পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল করতে খুব শিগগির বিভিন্ন দেশ থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৯ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ বাংলাদেশে রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। অর্থাৎ খুব দ্রুত দেশের বাজারে পেঁয়াজের অস্থিরতা কাটবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পেঁয়াজ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। দু-চার দিনের মধ্যেই দাম কমবে। বাজার সহনীয় করতে এরই মধ্যে ১০ হাজার টন পেঁয়াজ এসেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশ থেকে আরো ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে।
মূলতঃ ভারতের ব্যাঙ্গালুরু থেকে পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে সেদেশের সরকার। গত ২৮ অক্টোবর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য শাখার এক আদেশে এই অনুমতি দেয়া হয়। আদেশে শুধু কর্ণাটক রাজ্যে উৎপাদিত ‘ব্যাঙ্গালুরু গোলাপি পেঁয়াজ’ রপ্তানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। স্থানীয় ভাষায় যা ‘গোলাবি ঈরুল্লি’ নামে পরিচিত।
নতুন আদেশে বলা হয়েছে, প্রতি চালানে সর্বোচ্চ ৯ হাজার টন পর্যন্ত রপ্তানি করা যাবে, এই পেঁয়াজ ভারতের হর্টিকালচার কমিশনারের অনুমতি নিয়ে চেন্নাই সমুদ্রবন্দর দিয়ে রপ্তানি করতে হবে। আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত এই আদেশ বহাল থাকবে।
উল্লেখ্য, গত ২৯ সেপ্টেম্বর এক আদেশে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়; সেই আদেশ বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ। এরপর থেকে দেশের বাজারে হু হু করে দাম বেড়ে দেশের সবচে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জেই কেজি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। এর আগে দেশের পাইকারি বাজারে আমদানিকৃত পেঁয়াজ এত বেশি দামে বিক্রির রেকর্ড নেই।
পেঁয়াজের বাজারে ক্রমাগত উর্ধগতি ঠেকাতে কোন উপায় না দেশে শেষমেশ সরকার দেশের বড় শিল্পগ্রুপগুলোকে পেঁয়াজ আমদানির অনুরোধ করে। সেই অনুরোধে সাড়া দিয়ে তাদের অনেকেই আমদানি করছেন পেঁয়াজ। নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে সেই পেঁয়াজ দেশের বাজারে আসতে শুরু করবে।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই একমাস পর ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানির সুযোগ দিল। যা রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে দেয়ার প্রথম পদক্ষেপ বলেই মনে করছেন অনেকেই।
শুধু একটি রাজ্য থেকে পেঁয়াজ রপ্তানির এই আদেশে ক্ষুদ্ধ হয়েছেন ভারতের অন্য অঞ্চলের কৃষকরা। বিশেষ করে এশিয়ার পেঁয়াজের সবচে বড় বাজার লাসাগাঁওয়ের কৃষকরা এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভ জানিয়ে কেন্দ্রের কাছে আবেদন করেছেন রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার জন্য।
লাসাগাঁও এগ্রিকালচার প্রডিউস মার্কেট কমিটির সভাপতি সুভর্না জগতাপ ভারতের ফাইনান্সিয়াল এক্সপ্রেসকে বলেছেন, বিভিন্ন রাজ্য থেকে পেঁয়াজ আসা শুরু হওয়ায় পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম দ্রুত কমছে, এর ফলে কৃষকরা ন্যায্যদাম পাচ্ছেন না। এখনই রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা এবং গুদামজাতের পরিমানের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে না নিয়ে কৃষকরা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
ভারতের নতুন আদেশের ফলে বাংলাদেশি আমদানিকারকরা উপকৃত হবেন কিনা জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জ কাঁচাপণ্য আড়তদার সমিতির সাধারন সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেছেন, চেন্নাই সমুদ্রবন্দর দিয়ে আমরা সাধারণত পেঁয়াজ আমদানি করি না। সব পেঁয়াজ আমদানি হয় স্থলবন্দর হিলি, ভোমরা, সোনামসজিদ ও যশোর দিয়ে। তবে স্বস্তি একটাই এরমধ্য দিয়ে ভারতের বাজার ধীরে ধীরে উম্মুক্ত হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, ‘ব্যাঙ্গালুরু গোলাপি পেঁয়াজ’ প্রধাণত উৎপাদন হয় কর্ণাটক রাজ্যের চিকবল্লপুর ও কোলার জেলায়। ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে বছরে এর উৎপাদন ৪ লাখ ৪০ হাজার টন। দেখতে গাঢ় বেগুনি রঙের এই পেঁয়াজ আকারে ছোট।
আমদানিকারকরা বলছেন, বাংলাদেশে ভারতের পেঁয়াজ বেশি বিক্রি হয় নাসিক জাতের; যা উৎপাদন হয় মহারাষ্ট্রে। এছাড়া সুখসাগর, পাটনা, সাউথ জাতের পেঁয়াজ বাজারে বিক্রি হয়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, আজ বুধবার খাতুনগঞ্জের পাইকারি আড়তে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে মায়ানমার ১০৫ টাকা, ভারত ১১০ টাকা, মিশর ৮০-৮৫ টাকা, চীন ৮০ টাকা বিক্রি হয়েছে।