বছরের শুরুতেই পুরো পৃথিবীর সব হিসাব লন্ডভন্ড করে দিয়েছে করোনা ভাইরাস। চীনে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর পর আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ও ধস নেমেছে। থমকে গেছে চীন কেন্দ্রিক আমদানি এবং রফতানি বাণিজ্য করে আসা দেশগুলোর অর্থনীতির চাকা। পৃথিবীর প্রায় ১০৫টি দেশে ছড়ানোর পর সর্ব শেষ ধস নেমেছে শেয়ারবাজার গুলোতে। আক্রান্ত দেশগুলোতে দেখা দিয়েছে জীবাণুনাশক সামগ্রীর ব্যাপক সংকট। বিভিন্ন তথ্য সূত্রে জানা গেছে, করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে বিশ্ব শেয়ারবাজারে বড় ধস দেখা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে ইউরোপ, এশিয়া থেকে অস্ট্রেলিয়া- প্রতিটি অঞ্চলের শেয়ারবাজারে বিরাট ধস দেখা গেছে গত সোমবার। বিশ্ব পুঁজিবাজারে গত সোমবার দিনভর এই অবস্থার পর দিনটিকে ‘ব্ল্যাক মানডে’ হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল স্ট্রিটের শেয়ারবাজার খোলার সঙ্গে সঙ্গেই সেখানে দাম পড়ে যায় প্রায় সাত শতাংশ। এই বিরাট ধসের পর স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সেখানে শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে এশিয়া এবং ইউরোপের শেয়ারবাজারেও দেখা গেছে একই পরিস্থিতি। কেউ কেউ শেয়ারবাজারে যা ঘটছে তাকে ‘রক্তগঙ্গা’ বয়ে যাওয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন। ২০০৯ সালে বিশ্বজুড়ে যে আর্থিক সংকট দেখা গিয়েছিল, তারপর এ রকম বিপর্যয় আর শেয়ারবাজারে দেখা যায়নি বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বড় ধসের পর ওয়াল স্ট্রিটের শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ রাখা হয় কিছুক্ষণের জন্য। অস্ট্রেলিয়া থেকে শুরু করে এশিয়া, ইউরোপ এবং আমেরিকার সব বড় বড় স্টক এক্সচেঞ্জে সারাদিন ধরে একের পর এক ধস নেমেছে। গত সোমবার লন্ডনের শেয়ারবাজারে ফুটসি ওয়ান হান্ড্রেড সূচক কমে গিয়েছিল ৮ দশমিক ৪ শতাংশ। এই সূচকের ইতিহাসে এটি চতুর্থ সর্বোচ্চ পতন। এর আগে ১৯৮৭ সালে দুবার আর ২০০৮ সালে একবার এত বিরাট দরপতনের ঘটনা ঘটেছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ চায়না চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি এর সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মৃধা বেনু বলেন, এটা অবশ্যই বিশ্ব অর্থনীতির জন্য অনেক খারাপ সময়। সারা পৃথিবীর ব্যবসায়ীক হিসাব-নিকাশ পাল্টে গেছে। খুব শিগগির এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ না পেলে সামনের দিনগুলো অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং হবে।
বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসের বিস্তৃতি যে পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, তার বিরূপ প্রভাব পড়ছে অর্থনীতি আর ব্যবসা-বাণিজ্যে। তেলের চাহিদা ব্যাপকভাবে কমে গেছে। তেল রফতানিকারক দেশগুলো তেলের দাম স্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। ওপেক চাইছিল তেলের উৎপাদন কমিয়ে দাম ঠিক রাখতে। কিন্তু রাশিয়াসহ যারা ওপেকের সদস্য নয়, তারা রাজি হয়নি।
এক ধাক্কায় ২৩০০ পয়েন্ট নেমে গেল সেনসেক্স। একদিকে করোনা, অন্যদিকে ইয়েস ব্যাংক কেলেঙ্কারি- সব মিলিয়ে কয়েক দিন ধরে টালামাটাল অবস্থায় ভারতের পুঁজিবাজার। গত সোমবার সকাল থেকে ভারতের বাজার আরো ভয়ানক হয়ে ওঠে। দিনের শুরুতেই এক ধাক্কায় ১৫০০ পয়েন্ট নেমে যায় সেনসেক্স। তারপর থেকে পতন অব্যাহত থাকে। একটা সময় ২৩০০ পয়েন্ট পড়ে যায় সেনসেক্স। ২০১০-এর পর এক দিনে সবচেয়ে বড় পতন এটি।
গত সোমবার পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জের কেএসই-১০০ সূচকটি ২১০৬ পয়েন্ট কমে যায়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ৪৫ মিনিটের জন্য লেনদেন বন্ধ রাখা হয়। এদিকে করোনাঝড় ও বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমে যাওয়ায় জাপানের পুঁজিবাজার টালমাটাল। একদিনে জাপানের নিক্কেই সূচক কমেছে ১০৫০ পয়েন্ট বা ৫ দশমিক ০৭ শতাংশ। নিক্কেই সূচক গত ১৪ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে পৌঁছেছে।
করোনার প্রভাবে আত্মরক্ষায় আগাম প্রস্তুতি হিসেবে পৃথিবীব্যাপী জীবাণুনাশক সরঞ্জাম সংগ্রহ শুরু করেছে সাধারণ মানুষ। ফলে স্যাভলন, ডেটল, হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ বিভিন্ন জীবাণুনাশক সামগ্রীর ব্যাপক সংকট দেখা দিয়েছে। এই মূহুর্তে সব থেকে বেশি ঘাটতি রয়েছে মাস্কের। পৃথিবীব্যাপী মাস্ক বিক্রি হচ্ছে অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে কয়েক শতগুণ বেশি দামে। ইতিমধ্যে করোনা আক্রান্ত দেশগুলোকে সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে আইএমএফ এবং বিশ্ব ব্যাংক।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here