খুশি হয়েছি আমাদের বিশিষ্ট বন্ধু, মুক্তিযুদ্ধের সহযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরী আসন্ন চসিক মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন এ খবর শুনে। রেজাউল করিম চৌধুরী চট্টগ্রামের প্রবীণ রাজনৈতিক নেতা, বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষাব্রতী এবং বহরদারহাট-খ্যাত ঐতিহ্যবাহী বহরদার পরিবারের কৃতী পুরুষ। বহরদার পরিবার চট্টগ্রামের অন্যতম একটি বনেদী বংশ। চট্টগ্রামের সভ্যতা বিনির্মাণে এই পরিবারের বিশেষ অবদান রয়েছে। বহরদার পরিবারের গৌরব মোবারক আলী চৌধুরী, প্রফেসর সুলতানুল আলম চৌধুরী উনিশ ও বিশের দশকের চট্টগ্রাম প্রবাদপুরুষ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। মোবারক আলী চৌধুরী তাঁর সময়ে ‘বড় মিয়া’ নামে সুখ্যাত ছিলেন। প্রফেসর সুলতানুল আলম চৌধুরী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন। তিনি পাকিস্তান আমলের প্রথমদিকে রাজনীতিতে যোগ দিয়ে ভদ্রলোক রাজনীতিক এবং বাগ্মী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি ১৯৫৪ সালে পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে হক-ভাসানী-সোহরাওয়ার্দীর যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে এমএলএ বা প্রাদেশিক আইন সভার সদস্য নির্বাচিত হন।
বিদ্যা, রাজনীতি ও সমাজসেবায় বহরদার পরিবারের ঐতিহ্য ধারণ করে রেজাউল ভাইও বর্তমান চট্টগ্রামের একজন বিশিষ্ট রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন। প্রফেসর সুলতানুল আলম চৌধুরীরই ভদ্রলোকী রাজনীতির প্রকাশ ঘটেছে রেজাউল ভাইর চরিত্রে।
রেজাউল ভাই ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার প্রতীক। তিনি একজন সৎ, নিষ্ঠাবান, নিবেদিতপ্রাণ, জনদরদী, ন্যায়পরায়ণ ও পরিচ্ছন রাজনীতিক হিসেবে সর্বমহলে উচ্চ প্রশংসিত। তিনি হৈ চৈ করেন না, পেশীশক্তি লালন বা প্রদর্শন করেন না, আদর্শনির্ভর সুস্থ ধারার রাজনীতির চর্চা ও পৃষ্ঠপোষকতা করেন। ষাট দশক থেকে ধারাবাহিকভাবে রাজনীতি করে আসছেন। তাঁর রাজনীতির বয়স অর্ধশতাব্দি পেরিয়ে গেছে। দীর্ঘ সময়ে জাতীয় জীবনে কত দুর্যোগ, ঝড়-ঝাপটা এসেছে, তাঁর দল আওয়ামী লীগ কত অত্যাচার, নির্যাতনের সম্মুখীন হয়েছে; মুক্তিযুদ্ধ গেছে, পঁচাত্তরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে; আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করার জন্য কত চেষ্টাই না হয়েছে; কিন্তু রেজাউল ভাই দেশ, জাতি, জনগণ, দল ও নেত্রীর বিপদের সময় শক্ত হাতে পরিস্থিতির মোকাবেলা করেছেন, দল ছেড়ে যাননি এবং নেত্রীকে পরিত্যাগের কথা কখনো কল্পনাও করেন নি।
ফলে আজ তিনি পুরস্কার পেয়েছেন। বিলম্বে হলেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনা কখনো ন্যায়বিচার করতে ভুল করেন না। রেজাউল ভাই মেয়র পদের যোগ্য দাবিদার ছিলেন। নেত্রীর তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি। যার দলস্বরূপ আমরা দেখলাম চট্টগ্রামের নীরব কর্মী, দলের একনিষ্ঠ নেতা, নিখাদ দেশপ্রেমিক এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী রেজাউল করিম চৌধুরীকে তিনি মনোনয়ন দিয়ে পুরস্কৃত করেছেন। যেমন মোছলেম ভাইকে নেত্রী মূল্যায়ন করেছেন মঈনুদ্দিন খান বাদলের শূন্য আসনে মনোনয়ন দিয়ে। তিনি এমপি হয়ে গেছেন। মোছলেম ভাই বর্তমানে জীবিত ষাট দশকের ছাত্রনেতাদের মধ্যে সবচেয়ে সিনিয়র। চকরিয়ার রব্বান ভাই ও সালাউদ্দিন ভাই, রাউজানের কাজী শামসু ও ওহাব ভাই, আবদুল্লাহ হারুন ভাই, শেখ মুহাম্মদ ইব্রাহিম ও কলিমুল্লাহ চৌধুরী আছেন, কিন্তু তারা অনেকদিন থেকে রাজনীতিতে সক্রিয় নন। মোশাররফ ভাইর কথাও আমি ভুলিনি। কিন্তু তিনি ছাত্রনেতা ছিলেন না। তাছাড়া তিনি সত্তরে রাজনীতিতে সক্রিয় হন।
মোছলেম ভাই অনেক ত্যাগী ও সংগ্রামী নেতা। ২৭ মার্চ যুদ্ধরত ইপিআর-এর জন্য রসদ নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি ও মহিউদ্দিন ভাই পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে গ্রেফতার হন। মুক্তিযুদ্ধে তাঁরাই প্রথম বন্দী।
রেজাউল ভাইয়ের নাম আলোচনায় ছিলো না; কেউ ভাবতেও পারেননি, তাঁকে নিয়ে কোন জল্পনা-কল্পনাও ছিলো না। কিন্তু নেত্রী সব খবর রাখেন, সারাদেশ তাঁর নখদর্পণে, দলে কে কোথায় কি করছেন, তাঁর চেয়ে ভালো কেউ জানেন না। এ কারণেই না কোন ঢাকঢোল না পিটিয়েও রেজাউল ভাই মনোনয়ন পেয়ে গেলেন।
যাঁরা পান নি, যাঁরা মনোনয়ন চেয়েছিলেন, তাঁরাও নিশ্চয়ই যোগ্য প্রার্থীই ছিলেন। বিশেষ করে বর্তমান মেয়র নাছির ভাই, তিনি নতুন মেয়র হিসেবে অনেক কাজ আরম্ভ করেছিলেন। আরেকবার সুযোগ পেলে নিশ্চয়ই তিনি উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারতেন। তিনি মনোনয়ন পেলেও কোন অসুবিধা ছিলো না। আর আমাদের সুজন ভাই, আর একজন যোগ্যপ্রার্থী। তিনি চেয়েছিলেন কিনা আমি জানি না। তিনি একজন বিজ্ঞ, বিচক্ষণ, পোড়খাওয়া সংগ্রামী রাজনীতিবিদ, আমি তাঁকে শ্রদ্ধা করি।