করোনার অজুহাতে মুসলিম বিদ্বেষী তৎপরতায় লিপ্ত ভারত-শ্রীলঙ্কা

অনলাইন ডেস্ক:
করোনাভাইরাস বিস্তারের অজুহাতে সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর নিপীড়ন চালাচ্ছে বেশ কিছু দেশ। এ নিয়ে এরই মধ্যে অভিযোগের আঙ্গুল উঠেছে ভারতের দিকে। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হলো দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কাও।

সেখানে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া দুই মুসলিম ব্যক্তির মরদেহ কবর দিতে দেয়নি কলম্বো সরকার। তাদের লাশ পুড়াতে বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা জানায়, কোভিড-১৯য়ে আক্রান্ত হয়ে গত পহেলা এপ্রিল কলম্বোতে মারা গিয়েছিলেন ৭৩ বছর বয়সী বশিরুল হানিফ মোহাম্মদ জনুস নামক এক মুসলিম ধর্মাবলম্বী। কিন্তু তার মরদেহ কবর দিতে দেয়া হয়নি। মারা যাওয়ার একদিন পর তার লাশ পুড়িয়ে দেয়া হয়। এর আগে আরও এক মুসলিম ব্যক্তি মরদেহ পোড়াতে বাধ্য করেছিল শ্রীলঙ্কা সরকার।

এ নিয়ে গত মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত এক আদেশে দেশে করোনায় মৃত সকলের মরদেহ পুড়িয়ে ফেলার কথা বলা হয়েছে। ওই আদেশে আরো বলা হয়, মরদেহগুলোকে গোসল করানোও যাবে না। একটি সিলযুক্ত ব্যাগ এবং একটি কফিনে রেখে পুড়িয়ে দিতে হবে।

কলম্বো সরকারের এই নির্দেশ ইসলামি রীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বিশ্বের সব মুসলিম মৃত্যুর পর শবদেহ গোসল করে কাফনে জড়িয়ে জানাজা শেষে মাটি দেয়া হয়ে থাকে।

এ নিয়ে ক্ষুব্ধ দেশটির মুসলিম সম্প্রদায়। তাদের মতে, এটি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মুসলিম বিদ্বেষী এজেন্ডা। এ প্রসঙ্গে তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনার কথা তুলে ধরছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, করোনায় মৃতদের কবর দেয়ায় কোনও সমস্যা নেই।

এদিকে শ্রীলঙ্কা সরকারের এই নির্দেমের কড়া সমালোচনা করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। তারা কলম্বো সরকারের প্রতি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পরলৌকিক কর্মকাণ্ডে ধর্মীয় বিধানকে সম্মান দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ার অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক বিরাজ পাটনায়েক এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এই সঙ্কটময় সেময়ে কর্তৃপক্ষের উচিত সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলা, তাদের মধ্যে বিভেদ বাড়ানো নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘কোভিড-১৯ য়ে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা যাচ্ছেন তাদের স্বজনেরা যেভাবে চান সেভাবেই প্রিয়জনদের শেষ বিদায় জানানোর সুযোগ দিতে হবে, বিশেষত যেখানে আন্তর্জাতিক নির্দেশিকাগুলির আওতায় এটি অনুমোদিত।’

এদিকে করোনা অজুহাতে ভারত শুরু করেছে আরেক নাটক। দিল্লি সরকার দেশে করোনা বিস্তারের জন্য দিল্লির এক মসজিদে গত মাসে আয়োজিত তবলিগ জামাতকে দায়ী করে সংখ্যালঘু মুসলমানদের বিরোধী নানা তৎপরতা শুরু করেছে। আর এতে নেতৃত্ব দিচ্ছে মোদির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চরম মুসলিম বিদ্বেষী হিসাবে পরিচিত অমিত শাহ।

ইতিমধ্যে ভারতে ভবিষ্যতে তবলিগে অংশ নেয়ার জন্য আর কোনও মুসলিমকে ভিসা দেয়া হবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছে তার মন্ত্রণালয়।

এছাড়া এ ঘটনায় ৯৬০ বিদেশি মুসলিমকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে ভারত। কোয়ারেন্টিনে নেয়ার নাম করে তাদের আটকে রাখা হয়েছে এবং দেশে ফিরতে দেয়া হচ্ছে না

এ নিয়ে ভারত সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ স্যাম ব্রাউনব্যাক।

বৃহস্পতিবার ব্রাউনব্যাক বলেন, ‘ভারতে কয়েকদিনে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য কোনো একটি নির্দিষ্ট সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষকে সরকারের দায়ী করা উচিৎ নয়।’

স্যাম ব্রাউনব্যাক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কোনো রকম দোষারোপের খেলায় না গিয়ে ভারতের উচিত পরিস্থিতি উত্তরণে সঠিক উপায় বের করা।

প্রসঙ্গত, করোনা আঘাত হানার আগেই দিল্লিতে মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর ভয়ঙ্কর হামলা চালিয়ে প্রায় শতাধিক মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। এ ঘটনায় ঘরবাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তু জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছেন বহু মুসলিম।

সূত্র: আল জাজিরা/ এনডিটিভি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here