চট্টগ্রামে ভারি বৃষ্টিতে নগরীর নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। মূল সড়কের পাশাপাশি অলিগলিতেও জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। কোথাও হাঁটুপানি, আবার কোথাও কোমরপানি। এতে মানুষজনকে চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয়। জলাবদ্ধতার কারণে নগরী ও জেলার ২৯টি কেন্দ্রে ১ ঘণ্টা দেরিতে পরীক্ষা শুরু হয়। টানা বৃষ্টিতে রোববার সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার ষোলোশহরে পাহাড় ধসে বাবা-মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ রঙ্গিপাড়ায় নালায় পড়ে ইয়াছিন আরাফাত নামের দেড় বছরের এক শিশু নিখোঁজ হয়েছে।

জানা গেছে, তিন সপ্তাহের ব্যবধানে শনিবার রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে নগরীর চান্দগাঁও, চকবাজার, বহদ্দারহাট, বাদুরতলা, শুলকবহর, মুরাদপুর, ফুলতলা, বাড়ইপাড়া, তিনপোলের মাথা, কার্পাসগোলা, হালিশহর, সিডিএ আবাসিক এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার সড়ক ও অলিগলির কোথাও কোথাও হাঁটু থেকে কোমরপানিতে তলিয়ে গেছে। হাটহাজারী সড়কে পানি উঠে যাওয়ায় রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির সঙ্গে চট্টগ্রামের যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয়। এছাড়া নন্দীর হাট, ইসলামীয়া হাটসহ কয়েকটি এলাকার সড়কে পানি উঠে।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ সুমন সাহা বলেন, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় চট্টগ্রামসহ আশপাশের এলাকায় বৃষ্টি হচ্ছে। আগামী আরও দু-তিন দিন মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। এ সময়ের মধ্যে পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, রোববার বেলা ৩টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ২১৭ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

বান্দরবানে ভাসমান দুই লাশ উদ্ধার : বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, বান্দরবানে ভেসে আসা দুটি লাশ পুলিশ উদ্ধার করেছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশগুলো মর্গে পাঠানো হয়েছে। লামা উপজেলার রাজবাড়ী এলাকায় মাতামুহুরি নদীতে ভেসে আসে এক ব্যক্তির লাশ। অপরদিকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নে নতুনপাড়া এলাকায় পাহাড়ি ঝিরি থেকে ভাসমান লাশ উদ্ধার করা হয়। পাহাড়ি ঢলে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার নিচু এলাকা তলিয়ে গেছে। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

খাগড়াছড়িতে পাহাড় ধসে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন : খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, ভারি বর্ষণের কারণে পাহাড় ধসে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। শনিবার রাতে খাগড়াছড়ির মহালছড়ি-সিন্দুকছড়ি সড়কে পাহাড় ধসে যানবাহন চলাচল কয়েক ঘণ্টা বন্ধ হয়ে যায়।

গুইমারা উপজেলার সিন্দুকছড়ি ইউনিয়নের পুরাতন সেনা ক্যাম্প এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সকাল ৯টার পর মাটি সরিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেন। সন্ধ্যার দিকে সড়ক যোগাযোগ পুনরায় পুরোপুরি চালু হয়েছে। অতি বৃষ্টিতে খাগড়াছড়ি পৌর শহরের শালবন, কলাবাগান, সবুজবাগ এলাকায় পাহাড় ধসের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

পাহাড় ধসের শঙ্কাতেও ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন স্থানীয়রা। পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রেজাউল করিম জানান, শালবন এলাকায় ১০০ পরিবার ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে। এরমধ্যে ৩০ পরিবার অতি ঝুঁকিতে রয়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে আরও ধসের শঙ্কা রয়েছে।

কাপ্তাইয়ের পানিতে প্রতিবন্ধী শিশুর মৃত্যু : রাঙামাটি প্রতিনিধি জানান, কাপ্তাই উপজেলায় পানির স্রোতে ভেসে প্রতিবন্ধী শিশু মো. জিহাদের (১০) মৃত্যু হয়েছে। রোববার দুপুরে উপজেলার ১নং চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের চুনারভাটি মসজিদসংলগ্ন কাটাপাহাড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী জিহাদ ওই এলাকার মাহবুব আলম মাসুদের ছেলে।

চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আক্তার হোসেন মিলন বলেন, মায়ের সঙ্গে শিশু জিহাদ পাহাড়ি ছড়ার পাশে যায়। খেলতে খেলতে হঠাৎ ছড়ার পানিতে পড়ে সে ভেসে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর ঘটনাস্থলের আধা কিলোমিটার দূরে ছড়ার পানিতে তার লাশ পাওয়া যায়।

পেকুয়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি : পেকুয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি জানান, একদিনের প্রবল বৃষ্টিপাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। এতে সদর ইউনিয়ন আবারও পানিতে ডুবে গেছে। রোববার দুপুরে সদর ইউনিয়নের পূর্ব মেহের নামায় রাবার ড্যামের পূর্ব পাশের বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। এলাকাবাসী জানান, পেকুয়া সদর ইউনিয়ন, শিলখালী ও টৈটং ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আমনের বীজতলা তলিয়ে গেছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে বন্যা দেখা দিতে পারে।

নালায় পড়ে শিশু নিখোঁজ : চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ রঙ্গিপাড়ায় নালায় পড়ে ইয়াছিন আরাফাত নামের দেড় বছরের এক শিশু নিখোঁজ হয়েছে। রোববার বিকালে দুর্ঘটনাটি ঘটে। শিশুটি ওই এলাকার সাদ্দাম হোসেনের ছেলে বলে জানা গেছে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। স্থানীয়রাও যোগ দেয় উদ্ধারকাজে। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত শিশুটিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

ফায়ার সার্ভিসের আগ্রাবাদ স্টেশন অফিসার সফিকুল ইসলাম  জানান, শিশুটিকে উদ্ধারের চেষ্টা করছেন। তবে কীভাবে শিশুটি নালায় পড়েছে, এ বিষয়ে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে বিস্তারিত কিছু বলতে পারেননি।

স্থানীয়রা জানান, শিশুটি নালার পাশে প্রায়ই খেলাধুলা করত। এদিন বিকালেও সে নালার পাশে ছিল। একপর্যায়ে পড়ে যায়। নালাটিতে স্রোত থাকলেও বিভিন্ন স্থানে ময়লা-আবর্জনা জমে আছে।

চট্টগ্রামে শনি ও রোববার দফায় দফায় ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। বিকাল ৩টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ২১৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আমাবাগান আবহাওয়া অফিস। ভারী বর্ষণে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। রাস্তার পাশের খাল ও নালা উপচে পানি প্রবেশ করে লোকালয়ে। বিকাল থেকে পানি নামতে শুরু করলেও বিভিন্ন খাল ও নালা ছিল পানিতে পূর্ণ।