কুরআন ও বিজ্ঞানের আলোকে সমুদ্র ও মহাসমুদ্র
প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আলী আজাদী
প্রো-ভিসি, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম।

সূচনা
মহাগ্রন্থ আল-কুরআন ১৪’শ বছর পূর্বে অহির মাধ্যমে নাযিলকৃত মানবজাতির জন্য পথের দিশা সম্বলিত আল্লাহ প্রদত্ত সর্বশেষ আসমানী কিতাব। এই কিতাব পূর্বের নবী, রাসূল এবং অন্যান্য আসমানী কিতাবসমূহের স্বীকৃতির এক প্রামাণ্য দলিলও বটে। মানব জাতিকে সঠিক পথে পরিচালনার জন্যে পারিবারিক, সামাজিক তথা রাষ্ট্রীয় জীবনের সার্বিক দিক নির্দেশনার পাশাপাশি বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার অসংখ্য তথ্য রয়েছে এ মহাগ্রন্থে। এই গ্রন্থে রয়েছে অতীত সভ্যতার ঘটনাবলী এবং দিক-নির্দেশনা, যা মানব জাতি জানত না এবং দিক-নির্দেশনা ও তথ্যাবলী আছে ভবিষ্যতে কিয়ামত পর্যন্ত সময়ের এবং তারপরেরও এক অনন্ত মহাকালের যা মানুষের চিন্তার অতীত।
পৃথিবী পৃষ্ঠের ৪ ভাগের ৩ ভাগ অংশ জুড়ে রয়েছে পানি। এই পানির বিরাট অংশ দখল করে আছে সাগর ও মহাসাগর। এই সাগর শব্দটি পবিত্র কুরআনের ১১৪টি সূরার মধ্যে ২৫টি সূরায় ৪০ বার এসেছে। পাঠকের  পড়ার সুবিধার জন্য এখানে ঐসব সূরা এবং আয়াতসমূহের ক্রমিক নম্বরগুলো উল্লেখ করা হলো:
২:৫০, ১৬৪; ৫:৯৬, ১০৩; ৬:৫৯, ৬৩, ৯৭; ৭:১৩৮, ১৬৩; ১০:২২, ৯০; ১৪:৩২; ১৬:১৪; ১৭:৬৬, ৬৭, ৭০; ১৮:৬০, ৬১, ৬৩, ৭৯, ১০৯; ২০:৭৭; ২২:৬৫; ২৪:৪০; ২৫:৫৩; ২৬:৬৩; ২৭:৬১, ৬৩; ৩০:৪১; ৩১:২৭, ৩১; ৩৫:১২; ৪২:৩২; ৪৪:২৪; ৪৫:১২; ৫২:৬; ৫৫:১৯, ২৪; ৮১:৬; ৮২:৩।
কুরআনে বর্ণিত এইসব বক্তব্য বুঝতে হলে বিজ্ঞানধর্মী জ্ঞানের একান্ত প্রয়োজন। এই প্রবন্ধে কুরআনে বর্ণিত সাগর সম্পর্কে অনেক আয়াত থেকে মাত্র দু’টি আয়াতের আলোচনা করা হলো। প্রথম অংশে আলোচনায় রয়েছে সাগরের স্তরীভূত অন্ধকার (২৪:৪০) এবং দ্বিতীয় অংশে আলোচনায় রয়েছে দুই পূর্ব ও পশ্চিমের সংযোগকারী দুই সাগরের মিলন তথ্য নিয়ে (৫৫:১৭-২৫, ২৫:৫৩)।
সাগরের গভীর থেকে গভীরতায় বিভিন্ন রংয়ের শোষণ, আলোর প্রস্থান এবং অন্ধকারের আবির্ভাব কীভাবে?
মহাগ্রন্থ আল কুরআন একটি অলৌকিক গ্রন্থ। মানবজাতি এবং জ্বীনদের পক্ষে এই কুরআনের মত একটি সূরাও রচনা করা সম্ভব নয়। এই গ্রন্থের বহু জায়গায় এই নিয়ে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ১৪’শ বছর ধরে এই চ্যালেঞ্জ কেউ গ্রহণ করতে পারেনি এবং কোন দিন পারবেও না। কুরআনের অলৌকিকত্ব চিরদিনের এবং পৃথিবীর শেষদিন পর্যন্ত পৃথিবীর  মানুষের কাছে এর অলৌকিকত্ব বিভিন্ন সময়ের বিজ্ঞানের আবিষ্কারের প্রেক্ষাপটে উদ্ভাসিত হতে থাকবে। বিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞানের আবিষ্কারের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি গভীর সাগর-মহাসাগরের গভীরতা এবং তার বৈশিষ্ট্যাবলী। পবিত্র কুরআনের ২৪নং সূরা নূরের ৪০নং আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন, “অথবা (অবিশ্বাসীদের অবস্থা) মহাগভীর সমুদ্র তলের অন্ধকারের মতো, যাকে আচ্ছন্ন করে তরঙ্গের উপর তরঙ্গ, যার ঊর্ধ্বে মেঘপুঞ্জ, গাঢ় অন্ধকার স্তরের উপর স্তর, যদি একজন মানুষ হাত বাড়ায় তা আদৌ সে দেখতে পাবে না, আল্লাহ যাকে আলো দান করেন না তার জন্য কোন আলো নেই”।
কিং আবদুল আজিজ ইউনিভার্সিটির মেরিন জিওলজির বিশেষজ্ঞ প্রফেসর দূর্গা রাও (Professor Durga Rao) কে বিজ্ঞান বিষয়ক কুরআনের আয়াতসমূহ থেকে উপরের আয়াতের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছিল। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, বিজ্ঞানীরা সাবমেরিনের সাহায্যে বর্তমানে সাগরের তলদেশের অন্ধকার সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করছে এবং গভীর সাগরে ডুব দিয়ে থাকতে সক্ষম হয়েছে। যারা সমুদ্রে ডুব দিয়ে মুক্তার জন্য ঝিনুক কুড়ায় তারা শুধু কম গভীরতায় (২০-৩০ মিটার) ঐ কাজ করতে পারে। মানুষ সমুদ্রের ২০০ মিটার গভীরতার অন্ধকার অংশে বাঁচতে পারে না। উপরের বর্ণিত আয়াত গভীর সমুদ্রের একটি চিত্র আমাদের সামনে তুলে ধরেছে। শুধুমাত্র গভীর মহাসমুদ্রে ঐ রকম স্তরীভূত অন্ধকার সৃষ্টি হওয়ার পিছনে দু’টি কারণ অন্তঃর্নিহিত আছে।
প্রথম কারণ:

আলোক রশ্মি সাতটি রংয়ের (VIGROBY) সমন্বয়ে গঠিত। যখনি আলোক রশ্মি পানিতে এসে পড়ে তখন তা সাতটি রংয়ে বিন্যাস্ত হয়ে ক্রমান্বয়ে শোষিত হয়ে সমুদ্রের গভীরে প্রবেশ করতে থাকে। প্রথম উপরিস্তরের ১০ মিটারে লাল রং শোষিত হয়। কোন ডুবুরী সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরি ভাগের ৩০মিটার গভীরে যদি কোন আঘাত পেয়ে শরীর থেকে রক্ত বের হয় তা সে দেখতে পাবে না। কারণ ঐ গভীরতায় আলোর লাল রং পৌঁছায় না। ঐ ভাবে দেখা যায় পরবর্তী গভীরতায় (৩০-৫০ মিটার) কমলা রং শোষিত হয়ে যায়। ৫০-১০০ মিটার গভীরতায় হলুদ রং শোষিত হয়। ১০০-২০০ মিটার গভীরতায় সবুজ রং এবং ২০০ মিটার এর বাইরে গভীরতায় নীল রং শোষিত হয়। বেগুনী এবং ইনডিগো ২০০ মিটার উপরে শোষিত হয়। এভাবে একের পর এক সব রং শোষিত হয়ে যায়। অর্থাৎ সাগরের এক এক স্তরে এক এক রং শোষিত হওয়ার ফলে স্তরীভূত অন্ধকার সৃষ্টি হয় এবং তলার দিকে অন্ধকার ক্রমান্বয়ে বর্ধিত হয়ে সব শেষে কঠিন অন্ধকার আবির্ভূত হয়। ১০০০ মিটারের নিচে সম্পূর্ণ অন্ধকার।
দ্বিতীয় কারণ:

বাঁধা প্রাপ্ত হওয়ার কারণে আলো লুকিয়ে যায়, ফলে অন্ধকার ঘনীভূত হয়। আমরা পৃথিবী পৃষ্ঠে যে আলোক রশ্মি দেখি তার উৎস হলো সূর্য। আকাশে মেঘ থাকলে এই আলোক রশ্মি প্রথম মেঘে বাঁধা প্রাপ্ত হয়। কারণ মেঘের মধ্যে পানির বিন্দুতে আলো শোষিত হয় এবং কিছু আলোক রশ্মিতে বিন্যস্ত হয়। যার ফলে মেঘের নিচে অন্ধকার স্তরের সৃষ্টি হয়। তা হলো অন্ধকারের প্রথম স্তর। আলোক রশ্মি যখন সমুদ্রের পৃষ্ঠদেশে পতিত হয় তখন তা সমুদ্রের ঢেউয়ের কারণে প্রতিফলিত হয়ে উজ্জলতা প্রদর্শন করে। উজ্জলতার প্রতিফলনের মাত্রা ঢেউয়ের কোণের সংখ্যার উপর নির্ভর করে। ফলে তরঙ্গসমূহ আলোকে প্রতিফলিত করে উপরে নিক্ষেপ করার ফলে নিচে অন্ধকার সৃষ্টি হয়। সমুদ্রের গভীরে কেবল অপ্রতিফলিত রশ্মিসমূহ প্রবেশ করে। এভাবে সমুদ্রকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়- আলো ও গরম তাপমাত্রা সম্পন্ন উপরিভাগ এবং অন্ধকারসম্পন্ন গভীর স্তরসমূহ। বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের কারণে এই দু’স্তর এক অন্যের থেকে পৃথক এবং উপরিভাগ তরঙ্গের মাধ্যমে গভীর স্তর থেকে পুনরায় পৃথক।
সমুদ্রের অভ্যন্তরীণ তরঙ্গমালা ও অন্ধকারের স্বরূপ:
সমুদ্রের অভ্যন্তরীণ তরঙ্গমালা সবেমাত্র ১৯০০ খৃষ্টাব্দে আবিষ্কৃত হয়েছে। সম্প্রতি  বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছে যে সমুদ্রের গভীরেও তরঙ্গ রয়েছে, যা ঘন ইন্টারফেসের উপর বিভিন্ন ঘনত্বের তরঙ্গের মধ্যে সংঘটিত হয়। অভ্যন্তরীণ তরঙ্গসমূহ সাগর এবং মহাসাগরের গভীর অংশকে দখল করে থাকে। কারণ গভীর অংশের পানি অধিকতর ঘনত্ব সম্পন্ন। উপরিভাগের ঢেউয়ের মত এগুলো ভাঙ্গতে পারে। অভ্যন্তরীণ তরঙ্গমালা মানুষের চোখে দেখা যায় না। কিন্তু গভীরতার নির্দিষ্ট অবস্থানের তাপমাত্রা এবং লবণাক্ততা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ঐ সব তরঙ্গ সনাক্ত করা যায়। সমুদ্রের দুই স্তর পৃথককারী ঐ সব তরঙ্গের নিচ থেকে অন্ধকার শুরু হয়। এই সমস্ত গভীর অঞ্চলে বসবাসকারী মাছও কিছু দেখতে পায় না। ঐ স্তরে (মাছের) তাদের শরীরের নিজস্ব আলোক অঙ্গ থেকে বিচ্ছুরিত আলোতে তারা পথ চলে। একের উপর আরেক স্তরীভূত অন্ধকার সম্পর্কে কুরআন বলছে- “গভীর মহাসমুদ্র অন্ধকারে আচ্ছাদিত হয় বিশাল তরঙ্গের নিচে তরঙ্গ দ্বারা।”(২৪:৪০)
ঐ সব তরঙ্গের উপর আরও সমান্তরাল অন্ধকার স্তর আছে। এই অন্ধকার স্তরগুলি সমুদ্র সারফেসের উপর স্থান লাভ করেছে। কুরআন আমাদেরকে ঐ অন্ধকার সম্পর্কে জানাচ্ছে,“যার ঊর্ধ্বে মেঘপুঞ্জ; গাঢ় অন্ধকার স্তরের উপর স্তর।” (২৪:৪০)
সমুদ্রের বিভিন্ন স্তরে আলোক রশ্মির বিভিন্ন রং শোষিত হওয়ার পর যে অন্ধকার সৃষ্টি হয় তার অতিরিক্ত মেঘের নিচে এই অন্ধকার। সমুদ্রের বিশাল গভীর অন্ধকারের অবস্থা বুঝতে গিয়ে কুরআন বলছে,“(ঐ গভীরতায়) যদি একজন মানুষ হাত বাড়ায় সে ঐ হাত আদৌ দেখতে পাবে না (অর্থাৎ অতি নিকটতর বস্তু)। আল্লাহ যাকে আলো দান করেন না তার জন্যে কোন আলো নেই।” (২৪:৪০)
এই স্তর হলো সম্পূর্ণ অন্ধকার স্তর। এই জন্যেই গভীর সমুদ্রের তলদেশে সাবমেরিনকে অবশ্যই তাদের নিজস্ব আলো সঙ্গে নিতে হয়।
আল-কুরআনের উৎস কোথায়?
হযরত মুহাম্মদ (সা) কে সাগরের গভীরতার এসব স্তরীভূত অন্ধকারের খবর কে দিলেন? ১৪’শ বছর আগে আধুনিক বিজ্ঞানের এই জ্ঞান তিনি জানলেন কেমন করে? পবিত্র কুরআনে এই সব বৈজ্ঞানিক তথ্য পৌঁছাল কী করে? এসব প্রশ্নের উত্তরে প্রফেসর রাও বলেন, ১৪’শ বছর আগে আধুনিক বিজ্ঞানের এসব তথ্যের উপস্থিতি ছিল, এটা ধারণা করা অত্যন্ত কঠিন। তখনকার মানুষের সহজ সরল ধারণা ছিল, বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করা অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার ছিল। একজন সাধারণ মানুষ সাগরের গভীরে অন্ধকার সংঘঠিত হওয়ার ক্রিয়াকলাপ প্রপঞ্চের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিতে পারে না। সুতরাং আমি (প্রফেসর রাও) মনে করি যে এ সব তথ্য একটি সুপার ন্যাচারাল উৎস থেকে এসেছে। হ্যাঁ, এই জ্ঞানের উৎস মানুষের ক্ষমতার বাইরে।
প্রফেসর রাও যা বলতে চেয়েছেন তা হলো, এটি এমন একটি ব্যাপার যা প্রাকৃতিকভাবে কোন জীবের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। এটি সত্যিকার অর্থে তাঁরই বক্তব্য যিনি প্রকৃতিকে সৃষ্টি করেছেন এবং প্রকৃতিকে জানেন, জানেন মহাবিশ্ব এবং তার গোপন বিষয়াদি। এ ব্যাপারে আল্লাহপাক কুরআনে আমাদেরকে জানাচ্ছেনন, “বল, ইহা তিনি অবতীর্ণ করেছেন যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সমুদয় রহস্য অবগত আছেন নিশ্চয়; তিনি পরম ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।” (২৫:৬)
শান্তি কোন পথে? 
উপরে বর্ণিত গভীর সমুদ্রের তরঙ্গ, আলো-অন্ধকারের জ্ঞান ও তথ্যাদি পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তা আল্লাহই মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা) কে দিয়ে কুরআনের মাধ্যমে আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন। মহাগ্রন্থ আল কুরআন শুধু বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও তথ্যের বই নয়। এ গ্রন্থে রয়েছে মানবকুলের পথ নির্দেশ। ১৪’শ বছর পূর্বের এই গ্রন্থে আধুনিক বিজ্ঞান সম্পর্কিত এসব তথ্য সম্বন্ধে বিজ্ঞানীদের এক একটি উক্তি এটাই প্রমাণ করছে যে মহাগ্রন্থ আল কুরআনে বর্ণিত বিভিন্ন তথ্য ও জ্ঞান এবং ‘মানবকুলের পথ নির্দেশ’ এক অবিসংবাধিত নিখুঁত সত্য। যে পথ নির্দেশ নবীজীর (স:) মাধ্যমে সমাজে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে ইতিহাসের জঘন্যতম ভয়াবহ আইয়্যামে জাহেলিয়াতের অন্ধকার দূর হয়ে গিয়েছিল। আর কেবল এই নিখুঁত সত্য পথ-নির্দেশই (আল-কুরআন),শান্তি দিতে পারে বর্তমান বিশ্বের অন্ধকারে নিমজ্জিত, মনগড়া নিয়ম-কানুন তথা মতবাদে আবিষ্ট, সন্ত্রাসের দাবানলে পিষ্ঠ, ক্ষুধায় অনাহরে জর্জরিত, পরকালকে ভুলে ক্ষমতার লোভে পাগলপারা, সঠিক জ্ঞানের আলোবিহীন অন্ধকারে নিমজ্জিত মানবকুলকে।
এবারের আলোচনা দুই পূর্ব ও দুই পশ্চিম নিয়ে।
দুই পূর্ব ও দুই পশ্চিম কী? কীভাবে সুয়েজ খাল দুই সাগরকে সংযোগ করল?
এ প্রবন্ধের দ্বিতীয় আলোচনা হচ্ছে দুই পূর্ব ও দুই পশ্চিমের সংযোগকারী দুই সাগর বা দরিয়া নিয়ে। এই দুই দরিয়া হলো ভূমধ্যসাগর এবং লোহিত সাগর। আর সংযোগকারী খালটি হলো ‘সুয়েজ ক্যানেল’। দুই পূর্ব হল (১) মধ্যপ্রাচ্য (Middle East) এবং (২) নিকট প্রাচ্য (Near East)। আর দুই পশ্চিম হলো (১) পশ্চিম ইউরোপ (Western Europe) এবং (২) পূর্বাঞ্চলীয় ইউরোপ (Eastern Europe)। দু’টোই কিন্তু দুই পশ্চিমের ইউরোপ।*

—————————————————————————-
* কুরআন শরীফের বিভিন্ন অনুবাদে  এই দুই পূর্ব এবং দুই পশ্চিমকে গ্রীষ্ম এবং শীতকালে যথাক্রমে সূর্যের দুই উদয়াচল এবং অস্তাচলকেও অভিহিত করে বুুঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে।

—————————————————————————-

সুয়েজ খালের দৈর্ঘ্য ১০১ মাইল। পরবর্তীতে সংস্কারের মাধ্যমে ২০১৫ সালে খালটির দৈর্ঘ্য ১২০ মাইলে (১৯৩ কি.মি.) উত্তীর্ণ হয়েছে। গভীরতা হয়েছে ২৪ মিটার, আর প্রস্থ হয়েছে ২০৫ মিটার। যার ফলে খালটিতে টু-ওয়ে জাহাজ চলাচল করতে পারে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ কনটেইনার শীপ “OOCL-Hong Kong” (৪০০ মিটার দৈর্ঘ্য) ২১৪০০ কনটেইনার নিয়ে ২০১৭ সালে সুয়েজ খাল অতিক্রম করেছে। এই ক্ষুদ্র পরিসরে ছোট খালটি নিয়ে মানব ইতিহাসে যত হৈচৈ হয়েছে অত হৈচৈ আর কোন খালকে নিয়ে হয়েছে বলে ইতিহাসে রেকর্ড নেই। অর্থনৈতিকভাবে এই খাল দখল করে আছে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান। গুরুত্ব পাওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে, স্বল্প সময়ের মধ্যে এই খাল তেল সমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের সাথে ইউরোপের সংযোগ সাধন করেছে। এশিয়ার লোকজন তাদের শিল্পায়নের জন্য ইউরোপের উপর নির্ভরশীল। সুতরাং স্বল্প সময়ে পূর্ব এবং পশ্চিমের মধ্যে ভারী মালামাল সরবরাহের জন্য এই খালের গুরুত্ব অপরিসীম।
সুয়েজ খালের দুই প্রান্তে অবস্থিত লোহিত সাগর এবং ভূমধ্যসাগর হতে উৎপন্ন হয় মুক্তা এবং প্রবাল। লোহিত সাগর মুক্তা শিল্পের জন্য পৃথিবী খ্যাত। ফার্সী এবং উর্দু প্রবাদে আছে, Durr-i-adani এবং Arabic ‘Durr’ Adan (The Pearl of Aden) অর্থাৎ এডেনের প্রসিদ্ধ মুক্তার দিকে এখানে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। ভূমধ্যসাগর হলো অত্যন্ত দামী ও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ লাল প্রবালের (Red Coral) নিবাস। এগুলো আলজেরিয়া, তিউনিশিয়া, সার্দিনিয়ান, সিসিলিয়ান এবং ব্যালোরিয়ারিক দ্বীপগুলোতে পাওয়া যায়। ন্যাপলসের কাছে সিসীলীর Sciacea-তে প্রচুর প্রবাল উৎপাদন হয়। এশিয়া, আফ্রিকা, রাশিয়া, জাপান এবং দক্ষিণ আমেরিকায় ভূমধ্যসাগরের হাল্কা গোলাপী প্রবাল খুব উচ্চমূল্যে বিক্রি হয়।
উপরিউক্ত দুই দরিয়া (ভূ-মধ্যসাগর ও লোহিত সাগর) সনাক্ত করার পর উভয়ের মাঝে বাঁধার স্থান নির্ণয় করতে বেগ পাওয়ার কথা নয়। আর তা হলো সংকীর্ণ ইসতমাস (Narrow Isthmus), যা এই দুই দরিয়ার মাঝে যুগ যুগ করে বাঁধা হিসেবে দাঁড়িয়ে ছিল এবং তা সুয়েজ নামে পরিচিত। এই বাঁধা সম্পর্কে কুরআন বলেছে একদিন এই বাঁধা দূরীভূত হবে এবং দুই পূর্ব ও দুই পশ্চিমের মাঝে দুই দরিয়ার মাধ্যমে পর্বত সদৃশ জাহাজ দ্বারা বানিজ্যের প্রবাহ চলবে। চৌদ্দশত বছর পূর্বে বহুতল বিশিষ্ট পর্বত সদৃশ যান্ত্রিক প্রপেলার জাহাজের কথা চিন্তা করা মানুষের পক্ষে সম্ভব ছিল না। কিন্তু সম্ভব হয়েছে এমন এক কিতাবে যার নাম ‘আল কুরআন’ এবং যিনি তা উচ্চারণ করেছেন তিনি হলেন আরবে জন্ম গ্রহণকারী উম্মি নবী হযরত মুহাম্মদ (সা)। পবিত্র কুরআনের ৫৫নং সূরা আর-রহমানের ১৭-২৪নং আয়াতে আল্লাহপাক বলেন,
১৭.    (তিনিই) দুই পূর্ব এবং দুই পশ্চিমের প্রভু।

رَبُّ الْمَشْرِقَيْنِ وَرَبُّ الْمَغْرِبَيْنِ

১৮.    সুতরাং তোমরা উভয়ে (জ্বীন এবং মানব) তোমাদের প্রতিপালকের কোন অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?

فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَان

১৯.    তিনি প্রবাহিত করেন দুই দরিয়া যারা পরস্পর মিলিত হয়।

مَرَجَ الْبَحْرَيْنِ يَلْتَقِيَانِ

২০.    এ দুটির মাঝে রয়েছে এক অন্তরাল, তারা একের উপর আর এক আপতিত হয় না।

بَيْنَهُمَا بَرْزَخٌ لَا يَبْغِيَانِ

২১.    সুতরাং তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?

فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَان

২২.    এদের মধ্য হতে (দুই দরিয়া হতে) উৎপন্ন হয় মুক্তা এবং প্রবাল।

 يَخْرُجُ مِنْهُمَا اللُّؤْلُؤُ وَالْمَرْجَانُ

২৩.    সুতরাং তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?

فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَان

২৪.    এবং এই সমুদ্রে যাওয়া আসা বড় পর্বত সদৃশ জাহাজগুলো তাঁরই।

وَلَهُ الْجَوَارِ الْمُنْشَآتُ فِي الْبَحْرِ كَالْأَعْلَامِ

কুরআনের আরেক সূরায় (১৮:৬০) হযরত মুসা (আ) এর একটি ঘটনা সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, “স্মরণ কর, যখন মূসা তাঁর সঙ্গীকে বলেছিল, দুই সমুদ্রের মিলনস্থলে না পৌঁছে আমি থামব না অথবা আমি যুগ যুগ ধরে চলতে থাকবো?”
এই দুই সমুদ্র হলো সিনাই উপত্যকায় আকাবা উপসাগর এবং সুয়েজের মিলনস্থল (two arms of the red sea join together, viz; the gulf of aqabah and the gulf of suez, they enclose the sinai peninsula) এবং কুরআনের আর এক সূরায় (২৫:৫৩) আল্লাহ পাক বলেন, “এবং ইহা তিনিই যিনি দুই দরিয়াকে মিলিতভাবে প্রবাহিত করেছেন। একটি সুপেয়, মিষ্ট এবং অপরটি লোনা এবং দুঃসহ এবং উভয়ের মধ্যে তৈরি করেছেন এক অন্তরাল, এবং এক নিষেধ দেয়াল (অনতিক্রম্য)।” সুয়েজ খাল shortcut রুট (৭৫ মাইল) ব্যবহার করে না। চলার পথে উত্তর থেকে দক্ষিণে অধিকন্তু অনেকগুলো হ্রদ ব্যবহার করে। যেমন হ্রদ Manzala,  হ্রদ Timsah, Grent Bitter Lake এবং Little bitter lake। ইহা ওপেন কাট এবং Lock বিহীন খাল। পানামার মত Lock এখানে নাই।
উপরে বর্ণিত সূরা আর রহমানের (৫৫:২০) لَا يَبْغِيَانِ শব্দটি অত্যন্ত তৎপর্যপূর্ণ। এর মূল অর্থ হলো আপতিত হবে না। অর্থাৎ দুই সাগর একে অপরের উপর আপতিত হবে না। সহজ অর্থে এখানে এটাই বোঝাচ্ছে যে এক দরিয়া আর এক দরিয়ার উপর উচ্চতার হেরফেরের জন্য অস্বাভাবিকভাবে পড়বে না।
সুয়েজ খাল খনন, ভূমধ্যসাগর এবং লোহিত সাগর সংযোগের চাঞ্চল্যকর তথ্য এবং কুরআনের ইঙ্গিত:
ইতিহাসের পাতায় এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যে প্রাচীনকাল থেকে এই দুই দরিয়া (ভূমধ্যসাগর এবং লোহিত সাগর) সংযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু এই কাজ সম্পন্ন করলে দুই দরিয়ার (লোহিত সাগর: পূর্বাঞ্চলীয় ভূমধ্যসাগর থেকে ১.২ মিটার বা ৪ ফুট উচ্চতর) উচ্চতার হেরফেরের জন্যে অস্বাভাবিক পানির স্রোতের প্রবাহমান ধারায় এশিয়া বা ইউরোপ পানিতে তলিয়ে যাবে এই ভয়ে করা হচ্ছিল না। কিন্তু কুরআন জানিয়ে দিচ্ছে,“হে মানুষ, এই দুই দরিয়া একটির উপর আরেকটি অপতিত হবে না।”
এই দুই দরিয়া মিলনের ইতিহাস থেকে জানা যায়, মিশরের অধিপতি ফেরআউনের মাথায়ও এই দুই দরিয়া সংযোগের চিন্তা ছিল। তখন মিশর কারিগরী জ্ঞানে অনেক উন্নত ছিল। আজকের পিরামিড তার সাক্ষী। ফেরআউনও নেপোলিয়ানের মত এই ধারণা বাতিল করে যখন তাদের প্রকৌশলী অভিমত দিলেন, অত্যন্ত ভয়াবহ বিপদ সংঘটিত হবে যখন উচ্চ লেভেলের (লোহিত সাগর) সংযোগ হবে নিম্ন লেভেলের (ভূমধ্যসাগর) সাগরের সাথে। তথাপি প্রাচীন মিশরীয় রেকর্ডে দেখা যায়, সম্ভবত দ্বিতীয় রামসাস কর্তৃক একটি খাল খনন করা হয়েছিল যা নীল ডেল্টাকে লোহিত সাগরের সাথে সংযোগ করেছিল। এ ধরণের একটি খাল ১৩৮০ খ্রিষ্টপূর্বে ছিল বলে প্রতীয়মান হয়। এটি পরবর্তীতে দৃশ্যত ব্লক হয়ে যায়। আরো পরে প্রায় ৫২০ খ্রিষ্ট পূর্বে পারস্যের রাজা Darius-ও এটি পুনরায় খনন করেন। রোমান সময়ে এটার কিছু মেরামত হয়েছিল। কিন্তু খালটি সার্বিকভাবে মেরামত এবং পরিষ্কার করে নৌ চলাচলের জন্য যিনি উপযোগী করে তোলেন তিনি হলেন মিশর বিজয়ী এক আরব সেনাপতি আমর ইবনে আস (৬৪১ বা ৬৪২ খৃষ্টাব্দ)। বর্তমান সুয়েজ খাল তৈরির সময় পুরাতন খালের কিছু অংশ ব্যবহৃত হয়েছিল মিষ্টি পানির খাল তৈরিতে।
বর্তমানের ভূমধ্যসাগর এবং লোহিত সাগরের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগের প্রকল্প প্রায় পনের শতাব্দী থেকে বিবেচনায় ছিল। কিন্তু ১৭৯৮ সালেই এর ব্যবহারিক দিক বুঝা যায়, যখন নেপোলিয়ান তার ইঞ্জিনিয়ার Lepere কে তলব করে সম্ভাব্যতা যাচাই করে একটি রিপোর্ট দিতে বলেন। Lepere জরিপের পর মন্তব্য করেন, ভূমধ্যসাগর লোহিত সাগর থেকে ৩৩ ফুট নিচে (১০ মি.)। পরবর্তীতে Lepere’র ভুল ধরা পড়ে। ফ্রান্সের কুটনৈতিক de Lesseps ১৮৪৯ সালে এই সমস্যা নিয়ে কাজ করেন এবং সুয়েজ খাল তৈরির জন্য ১৮৫৪ এবং ১৮৫৬ সালে তিনি মিশরের শাসক সায়িদ পাশার কনসেশন লাভ করেন। ২৫ শে এপ্রিল ১৮৫৯ সালে ভবিষ্যত বন্দর সায়িদ (Port Said) এর শোর (Shore) (কিনারা) থেকে খননের কাজ শুরু হয়। এক হিসেবে ৩০ হাজার দাস (বাধ্য শ্রমিক) ১০ বছর সময়ে (১৮৫৯-১৮৬৯) এ খননের কাজ শেষ করে। বিভিন্ন দেশের ১.৫ মিলিয়ন এর বেশি লোক এখানে কাজ করেন, এবং হাজার হাজার শ্রমিক মারা যায়। ফ্রান্সের নিয়ন্ত্রণে ১৭ নভেম্বর ১৮৬৯ সালে এই খাল খুলে দেয়া হয়। বর্তমানে এই খাল দিয়ে পর্বত সদৃশ জাহাজ চলাচল করে। (৫৫:২৪)। এক হিসেবে ২০১২ সালে সুয়েজ খাল দিয়ে ১৭,২২৫ টি জাহাজ (প্রতিদিন ৪৭৯টি) পারাপার হয়।
পানামা খাল আর সুয়েজ খালের তফাৎ:
চিত্তাকর্ষক ব্যাপার হচ্ছে, পানামা খালের (দৈর্ঘ্য ৫১ মাইল, একদিকে আটলান্টিক অন্যদিকে প্রশান্ত মহাসাগরকে সংযোগ করেছে) মত সুয়েজ খালে জাহাজ চলাচলে কোন প্রতিবন্ধকতা নাই। সুয়েজ খালের জোয়ার-ভাটার (টাইডাল) সীমা হলো- স্প্রিং টাইডে ‘পোর্ট সায়িদে’র উত্তরে পানির উচ্চতার স্তর হয় ১ ফুট ৬ ইঞ্চি, আর দক্ষিণ সুয়েজে হয় ৬.৫৬ ফুট। হাই টাইড (জোয়ার) দুই জায়গায় একই সময়ে হয় না কিন্তু দুই শেষ মাথার মধ্যে পানির স্তরের সর্বোচ্চ ব্যবধান ৪-৬ ফুটের বেশি হয় না। তাই পানামা খালের মত সেখানে জাহাজ চলাচলের জন্যে কোন লকের প্রয়োজন হয় না। পানামা খালের দুই মাথায় (পানামা এবং ক্লোন) যদিও গড় সামুদ্রিক লেভেল একই কিন্তু টাইড এর উঠা নামার লেভেল ভিন্ন, ক্লোনে ২.৫ ফুট এবং পানামায় ২১ ফুট। সমুদ্রগামী নাবিকরা বলেন পানামায় জাহাজ চালানো অত্যন্ত কষ্টের কাজ কারণ জাহাজকে শিকল দিয়ে বাঁধতে হয় এবং লকের মাধ্যমে খুবই কষ্ট সহকারে খাল অতিক্রম করতে হয়। যার প্রয়োজন সুয়েজ খালে হয় না। পানির (উচ্চতার লেভেলের ভিন্নতার কারণে সুয়েজের একদিকের (উত্তরের) দরিয়া (ভূমধ্যসাগর) আরেক দিকের (দক্ষিণের) দরিয়ার (লোহিত সাগর) উপর আপতিত হয় না, ভিতরে রয়েছে এক বেরিয়ার (বরজাখুন) (৫৫:২০)।
চৌদ্দশত বছর পূর্বে কুরআনে বর্ণিত ভবিষ্যতবাণী এখন বাস্তবে:
১৪’শ বছর পূর্বে পবিত্র কুরআন জানিয়ে দিয়েছে, এই দুই সমুদ্রে পর্বত সদৃশ জাহাজ সহজে চলাচল করবে (৫৫:২৪)। সংযোগ স্থাপিত হবে দুই পূর্ব এবং দুই পশ্চিমের মাঝে। সুয়েজ খাল পূর্ব এবং পশ্চিমের মাঝে হাজার হাজার মাইল (৫৫০০ মাইল, লন্ডন থেকে আরব সাগর) নৌপথ কমিয়ে দিয়েছে। এটা আল্লাহর এক বিরাট অনুগ্রহ। সুয়েজ খাল না হলে পুরো দক্ষিণ আফ্রিকার‘উত্তমাশা অন্তরীপ’ ঘুরে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে পণ্যবাহী জাহাজকে চলাচল করতে হতো। সময় অনেক বেশী লাগতো।
উপসংহার:
সূরা আর-রাহমানে আল্লাহ পাক বলেন, “তোমরা উভয়ে (জ্বীন ও ইনসান) তোমাদের প্রতিপালকের কোন অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?”
আল্লাহর দেয়া মহা অনুগ্রহে আজ এই সাগরে পর্বত সদৃশ জাহাজ সহজে চলাচল করে। মানবজাতির সার্বিক জীবনের কর্মকান্ড সঠিক এবং সুন্দরভাবে পরিচালিত হওয়ার জন্য পৃথিবীর বুকে এক অলৌকিক গ্রন্থ আল-কুরআন আল্লাহ পাকের বিরাট অনুগ্রহ। এই আল কুরআনকে বাদ দিয়ে মানুষ বের করেছে মনগড়া মতবাদ এবং মানবতার মুক্তির উপায়। আর এ জন্যই একে একে সব উপায় উপকরণ অচল হয়ে পড়েছে। মানবকুল আজ অশান্তির অন্ধকারে নিমজ্জিত। সন্ত্রাসের দাবানল, ড্রাগের দাবানল, ক্ষমতার দাবানল, ব্যাভিচার-অবিচারের দাবানলে আজ পৃথিবীর শান্তি জ্বলে পুড়ে ছারখার হচ্ছে। দিশেহারা মানুষ আজ পাগল প্রায়। আল্লাহর দেয়া মহা অনুগ্রহ চলার পথের সার্বিক দিশা আল-কুরআনকে অবমাননা, অবহেলা তথা প্রাত্যহিক জীবনের যাবতীয় ক্রিয়াকর্মে অস্বীকার (অনুপস্থিত) করার পরিণাম যে কত ভয়াবহ হতে পারে তা আজকের অশান্ত পৃথিবীর সকল স্তরের মানুষের তথা রাষ্ট্রীয় কর্ণধারদের অসহায় অবস্থানই সত্য বিবর্জিত ছল-চাতুরতা প্রমাণ করে।
আসুন আমরা সবার সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত আল-কুরআনকে বুঝি এবং সার্বিক কর্মকান্ডকে কুরআনের রঙে রঞ্জিত করি। তাহলেই কেবল ইহকাল এবং পরকালে আল্লাহর অনুগ্রহকে স্বীকার করা হবে এবং শান্তির সার্বিক আস্বাদ পাওয়া যাবে। কেবল তখনই আমরা সাগরের অন্ধকার সদৃশ অচল পথ থেকে আলোর পথে আসতে পারি এবং কেবল তখনই দাবি করতে পারি আমরা আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পনকারী বা মুসলমান।

তথ্য সংগ্রহ ও তথ্যপঞ্জী:
১।    Dewan, J. (editor) 1999; Islam and Science: Seas and Oceans;ÔIqraÕ 19(2): 19-20, Mag. South Bay Islamic Association, San Jose Ca 95112, USA.
২।    Khan, K.M. Raisuddin 1988; The Quran on the Conception of the Suez Canal; The Bangladesh Observer, Friday,22 January, Dhaka.

৩।    Ali, Abdullah Yusuf (Translation and Commentary) 1989, The Holy Quran, Amana Corp. Brentwood, Maryland, USA.

৪।    ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ১৯৮৩, কুরআনুল করিম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here