জামায়াতে ইসলামী থেকে বেরিয়ে আসা ও বহিষ্কৃতদের সমন্বয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাসহ দলের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করা অংশটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছে। দলের নাম ‘আমার বাংলাদেশ পার্টি’ বা এবি পার্টি ।
সাবেক সচিব এএফএম সোলায়মান চৌধুরীকে আহবায়ক ও সাবেক ছাত্রনেতা মুজিবুর রহমান মনজুকে সদস্য সচিব করে নতুন দলের ২২২ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগরের দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানে মেজর (অব.) ডা. আবদুল ওহাব মিনার ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তাজুল ইসলামসহ ৭ জনকে যুগ্ম আহবায়ক, ৯ জনকে সহকারী সদস্য সচিব করে ২২২ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
গত বছরের এপ্রিলে জামায়াত থেকে বেরিয়ে আসা নেতাকর্মী ও সমর্থকদের যে অংশটি ‘জন-আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ’ নামের নতুন রাজনৈতিক মঞ্চ গঠন করেছিল, তাদের উদ্যোগেই নতুন এই দল এবি পার্টি। তাদের সঙ্গে যুক্ত আছে দীর্ঘদিন ধরে জামায়াতে উপেক্ষিত নেতাকর্মীদের একটি অংশ।
নবগঠিত দলের আহবায়ক সোলায়মান চৌধুরী বলেন, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সুবিচার এই তিন মূলনীতির ভিত্তিতে আমাদের দলীয় গঠনতন্ত্র ও কর্মসূচি প্রণীত হয়েছে। দেশের যে কোনো নাগরিক আমাদের দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে দেশ গঠনে অবদান রাখতে পারেন। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শরিক হওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহবান জানাই।
‘করোনার এই শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করার ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ইনশাআল্লাহ এই চ্যালেঞ্জে আমরা সফলকাম হব।’
দলের সদস্য সচিব মুজিবুর রহমান মনজু বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ভৌগলিক সীমানার ভিত্তিতে আমরা স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছি সত্য, কিন্তু যে স্বপ্ন নিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছিল, তা পূরণ হয়নি। অধিকারভিত্তিক কল্যাণরাষ্ট্র হিসেবে এ রাষ্ট্র অপূর্ণাঙ্গ রয়ে গেছে। ন্যায়বিচার, সুশাসন এগুলো এখনও আমাদের কাছে স্বপ্নের মতো।
ছাত্র ও তরুণদের প্রত্যাশা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে যারা আছেন তারা বয়সে ও মননে সবাই তরুণ। আমরা এ দেশকে নতুন করে পুনর্গঠনের ডাক দিচ্ছি। আগামী এক বছর করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত সেক্টরগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, তারুণ্য হবে আমাদের পরিবর্তনের হাতিয়ার। প্রযুক্তির ইতিবাচক ব্যবহারকে আমরা উন্নয়নের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করব। মানুষের খাদ্য ও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তার জন্য আমরা কার্যকর সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তুলব।
তিনি বলেন, কল্যাণরাষ্ট্রের কী সুবিধা তা আজ উন্নত বিশ্বের দিকে তাকালে বোঝা যায়। তাদের দেশে হাজার হাজার লোক মারা গেলেও সামাজিক শৃঙ্খলা নষ্ট হয়নি। কিন্তু আমাদের দেশে ত্রাণ লুটপাট, চিকিৎসার সীমাহীন সঙ্কট এবং অব্যবস্থাপনার কবলে পড়ে এক আশঙ্কাজনক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। করোনাকাল বুঝিয়ে দিয়েছে এদেশটাকে কল্যাণরাষ্ট্রে রূপান্তরিত করতে না পারলে এর স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব কিছুই অর্থবহ হবে না। তিনি কল্যাণমুখী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় দেশবাসীকে এবি পার্টিকে সমর্থন দেয়ার আহ্বান জানান।
ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে দলের সাত দফা কর্মসূচি উপস্থাপন করেন প্রফেসর ডা. মেজর (অব.) আবদুল ওহাব মিনার। দলের গঠনতন্ত্র উপস্থাপন করেন অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম।
এছাড়া ২২২ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটির নাম ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিটির পক্ষে দলের তরুণ নেতা ব্যারিস্টার জুবায়ের আহমেদ ভুঁইয়া।
সংবাদ সম্মেলনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যমের কর্মীরা অংশ নেন। উপস্থিত সংবাদকর্মী ও অনলাইনে দর্শকদের করা বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন নেতৃবৃন্দ।
আরো পড়ুন : রাজনীতি