প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে আগামী সাধারণ নির্বাচনে তার দলের নির্বাচনি প্রতীক নৌকায় ভোট চেয়েছেন। তিনি বলেন, দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে নৌকায় ভোট চাওয়ার পাশাপাশি আমরা আপনাদের সবার সহযোগিতা চাই। দেশকে লুটেরাদের হাতে ছেড়ে দেবেন না, অন্যথায় দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে এবং নিশ্চিত করুন যে, দেশের উন্নয়নের যাত্রা কোনো বাধাবিপত্তি ছাড়াই যেন অব্যাহত থাকে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা জনগণের কল্যাণের জন্য রাজনীতি করছি, তাদের দুঃসময়ে পাশে থাকি এবং তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করছি। উলটো বিএনপি-জামায়াত জোট মানুষকে পুড়িয়ে মারার রাজনীতি করছে, টাকা কামাচ্ছে। দুর্নীতি, আগ্নেয়াস্ত্র চোরাচালান, অর্থ পাচার, লুটপাট ও সারা দেশে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। তিনি বলেন, সরকার ইতোমধ্যে কিছু টাকা ফেরত এনেছে যা খালেদা জিয়ার দুই ছেলে চুরি করে বিদেশে পাচার করেছিল এবং অবশিষ্ট টাকাও জব্দ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি জানেন না কোথা থেকে তারা অর্থ পাচ্ছে যা ব্যবহার করে আবার পুলিশের গাড়ি ও যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়ে তারা ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করেছে। শেখ হাসিনা বলেন, এবার বাড়াবাড়ি করলে দেশের মানুষ তাদের রেহাই দেবে না। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত চক্র ২০১৩-২০১৫ সাল পর্যন্ত অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়ে ৫০০ জনকে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছিল। কিন্তু জনগণের প্রতিবাদের মুখে তারা অগ্নিসন্ত্রাস বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতিমের টাকা আত্মসাতের কারণে খালেদা জিয়াকে সাজা দেওয়া হয়েছে, তার ছেলে তারেক রহমান ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা এবং দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত এবং তারেকের স্ত্রী দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। তিনি বলেন, দণ্ডপ্রাপ্তরা বিএনপির শীর্ষ নেতা এবং তাদের সামনে রেখে রাজনীতি করছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, জনগণ তাদের ভোট দেবে না। জনগণ বিএনপিকে ক্ষমতায় আসার জন্য ভোট দেবে না। জনগণ অগ্নিসন্ত্রাসীদের আর ক্ষমতায় আনবে না।

প্রধানমন্ত্রী জাল সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরির জন্য বিদেশে না যাওয়ার অনুরোধের পাশাপাশি ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠানোর জন্য প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানান। সরকারপ্রধান বলেন, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে কোনো গ্যারান্টি ছাড়াই ঋণ নিয়ে দেশে ফিরে প্রবাসীরা বাংলাদেশে ব্যবসা করতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, এই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে চাকরির জন্য বিদেশেও যেতে পারেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকা শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. লুৎফর রহমান রূপকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আউয়াল তানসেন।

বাংলাদেশ আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করতে চায় : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সঙ্গে আফ্রিকার দেশগুলোর দ্বিপাক্ষিক ও বাণিজ্য সম্পর্ক আরও জোরদারের অগ্রাধিকারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। ১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে আফ্রিকার তিনটিসহ চারটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা পারস্পরিক সুবিধার জন্য আফ্রিকান দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করতে চাই। শেখ হাসিনা পারস্পরিক সুবিধার জন্য দেশগুলোর কাছে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগেরও আহ্বান জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন হোটেল রেডিশন ব্লু স্যান্ডটনে তার কক্ষে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান। ব্রিফিংকালে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। এদিন স্যান্ডটন কনভেনশন সেন্টারে শেখ হাসিনা ও ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দ্যা সিলভা, মোজাম্বিকের প্রেসিডেন্ট ফিলিপে জ্যাকিন্টো নিউসি, তানজানিয়ার প্রেসিডেন্ট ড. সায়মা সুল্লুহু ও ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

একই স্থানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট দিলমা ভানা রুসেফের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মোমেন বলেন, বৈঠকে পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্বে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে সুবিধাজনক সময়ে ব্রাজিল সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এছাড়া শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পর ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ৩০ বছর আগে বাংলাদেশের যশোরে এসেছিলেন উল্লেখ করে বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নয়ন ব্যক্তিগতভাবে দেখতে আবারও এই দেশ সফরের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। মোজাম্বিকের প্রেসিডেন্ট ফিলিপে জ্যাকিন্টো নিউসির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের সময় প্রধানমন্ত্রী মোজাম্বিকের কাছ থেকে বিশেষ করে ফার্মাসিউটিক্যালে আরও বড় পরিসরে বিনিয়োগ চেয়েছেন।

নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট দিলমা ভানা রুসেফ বাংলাদেশকে বিশেষ করে নারীর ক্ষমতায়নসংক্রান্ত প্রকল্পে সহায়তা প্রদানের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে বলেছেন, ব্যাংকটি ইতোমধ্যে বাংলাদেশে দুটি উন্নয়ন প্রকল্পে ৭০ কোটি মার্কিন ডলার বরাদ্দ করেছে।

দক্ষিণ আফ্রিকায় চার দিনের সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী আজ জোহানেসবার্গ ত্যাগ করবেন এবং আগামীকাল সকালে ঢাকায় পৌঁছবেন বলে আশা করা হচ্ছে।