সিডরের চেয়ে বেশী শক্তিতে ধেয়ে আসছে আম্পান

জনতার ডেস্ক: দেশ জনতার বাণী

আম্পান

প্রবল বেগে সিডরের চেয়ে বেশী নিয়ে ধেয়ে আসছে সুপার ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’। এটি আগামীকাল বুধবার খুব ভোর থেকে সন্ধ্যার মধ্যে যে কোনো সময়ে বাংলাদেশের নোয়াখালীর হাতিয়া দ্বীপ উপকূলজুড়েই আছড়ে পড়তে পারে। তবে এটির মূল চোখ দেশের সুন্দরবনের ওপর দিয়ে উঠতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা কম্পিউটারের মডেল বিশ্লেষণ করে ধারণা করছেন। এতে দেশর বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি থেকে বেঁচে যাবে। ৫টি ক্যাটাগরির ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে ‘সুপার ঘূর্ণিঝড়’ সর্বোচ্চ মাত্রার। এটি সবচেয়ে শক্তিসম্পন্ন ও ভয়াবহ।

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) জানিয়েছে, ‘আম্পান’ ঘণ্টায় গড়ে ২২ কিলোমিটার বেগে এগোচ্ছে উপকূলের দিকে। শক্তি সঞ্চয় করে ‘সুপার সাইক্লোনে’ রূপ নিয়েছে এটি। প্রতিনিয়তই এর শক্তি বাড়ছে। তবে আবহাওয়াবিদরা জানান, বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানার সময় এর গতি কিছুটা কমে ‘এক্সট্রিম সিভিয়ার সাইক্লোন’ বা ‘অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ে’ রূপ নিতে পারে। এর পরও ঘূর্ণিঝড়টি ২০০৭ সালের সিডরের চেয়েও বেশী শক্তি নিয়ে আসতে পারে।

সোমবার রাত ১টায় এ রিপোর্ট লেখাকালে আন্তর্জাতিক ঘূর্ণিঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রগুলোর দেয়া তথ্যমতে, ঝড়টির কেন্দ্র থেকে ৯০ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ২৬৮ কিলোমিটার ছিল। যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়া আকারে ২৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তবে বাংলাদেশে আঘাতের সময় এর গতি সর্বোচ্চ ১৮০ থেকে ২২০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। এটি রাত ১২টায় বাংলাদেশ উপকূল থেকে গড়ে সাড়ে ৯শ’ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল। সিডরের গতি ছিল ঘণ্টায় ২২৩ কিলোমিটার। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশের খুলনা ও বরিশাল বিভাগের মাঝখানে প্রবাহিত বলেশ্বর নদীর মুখ দিয়ে সুন্দরবন অতিক্রম করেছিল সিডর।

তবে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের (বিএমডি) আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ১৯ মে দিবাগত ভোররাত (২০ মে সকাল) থেকে পরবর্তী ১২ ঘণ্টার মধ্যে এটি বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। বর্তমানে বাতাসের গতি যেটাই থাকুক কেন, আঘাত হানারকালে এর গতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২২০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।

কেননা, ঘূর্ণিঝড় যতক্ষণ সাগরে থাকে তখন এর শক্তি সরবরাহ হয়। আর ঝড়ের অগ্রবর্তী অংশ যখন উপকূলে পৌঁছায় তখন শক্তি সরবরাহ কমতে থাকে। ফলে তা দুর্বল হতে শুরু করে। ওই অবস্থায় ঝড়ের প্রকৃত শক্তি থাকে না।

সোমবার রাত ১২টায় ২১ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বিএমডি বলেছে, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসমূহকে ৭ নম্বর বিপদসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ এবং চরসমূহ ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

এ ছাড়া চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় এবং অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ এবং চরসমূহের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণসহ ঘণ্টায় ১৪০-১৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম জেলায় এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণসহ ঘণ্টায় ১৪০-১৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, করোনা সংক্রমণের সময়, তাই প্রত্যেকটি আশ্রয় কেন্দ্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য বলেছি। যারা আশ্রয় কেন্দ্রে আসবেন তাদের মাস্ক ব্যবহারের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমাদের সিপিপি (ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি) ভলান্টিয়ারদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তারা যেন আগামীকাল সকাল থেকে সবাইকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনার কাজ করেন। এ কাজকে ত্বরান্বিত করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও কাজ করবে।

মঙ্গলবার রাতের মধ্যে সবাইকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া হবে জানিয়ে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, সোমবার দুপুর পর্যন্ত দুই হাজার ৫৬০ মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে গেছেন। কেন্দ্রে যারা আশ্রয় নেবেন তাদের জন্য তিন হাজার ১০০ টন চাল, ৫০ লাখ নগদ টাকা, শিশু খাদ্য কিনতে ৩১ লাখ টাকা, গোখাদ্য কিনতে ২৮ লাখ টাকা এবং চার হাজার  ২০০ প্যাকেট শুকনা খাবার পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানান।

আরো পড়ুন : আম্পানে বিপদ সংকেত