প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি-জামায়াতের উদ্দেশে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, আন্দোলন করেন, মিছিল-মিটিং করেন কোনো আপত্তি নেই। তবে আন্দোলনের নামে অতীতের মতো অগ্নিসন্ত্রাস, আবার মানুষ পুড়িয়ে মারতে চাইলে, বোমা মারার বা গ্রেনেড মারার চেষ্টা হলে, একজন মানুষের ওপর আক্রমণ হলে একটাকেও ছাড়ব না।
তিনি বলেন, আমাদের ওপর হামলা হয়েছে সহ্য করেছি, তবে মানুষের ওপর হামলা হলে সহ্য করব না। আমরা সহ্য করছি, তবে এটাকে অনেকে দুর্বলতা মনে করছে। এটা আমাদের দুর্বলতা না। বাংলাদেশের জনগণ আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছে, আমাদের সঙ্গে আছে। খুনিদের সঙ্গে নেই। এবার মানুষের গায়ে হাত দেওয়ার চেষ্টা করলে কাউকেই ছাড়ব না। আর বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র আছে। নির্বাচন কমিশন আছে।
তাই আগামী নির্বাচনে যাদের ইচ্ছা নির্বাচন করবে। আর নির্বাচন করার মতো শক্তি যদি কারও না থাকে, তারা হয়তো নির্বাচন করবে না। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচন করবে, তারা ভোট দেবে। শনিবার বিকেলে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের ৬ষ্ঠ জাতীয় ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ওদের (বিএনপি) কি অধিকার আছে এই দেশের মানুষের কাছে দাঁড়ানোর? ভোট চাওয়ার বা রাজনীতি করার? তারপরও আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। তারা শাস্তি পেয়েছে। এতিমের টাকা আত্মসাত করায় খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত। অর্থপাচারকারী, অস্ত্র চোরাকারবারি, গ্রেনেড হামলার আসামি হিসেবে তারেক রহমান সাজাপ্রাপ্ত। তাদের নেতারা হচ্ছে সাজাপ্রাপ্ত আসামি, এটা প্রমাণিত। এরা দেশের মানুষের কল্যাণে কী কাজ করবে?
বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে অর্থপাচারকারী, অস্ত্রপাচারকারী ও হত্যাকারী উল্লেখ করে তাদের সঙ্গে সংলাপে বসার আহ্বানেরও কঠোর সমালোচনা করেন। মানবাধিকারের কথা বলে হত্যাকারীদের সঙ্গে সংলাপের আহ্বান নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, এখন ওই দুর্নীতিবাজ সাজাপ্রাপ্ত এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারী, অর্থপাচারকারী, অস্ত্রপাচারকারী আর গ্রেনেড হামলাকারী, আইভি রহমানের হত্যাকারী- এদের সঙ্গে ডায়ালগ করতে হবে, আলোচনা করতে হবে? আর জিয়াউর রহমান ছিল আমার বাবার হত্যাকারী। এদের সঙ্গে ডায়ালগের কথা বলা, অন্যদিকে মানবাধিকারের কথা বলা- এটা কেমন ধরনের কথা? সেটাই আমি জিজ্ঞেস করি।
আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভোট চুরি করলে দেশের জনগণ মেনে নেয় না। খালেদা জিয়া ভোট চুরি করেছিল ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনে। বাংলাদেশের মানুষ তাকে ক্ষমতা থেকে টেনে নামিয়েছিল। ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন করেছিল কিন্তু দেড়মাসও ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। ৩০ মার্চ জনগণের আন্দোলনে খালেদা জিয়া পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল ভোট চুরির অপরাধে।
তাই ভোট চোররা ভোট চুরি করতেই জানে। তাই আমি আমাদের মেয়েদের বলব, ভোটের অধিকার সকলের। যেকোন নির্বাচনে আমাদের মহিলারা শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দেবে। গণতান্ত্রিক অধিকার ও সাংবিবধানিক অধিকার প্রয়োগ করবে।
বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সাফিয়া খাতুনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগমের সঞ্চালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক রোজিনা নাসরিন।
সাংগঠনিক রিপোর্ট উপস্থাপন করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম কৃক। এ সময় মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ছাড়াও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে ঘিরে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়। দুপুর ৩টায় এ সম্মেলন শুরুর কথা থাকলেও সকাল থেকেই ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মাঠের দিকে নেতাকর্মীদের মিছিলের ঢল নামে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সম্মেলনস্থলে প্রবেশের জন্য একাধিক গেট রাখা হয়। প্রবেশ পথগুলোতে লাইনে দাঁড়িয়ে নেতাকর্মীদের প্রবেশ করতে দেখা যায়। পৌনে তিনটায় প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনস্থলে পৌঁঁছানোর আগেই বিশাল সম্মেলন প্যান্ডেল ছাপিয়ে আশপাশের সব জায়গায় তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। বাদ্য-বাজনার তালে তালে, জয় বাংলা স্লোগানে গোটা এলাকা প্রকম্পিত করে সারাদেশ থেকে আসা নেতাকর্মীরা সম্মেলনে যোগ দেন।
কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনস্থলে এসেই জাতীয় সংগীতের তালে তালে জাতীয় পতাকা উত্তোলন শেষে বেলুন ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। শুরুতেই মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সাফিয়া খাতুন এবং সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম কৃক প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে এবং উত্তরীয় পরিয়ে স্বাগত জানান।
মহিলা আওয়ামী লীগের উত্তর ও দক্ষিণের নেত্রীরা প্রধানমন্ত্রীকে ক্রেস্ট উপহার দেন। মহিলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচীর পরিচালনায় সাংস্কৃতিক পর্বে ‘রক্ত লাল’ ‘তুমি হৃদয়ের ধ্রুবতারা’ ‘জয় বাংলা-বাংলার জয়’ ‘জাগো নারী জাগো’সহ মহিলা আওয়ামী লীগের দলীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। এরপর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের ওপর গীতিনৃত্য এবং সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পীরা।
এর আগে সকাল থেকে খ- খ- মিছিল নিয়ে মহিলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সম্মেলস্থলে আসতে শুরু করেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে উপস্থিতিও। দুপুর সোয়া ২টায় কোরান তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা। সম্মেলনকে ঘিরে পুরো উদ্যান ও আশপাশের এলাকায় বিভিন্ন ধরনের ব্যানার, প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুনে শোভা পায়।
শাহবাগ চত্বর থেকে মৎস্যভবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর, হাইকোর্ট চত্বরে মহিলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখরিত ছিল। সম্মেলনে আসা নেতাকর্মীরা বিভিন্ন রঙের টি-শার্ট, ক্যাপ পরেছেন। তাদের হাতে রয়েছে বাহারি ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড। খ- খ- মিছিল আর ‘জয় বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানের সঙ্গে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে উৎসবের আমেজে মানুষ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগই এদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। আমরা পরপর তিনবার ক্ষমতায় এসেছি জনগণের ভোটে। আজ গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে, বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে, পুরো বিশ্বে মর্যাদা পেয়েছে। এই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে গড়ে তুলব। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবেই।
নির্বাচন নিয়ে কিছু মহলের সংলাপের প্রস্তাব সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, আজ অনেকে বলেন ডায়ালগ করতে হবে। কাদের সঙ্গে ডায়ালগ (সংলাপ)? বিএনপির খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামি। যারা গ্রেনেড হামলা করে আমাকের হত্যা করার চেষ্টা করেছে। যে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসা তো দূরের কথা বিরোধী দলীয় নেতাও হতে পারবেন না। আর আওয়ামী লীগ ১০০ বছরেও ক্ষমতায় যাবে না।
সরকারপ্রধান বলেন, আল্লাহতায়ালা এই ধরনের গর্ব করা কথা পছন্দ করেন না। আর বাংলাদেশের মানুষ তো একেবারেই পছন্দ করে না। সেইজন্য খালেদা জিয়ার মুখের কথা তার বেলায়ই লেগে গেছে। এখন ওই দুর্নীতিবাজ, সাজাপ্রাপ্ত, এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারী, অর্থপাচারকারী, অস্ত্রপাচারকারী আর গ্রেনেড হামলাকারী, রহমানের হত্যাকারী। জিয়াউর রহমান ছিল আমার বাবার হত্যাকারী। আর এদের সঙ্গে ডায়ালগ করতে হবে? আলোচনা করতে হবে? যারা এ ধরনের প্রস্তাব দেয় তারা আবার মানবাধিকারের কথাও বলে, এটা কেমন ধরনের কথা? সেটাই আমি জিজ্ঞেস করি।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে আন্দোলন করতে গিয়ে ভয়াবহ অত্যাচার-নির্যাতন ও হামলার শিকার হওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ওপর যে আঘাত দেওয়া হয়েছে আমরা তা ভুলিনি। আমরা সহ্য করছি। তবে এটা দেখে মনে না করে যে, সহ্য করাটা আমাদের দুর্বলতা। দুর্বলতা না। বাংলাদেশের জনগণ আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছে, আমাদের সঙ্গে আছে। খুনিদের সঙ্গে নেই।
তিনি বলেন, আমরা তাদের (বিএনপি) বাধা দিচ্ছি না। কিন্তু যেভাবে তারা ওই অত্যাচারগুলো করেছিল আমরা ভুলব কিভাবে? সাধারণ মানুষ ভুলবে কিভাবে? তার ওপর অগ্নিসন্ত্রাস, এটা কোন মানুষের কাজ? জীবন্ত মানুষগুলোকে আগুন দিয়ে দিয়ে পুড়িয়ে মারা, এটাই নাকি বিএনপির আন্দোলন!
সম্মেলনে মায়েদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্তানরা যেন মাদক-সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদে জড়িয়ে না পড়ে, বিপথে চলে না যায় সেজন্য মায়েদের সব নজর রাখতে হবে। ছেলে-মেয়ে যাতে নিজের মনের কথা মায়ের কাছে বলতে পারে, সেজন্য সন্তানদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে হবে। তাহলে তারা বিপথগামী হবে না। এ ক্ষেত্রে মায়ের বিরাট ভূমিকা আছে, সেটা যথাযথভাবে পালন করতে হবে।
তিনি বলেন, ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক করে দিয়েছি। এতে মেয়েরা চিকিৎসা পায়। মেয়েরাই চাকরি করে। সারাদেশে ৩০ হাজার নার্স ও ৪৫ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দিয়েছি। দুগ্ধদানকারী মায়ের বিনাপয়সায় চিকিৎসা করে দিয়েছি। নারীদের সবধরনের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। প্রাথমিক শিক্ষায় ৬০ শতাংশ মেয়ের চাকরির ব্যবস্থা করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেকোনো অর্জনে নারীদের অবদান থাকতে হবে। সমাজের অর্ধেক নারী। তারা অচল থাকলে সমাজ এগোবে না। নারী-পুরুষকে সমান তালে এগিয়ে যেতে হবে। আমি নারীদের বিচারপতি, সচিব, ডিসি, এসপি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পথ সুগম করেছি। আজকে আমাদের মেয়েরা প্রতিটি ক্ষেত্রে অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে মেয়েরা ভালো করে বিশ্বের প্রশংসা কুড়াচ্ছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমরা আশ্রায়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমিহীন-গৃহহীনদের ঘর করে দিচ্ছি। সেখানে নারী ও পুরুষকে সমান ভাগ দিচ্ছি। ওই ঘরের মালিক স্বামীর সঙ্গে স্ত্রীও রয়েছে। সেখানে স্পষ্ট বলা আছে, কেউ স্ত্রীকে ছেড়ে দিলে ওই বাড়ি হবে নারীর, পুরুষের নয়। যাতে বিনামূল্যে নতুন ঘর পেয়ে কেউ নতুন বউ না নিয়ে আসে।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে পাকিস্তানী কায়দায় সারাদেশে মা-বোনদের ওপর ভয়াল নির্যাতনের কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে বিএনপি-জামায়াত ঠিক একাত্তরের কায়গায় নারীদের ওপর পাশবিক অত্যাচার চালায়। ৬ বছরের শিশু রাজুফা থেকে শুরু করে ৬০ বছরের বৃদ্ধাও তাদের পাশবিক নির্যাতন থেকে রেহাই পায়নি। দেশের এমন কোন স্থান নেই যেখানে বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসীরা নির্যাতন করেনি। ওই সময় গৌরনদীর প্রায় ২৫ মা-বোন নির্যাতন থেকে বাঁচতে গোপালগঞ্জে এসে আশ্রয় নিয়েছিল।
যুদ্ধের ময়দানে ব্যবহৃত গ্রেনেড দিযে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীবিরোধী মিটিংয়ে হামলা চালানো হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, প্রকাশ্য দিবালোকে যুদ্ধে ব্যবহৃত গ্রেনেড দিয়ে আমাদের সমাবেশে হামলা করা হয়। নেতারা মানবঢাল রচনা করে আমাকে রক্ষা করলেও আইভি রহমানসহ ২২ নেতাকর্মীকে জীবন দিতে হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের সময় আওয়ামী লীগের ওপর নানা ধরনের অত্যাচার-নির্যাতন করা হয়েছে। সেগুলো তারা ভুলে যাই কিভাবে? আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। অর্থ পাচারের দায়ে ও এতিমের টাকা আত্মসাতে বিএনপির দুই নেতা সাজাপ্রাপ্ত। এরা বাংলাদেশের কল্যাণে কি কাজ করবে?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের কল্যাণই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। অপরপক্ষে বিএনপি কি করে? তারা ক্ষমতায় আসা মানে অত্যাচার-নির্যাতন। বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে আওয়ামী লীগের নারী নেত্রীদের ওপর নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরাতো কিছু করছি না। তাদের মেয়েরা মিছিল করছে, আন্দোলন করছে। স্লোগান দিচ্ছে, তারা ইচ্ছামতো সবকিছু করতে পারছে। আমরা তাদের বাধা দিচ্ছি না। কিন্তু ক্ষমতায় থাকতে যারা যেভাবে এসব অত্যাচার করেছিল, আমরা ভুলব কিভাবে? সাধারণ মানুষ ভুলবে কি করে? তারপর তাদের অগ্নিসন্ত্রাস। এটা কোন মানুষের কাজ?
ইসলাম ধর্মের কথা বলে অনেকেই নারীদের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে চায় দাবি করে সরকারপ্রধান বলেন, যারা মেয়েদের এ অধিকার নিয়ে কথা বলে, আর পর্দার আড়ালে ঠেলে দিতে চায় তাদের বলব- ইসলাম ধর্ম যখন নবী করিম (স) প্রবর্তন করেন, কে প্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন? কোন পুরুষ সাহস করে এগিয়ে আসেনি।
একজন নারী এসেছিলেন। তিনি হচ্ছেন বিবি খাদিজা। আর ইসলাম ধর্মই একমাত্র ধর্ম, যেখানে নারীদের সমান অধিকার দিয়েছে। সম্পদে বাবার বাড়ি, স্বামীর বাড়ি- দুই দিকের সম্পদের অধিকার দিয়েছে একমাত্র ইসলাম ধর্ম। যেখানে নারীদের ঘরে আটকে রাখার কথা না, সমস্ত সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ার কথা।
করোনা ভাইরাস মহামারী মোকাবিলায় টিকা দেওয়ার কথা উল্লেখ করে নারীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, যারা বুষ্টার ডোজ নেয়নি আমি প্রত্যেকটা বোনদের বলব আপনারা কিন্তু নিজেরা বুষ্টার ডোজটা দিয়ে নেবেন। আপনি করোনা থেকে মুক্ত থাকবেন এবং পরিবারকেও মুক্ত রাখবেন।
করোনাভাইরাস মহামারীর জন্য বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা তার পাশাপাশি রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রত্যেকটা জিনিসের দাম ও পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে কারও এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে আবারো সেই নির্দেশনা দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। আমাদের দেশে যেন এটা না হয়। সেজন্য মা-বোনদেরও উৎপাদনে সম্পৃক্ত হবার আহ্বান জানান তিনি।
বিএনপির প্রাইম টার্গেট শেখ হাসিনা-কাদের ॥ সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে বর্বর হত্যাকা- ১৫ আগস্টের খুনিদের বিচার করা যাবে না-খুনি মোশতাকের ইনডেমনিটিকে আইন হিসেবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমান ছিলেন ১৫ আগস্ট এবং ৩ নভেম্বর জেল হত্যাকা-ের মূল মাস্টারমাইন্ড, আর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মূল মাস্টারমাইন্ড হচ্ছে ওই সময়ের হওয়া ভবনের যুবরাজ তারেক রহমান।
তিনি বলেন, বিএনপির প্রধান টার্গেট হলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ নয়। ১৫ আগস্ট দুই বোন (শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা) দেশে ছিলেন না। ভাগ্যের কারণে বেঁচে গেলেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা হলো। সেদিনও উদ্দেশ্য ছিল শেখ হাসিনাকে শেষ করা।
ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আছেন বলেই নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে। সচিব থেকে শুরু করে জেলা-উপজেলায় নারীরা গুরুত্বপূর্ণ পদে সরকারি দায়িত্ব পালন করছেন। ওসি নারী, এসপি নারী, সচিব নারী, বিচারপতি নারী, সেনাবাহিনীতে মেজর জেনারেল পদে নারী। নারীর ক্ষমতায়নে শেখ হাসিনা অনন্য। এ সময় তিনি বলেন, নৌকার স্লোগান দেন। শেখ হাসিনার সরকার বার বার দরকার বলেও স্লোগান দেন কাদের। এ সময় উপস্থিত নারী নেত্রীরাও স্লোগান দেন।
বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে একদিনে ১০০ সেতু উদ্বোধন করেছেন । বিশ্বে কী এমন নজির আছে? এমন তথ্য গুগলেও পাওয়া যাবে না। শেখ হাসিনা বেঁচে আছেন বলেই, আমাদের দেশের টাকায় পদ্মা সেতু হয়েছে। এটা শেখ হাসিনার অবদান। আজ শেখ হাসিনা এসেছেন বলেই পদ্মা সেতু হয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপির টার্গেট টাকা সরানো। বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে তারা নিশ্চিহ্ন করতে চায়।
আজকে বিএনপি নেতাদের মনে বড় ব্যথা, মনে বড় জ্বালা। জ্বালারে জ্বালা, অন্তরে বড় জ্বালা। আগামী ডিসেম্বরে মেট্রোরেল উদ্বোধন হবে। আজ প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু টানেলের একটি টিউব নির্মাণের কাজ সমাপ্তি ঘোষণা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধন করেছেন। দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন হয়েছে। তবে এখন একটু একটু লোডশেডিং হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একথা অস্বীকার করেন না। তাই বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে, আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হবে। বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অর্জনকে বাঁচাতে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই।