে তিন উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এর মধ্যে লিটন দাস কোনো রান না করেই ফেরেন। এনামুল হক উইকেটে স্থায়ী হন মাত্র ১১ বল। ১৪ ওভারে বাংলাদেশ ৫৯ রানে হারায় চার উইকেট। এরপর অধিনায়কের সঙ্গে ১০১ রানের জুটি গড়ে ইনিংস মেরামতের কাজ বেশ ভালোভাবেই করেন হৃদয়। ২৮ রানে ‘জীবন’ পাওয়া সাকিব নিজের ৫৫তম ওয়ানডে ফিফটি তুলে অবতীর্ণ হন ত্রাতার ভূমিকায়। পরে হৃদয় পূর্ণ করেন নিজের পঞ্চম ওডিআই হাফ সেঞ্চুরি।
ইনিংসের লেজে মেহেদী হাসান (২৩ বলে ২৯*) ও তানজিম হাসান সাকিবের (আট বলে ১৪*) অকুতোভয় ব্যাটিং যথেষ্ট আশা জাগানিয়া। শেষ ১২ ওভারে ৯৩ রান বাংলাদেশের লোয়ার অর্ডারের ব্যাটিং সামর্থ্যরে প্রমাণ।
শামীম হোসেনকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে ভারতীয় অলরাউন্ডার রবীন্দ্র জাদেজা ওডিআইতে ২০০তম উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন। আরও একবার শামীমের ব্যর্থতা নতুন করে প্রশ্ন তৈরি করেছে। মূল খেলোয়াড়দের ইনজুরির কারণে যারা সুযোগ পেয়েছেন তারা ব্যর্থ। শার্দুল ঠাকুর (৩/৬৫) ও মোহাম্মদ শামি (২/৩২) পাঁচ উইকেট নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেন।