জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন অধিদপ্তরের ওয়েবাইট থেকে দেশের প্রায় ৫ কোটি নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের ঘটনা নিয়ে দেশব্যাপী তোলপাড় চলছে। ওই ঘটনার ভয়াবহতায় সবাই উদ্বিগ্ন। নড়েচড়ে বসেছে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোও। তাদের ওয়েবসাইটে সংরক্ষিত তথ্যে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে তৎপর হয়ে উঠেছে।

সূত্র জানায়, সোমবার সচিবালয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে বিষয়টি নিয়ে জরুরি সভাও হয়েছে। সভায় স্ব স্ব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ক্ষেত্রে আইটি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

সবচেয়ে বেশি তথ্য সংরক্ষিত আছে এমন মন্ত্রণালয়গুলো যদিও বলছে, তাদের ওয়েবসাইট সুরক্ষিত ও নিরাপদ আছে। তাদের ওয়েবসাইট নিয়ে তেমন কোনো সমস্যা দেখছেন না। কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠান জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন অধিদপ্তর থেকে নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হওয়ায় দুশ্চিন্তায় আছেন সবাই। ভূমি মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওয়বসাইটে প্রশাসনসহ সারা দেশের সবচেয়ে বেশি তথ্য সংরক্ষিত থাকে।

জানতে চাইলে ভূমি মন্ত্রণালয়ের আইসিটি সেলের যুগ্মসচিব ড. জাহিদ হোসেন পনির যুগান্তরকে বলেন, আমরা নাগরিকদের সেবা পাওয়ার অধিকার নিয়ে কাজ করি। আমাদের কাজ সেবা দেওয়া। ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে জমির নামজারি, ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ, ডিজিটাল মৌজাম্যাপ ও খতিয়ান সরবরাহসহ বিভিন্ন সেবা দিয়ে থাকি। তবে এখন পর্যন্ত আমাদের ওয়েবসাইট সুরক্ষিত আছে। ওয়েবসাইট নিয়ে কোনো ধরনের সমস্যা আপাতত দেখছি না। তিনি আরও বলেন, অনেকেই না জেনে, না বুঝে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের তথ্য ফাঁসের ভিত্তিহীন খবর প্রকাশ করছে।

সোমবার তথ্য ফাঁসের ঘটনায় পর্যালোচনায় বৈঠক করে ভূমি মন্ত্রণালয়ের আইসিটি সেল। তারা ওয়েবসাইটের সর্বশেষ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন। বৈঠকে একাধিক আইটি বিশেষজ্ঞ উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট মো. হাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের ওয়েবসাইট অনেক ছোট। সামান্য কিছু তথ্য এখানে সংরক্ষিত। আমাদের ওয়েবসাইটের পরিপূর্ণ নিরাপত্তা এখনো বজায় আছে। তবে আগামীকাল কেমন হবে এটা বলা যাবে না। এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের থ্রেড (ঝুঁকি) দেখছি না। ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা রক্ষায় নতুন করে কোনো নির্দেশনা পেয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে হাফিজুর রহমান বলেন, আমার হাতে আসেনি। তিনি বলেন, জনপ্রশাসনের ওয়েবসাইটে কর্মকর্তাদের সার্ভিস সংক্রান্ত কিছু তথ্য থাকে। এখানে সাধারণত হানা দেওয়ার কথা নয়।

সমাজকল্যাণ সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম যুগান্তরকে বলেন, আমাদের মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট সুরক্ষিত আছে। এখন পর্যন্ত তথ্য ফাঁসের কোনো খবর পাইনি। আমরা ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা রক্ষায় তৎপর ছিলাম, এখনো আছি। সুতরাং সমাজক্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে তথ্য ফাঁসের কোনো সুযোগ নেই। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন কোনো দিকনির্দেশনা দিয়েছেন কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব জানান, নতুন করে কোনো নির্দেশনার প্রয়োজন হবে না। আগে থেকেই তৎপর থাকতে বলা হয়েছে এবং আছে। উল্লেখ্য, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকার দেশে লাখ লাখ মানুষকে বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা এবং প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা উপবৃত্তি সহায়তা অর্থ প্রদান করা হয়।

তবে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিব জানান, সরকারি প্রতিষ্ঠানের সাইটগুলো সব সময় হ্যাকারদের টার্গেটে থাকে। সরকারি সাইটগুলো নিয়মিত পরিচর্যায়ও থাকে না। সিকিউরিটি আপডেট করার যে প্রক্রিয়া তা হয়তো ঠিকঠাক নেই। সেজন্য সরকারি সাইটগুলো অনেক বেশি ঝুঁকিতে থাকে। সরকারি প্রতিষ্ঠানকে ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে জানান তিনি। বলেন, সরকারি-বেসরকারি, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্টের সময় কোনো প্রফেশনাল সাইবার সিকিউরিটি প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় এর অ্যাসেসমেন্ট করা উচিত।