অনন্য, অসাধারণ তামিম ইকবাল। শক্ত হাতে দিচ্ছেন সমালোচনার জবাব। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডের দিনটিকে নিজের করে নিয়েছেন তিনি। ব্যাটে ছোটাচ্ছেন রানের ফোয়ারা।

স্বভাবতই ফিফটির পর দোর্দণ্ড প্রতাপে অনবদ্য সেঞ্চুরি তুলে নিলেন ড্যাশিং ওপেনার। এটি তার ক্যারিয়ারের ১২তম তিন অংক ছোঁয়া ইনিংস। এ নিয়ে ১৯ মাস ও ২৩ ম্যাচ পর তিন অংকের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করলেন তিনি।

এ ম্যাচে খেলতে নামার আগে সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হচ্ছিলেন তামিম। ধীর হয়ে গেছেন, দলকে মন্থর শুরু এনে দিয়ে বিপদে ফেলছেন-এরকম কতশত বাক্যবাণে জর্জরিত হচ্ছিলেন তিনি। তাকে রীতিমতো ধুয়ে দিচ্ছিলেন সমালোচকরা।

এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বাংলাদেশের সংগ্রহ ৩৮ ওভার শেষে ৩ উইকেটে ২০৫ রান। তামিম ১০৩ রান নিয়ে ব্যাট করছেন। ২৮ রান নিয়ে তাকে সঙ্গ দিচ্ছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

মঙ্গলবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। প্রথম ম্যাচেও টস জেতেন তিনি। প্রথম ওয়ানডেতে দাপুটে জয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে টাইগাররা। দ্বিতীয় ওয়ানডে জিতে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিততে চান তারা। সেই লক্ষ্যে শুরুটা দারুণ করেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। উদ্বোধনী জুটিতে ৩৮ রান তোলেন তারা।

এ পথে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দেশের হয়ে ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি রান করার রেকর্ড গড়েন তামিম। টপকে যান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে। নিষেধাজ্ঞার কারণে আপাতত খেলার বাইরে তিনি। সাকিব জিম্বাবুইয়ানদের বিপক্ষে ৪২ ইনিংসে করেন ১৪০৪। ৪০ ইনিংসে তাকে ছাড়ান তামিম। তিনি ১৩৯৮ রান নিয়ে খেলা শুরু করেন।

তামিমের কীর্তির পরই দুর্ভাগ্যক্রমে রানআউট হয়ে ফেরেন লিটন। ড্যাশিং ওপেনারের ড্রাইভ ঠিকমতো ফেরাতে পারেননি বোলার কার্ল মুম্বা। তার হাতে লেগে বল আঘাত হানে স্টাম্পে। বেশ কিছুটা এগিয়ে থাকা লিটন চেষ্টা করেও সময়মতো ক্রিজে ফিরতে পারেননি। প্রথম ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান এদিন দুই অংকের ঘরও স্পর্শ করতে পারেননি (৯)। সেই রেশ না কাটতেই তামিমের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির শিকার হয়ে রানআউটে কাটা পড়েন নাজমুল হোসেন শান্ত।

তবে স্বচ্ছন্দে খেলে যান তামিম। স্বাভাবিকভাবেই ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৪৮তম ফিফটি তুলে নেন তিনি। এ নিয়ে ৮ মাস এবং ৭ ম্যাচ পর হাফসেঞ্চুরি পান তিনি। বাঁহাতি ওপেনার সবশেষ ফিফটি করেন ২০১৯ সালের ২০ জুন, নটিংহ্যামে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপের ম্যাচে।

বাংলাদেশের নির্ভরতা প্রতীক মুশফিকুর রহিম। খানিক ব্যবধানে দ্রুত ২ উইকেট হারিয়ে একটু চাপে পড়েছিল দল। সেই অবস্থায় ক্রিজে এসে দলের হাল ধরেন তিনি। তামিমকে দেন যোগ্য সহযোদ্ধার সমর্থন। এক পর্যায়ে দারুণ মেলবন্ধন গড়ে ওঠে দুজনের ব্যাটে। উভয়ই রানের নহর বয়ান। তাতে হু হু করে বাড়ে দলীয় রান। কিন্তু হঠাৎ ছন্দপতন। অপ্রয়োজনীয় শট খেলতে গিয়ে উইসলি মাধেভেরের শিকার হয়ে ফেরেন মুশি। ফেরার আগে অবশ্য ক্যারিয়ারে ৩৮তম হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি।

লম্বা সময় পর সূচনা থেকেই সাবলীল ব্যাটিং করছেন তামিম ইকবাল। স্বচ্ছন্দে ছন্দময় ব্যাট চালাচ্ছেন তিনি। ছোটাচ্ছেন স্ট্রোকের ফুলঝুরি। খেলছেন সব নান্দনিক শট। অনুমিতভাবেই ইতিহাস গড়লেন তামিম। ছুঁলেন বহুল প্রত্যাশিত ও কাঙ্ক্ষিত মাইলফলক।

প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ওয়ানডেতে ৭০০০ রানের অভিজাত ক্লাবে পৌঁছলেন তিনি। ২০৬ ম্যাচে এ কীর্তি গড়লেন ড্যাশিং ওপেনার। বাংলাদেশের হয়ে দ্রুততম ৩, ৫ ও ৬ হাজার রানের মাইলস্টোনও স্পর্শ করেন তিনি।

সমান ম্যাচ খেলে ৬৩২৩ রান নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। পরের স্থানে রয়েছেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল মুশফিকুর রহিম। তার রান ৬১৭৪।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here