জনতার ডেস্কঃ
৩৭ প্রতিশ্রুতির নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী।
শনিবার (২৩ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে তিনি তার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন।
ইশতেহারে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন, যানজট নিরসন, অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ, কর্ণফুলী-হালদা নদী রক্ষা, নারীদের জন্য আলাদা গণপরিবহন ব্যবস্থা চালু করা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের তালিকা তৈরি করে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা, ইন্টারনেট শিক্ষা কেন্দ্র চালু, করপোরেশনের সেবাখাতকে ওয়ানস্টপ ডিজিটাল সার্ভারের আওতায় আনা, কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ মোট ৩৭টি প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
রেজাউল করিম বলেন, চট্টগ্রাম প্রকৃতির এক অনন্য উপহার। ঘন সবুজের দেয়াল ঘেরা পাহাড়, নদী, সাগর, হ্রদ, ঝিলের সমন্বয়ে প্রকৃতি নিজের হাতে সাজিয়েছে বন্দর নগরী চট্টগ্রামকে। প্রাকৃতিক রূপের এমন উপহার পৃথিবীতে খুব কমই আছে। এই চট্টগ্রামবাসীর সেবা করার লক্ষ্য নিয়ে ভোটের লড়াইয়ে নেমেছি। আপনারা পাশে থাকবেন।
চট্টগ্রাম দেশের অর্থনীতির প্রাণভোমরা মন্তব্য করে রেজাউল করিম বলেন, দেশের প্রবেশদ্বার চট্টগ্রাম বন্দর। জাতীয় অর্থনীতি চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরেই আবর্তিত হয়। এছাড়া জাতীয় আমদানি-রপ্তানির ৮৫% চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পরিচালিত হয়। স্বাভাবিক কারণেই এর গুরুত্ব অপরিসীম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১২ বছরে চট্টগ্রাম বন্দর বিশ্বমানের গতিশীল আন্তর্জাতিক বন্দরে পরিণত হয়েছে। অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামো সুবিধা ধাপে ধাপে যুক্ত হয়ে চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার স্বর্ণদ্বার খুলতে এগিয়েছে অনেক দূর। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামকে এই অবস্থানে তুলে আনতে বিপুল কর্মযজ্ঞ শুরু করেছে শেখ হাসিনার সরকার। আমি এই উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে ধরে রাখতে কাজ করতে চাই।
সপরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকাণ্ডের পর চট্টগ্রামসহ জাতির বিপুল সম্ভাবনা হাজার বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে মন্তব্য করে রেজাউল করিম বলেন, ঘাতক চক্রের সহযোগী সরকারগুলো নানা অব্যবস্থাপনা ও দখল, লুটপাটের মাধ্যমে দেশকে পরনির্ভর ও পঙ্গু করে দেয়। চট্টগ্রামকে নিয়ে নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। ফলে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর এবং নান্দনিক মহানগরের উন্নয়নও থমকে যায়। শেখ হাসিনার সরকার সেই ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ এবং চট্টগ্রাম বন্দরকে তুলে এনে বিশ্ব দরবারে অনন্য মর্যাদা এনে দিয়েছেন। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের বৈশ্বিক রোল মডেল। জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে করোনা সঙ্কটেও তৃতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সর্বকালের রেকর্ড ৪৩ বিলিয়ন ডলারের উপরে।
তিনি আরও বলেন, পরম সৌভাগ্যবান হয়েও আমরা প্রকৃতির চমৎকার উপহার চট্টগ্রামকে ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারছি না। এর জন্য শুধু দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ নয়, চট্টগ্রামের গর্বিত নাগরিক হিসেবে সবাই সমান দায়ী। একটি জনপদ বা নগর তখনই নান্দনিক, পরিচ্ছন্ন, পরিবেশবান্ধব ও বাসউপযোগী হয়, যখন সব নাগরিক নিজের বাসগৃহের মতো এটার যত্ন নেয়। আমরা পারিনি। কারণ অধিকার বা দাবি সচেতন হলেও আমাদের মাঝে নাগরিক দায়িত্ব পালনের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। আমি নিজেও এই দায় এড়াতে পারি না। তাই নগরবাসীর মিলিত প্রচেষ্টায় অতীতের সব ভুল ছুঁড়ে ফেলে চট্টগ্রামকে সর্বাধুনিক নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
ইশতেহার ঘোষণার সময় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর আনোয়ারুল আজিম আরিফ, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সহসভাপতি ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ সালাম ও সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল হক চৌধুরী রাসেল, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য, সহসভাপতি মাহমুদুল হাসান তুষারসহ আরও অনেকে।
রেজাউল করিম চৌধুরীর ইশতেহারের ৩৭ প্রসঙ্গ:
১. জলাবদ্ধতা নিরসন, ২. ১০০ দিনের অঙ্গীকার, ৩. যানজট সমস্যা থেকে উত্তরণ, ৪. সড়ক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, ৫. নালা-নর্দমা, খাল-নদী দখলদার উচ্ছেদ, ৬. বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ৭. পর্যটন রাজধানী হবে চট্টগ্রাম, ৮. হোল্ডিং ট্যাক্স, ৯. চলমান প্রকল্প, মেগা প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করা, ১০. বন্ধ হয়ে যাওয়া নাগরিক পরিসেবা কার্যক্রম পুনরায় চালু করা, ১১. রূপসী চট্টগ্রামের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ও পরিবেশ সুরক্ষায় উন্নয়ন কার্যক্রম চালু রাখা, ১২. ব্লু-ইকোনমি জোরদার করা, ১৩. পাহাড়, হ্রদ, বনাঞ্চল রক্ষাসহ সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস-প্লাবন থেকে নগর সুরক্ষায় গুরুত্ব দেয়া, ১৪. কর্ণফুলী ও হালদা নদী দখল, দূষণ মুক্ত করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে কাজ করা, ১৫. মশক মুক্ত নগরী গড়তে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া, ১৬. অপরিকল্পিত স্থাপনা তৈরি, সড়ক ও ফুটপাত দখলে নিরুৎসাহিত করা, ১৭. নগরীর ব্যস্ততম কেন্দ্রে আধুনিক পাবলিক টয়লেট ও মহিলাদের জন্য নিরাপদ টয়লেট তৈরি করা, ১৮. সড়ক ও গলিতে এলইডি বাতি এবং সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো, ১৯. শিক্ষা ব্যবস্থায় জোরদার করা, ২০. স্বাস্থ্যসেবা, ২১. রাজস্বসহ সব সেবাখাতে ডিজিটাল ডাটাবেইজ তৈরি করে ওয়ানস্টপ সার্ভারে নিয়ে আসা, ২২. সংশ্লিষ্ট সব সেবা সংস্থার সাথে সমন্বয় করে নগরীর সব উন্নয়ন ও সেবাখাত এক ছাতার নিচে আনার ব্যবস্থা করা, ২৩. আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নাগরিক নিরাপত্তা জোরদারে সংশ্লিষ্ট সব এজেন্সির সহযোগিতায় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের নেতৃত্বে অপরাধ নির্মূল কমিটি গঠন করা, ২৪. সাইবার দূষণ ও আসক্তি নির্মূলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খেলার মাঠ রাখার ওপর জোর দেওয়া, ২৫. মহিলা উদ্যেক্তা সৃষ্টি করে প্রতি ওয়ার্ডে মহিলাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, ২৬. মেয়েদের জন্য আলাদা পরিবহন ব্যবস্থা ও পর্যাপ্ত ট্রান্সপোর্ট চালু করা, ২৭. দুস্থ ও বিশেষ চাহিদার নাগরিকদের মেধা বিকাশে সর্ব্বোচ্চ মনোযোগ দেওয়া, ২৮. প্রতি ওয়ার্ডে কারিগরি ও আত্মকর্মসংস্থান উপযোগী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও ইন্টারনেট শিক্ষাকেন্দ্র চালুর উদ্যোগ, ২৯. সরকারি জমি লিজ নিয়ে ইকোপার্ক, থিম পার্ক, শিশুপার্ক গড়ে তুলে সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা করা, ৩০. রাস্তায় যত্র-তত্র অবৈধ পার্কিং ও ফুটপাত দখল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা, ৩১. ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও সৃজনশীল সব কাজে উৎসাহ প্রদান, ৩২. বহুমুখী সাংস্কৃতিক ও ডিজিটাল পাঠাগার গড়ে তোলা, ৩৩. পাহাড় কাটা বন্ধ, জলাধার, পুকুর ভরাট নিয়ন্ত্রণ করা, ৩৪. মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষা, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারে সুরক্ষা ও তাদের তালিকা করা, ৩৫. কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ ও মাদক আখড়া গুঁড়িয়ে দেওয়া, ৩৬. নাগরিক তথ্যসেবা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় সার্ভার, ৩৭. নাগরিক সচেতনতা গড়ে তোলাসহ প্রতিটি ওয়ার্ডে নাগরিক উদ্বুদ্ধকরণ পর্ষদ গঠন করা।