ভারতে বিতর্কিত ও ধর্মভিত্তিক নাগরিকত্ব আইন বাতিলের দাবিতে এখনও উত্তাল দিল্লির শাহিনবাগ। টানা দেড় মাস ধরে এখানে বিক্ষোভ করছেন নারী আন্দোলনকারীরা।
আন্দোলনের শুরু থেকেই শামিল ছিলেন নাজিয়া। কনকনে শীতের রাতে কোলের শিশুসন্তানকে নিয়েই প্রতিদিন বিক্ষোভে যোগ দিতেন তিনি।
সারারাত বাড়ির বাইরে থাকার কারণেই হয়তো ঠাণ্ডা লেগে যায় চার মাসের শিশুটির।
গত ৩০ জানুয়ারি রাতে ঘুমের মধ্যেই মারা যায় মুহাম্মদ। এতে ভেঙে পড়েন সন্তানহারা নাজিয়া। তবু অবিচল। সন্তানকে কবর দিয়ে শপথ নিয়েছেন ফের শাহিনবাগে যাবেনই।
নাজিয়া বলেন, ভবিষ্যতের জন্য আমার অন্য ছেলেমেয়েগুলোর কথা ভেবেই আমাকে ফের প্রতিবাদে শামিল হতে হবে।
নাজিয়া ও তার স্বামী মো. আরিফ থাকেন দিল্লির বাটলা হাউস এলাকার একটি বস্তিতে। অভাবের সংসারে শিশু মুহাম্মদ ছাড়া তাদের একটি পাঁচ বছরের মেয়ে ও এক বছরের ছেলে রয়েছে।
নাজিয়ার স্বামী আরিফ পেশায় রিকশাচালক। স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে সেলাইয়ের কাজও করেন।
নাজিয়ার এক প্রতিবেশী সাজিয়া জানান, নাজিয়ার মা ও স্বামী তাকে শাহিনবাগে যেতে নিষেধ করতেন। কিন্তু তার পরও প্রতিদিন দুই কিলোমিটার দূরের সমাবেশে যেতেন নাজিয়া।
শুধু যে নিজে যেতেন তাই নয়, গলির সব নারীকে ডেকে নিয়ে যেতেন। নাজিয়ার এমন সাহসী উদ্যোগে আরিফও মাঝেমধ্যে তাদের রিকশা করে পৌঁছেও দিতেন বলে জানান সাজিয়া।
এদিকে সন্তানের মৃত্যুর জন্য সিএএ-এনআরসিকেই দায়ী করছেন আরিফ। তিনি বলেন, ‘সরকার যদি এ রকম আইন না আনত, নারীরা প্রতিবাদে নামত না। আর আমার স্ত্রী সেই বিক্ষোভে যোগ দিতেও যেত না। আমার ছেলে তা হলে আজ বেঁচে থাকত।’
তবে ছেলে মারা যাওয়ার পর ফের শাহিনবাগে যাওয়ার শপথ নেয়ায় আশ্চর্য হয়েছেন নাজিয়ার আত্মীয়-বন্ধুরা।
কিন্তু নাজিয়া তার সিদ্ধান্তে অবিচল। তিনি বলেন, ‘ধর্মের নামে আমাদের মধ্যে বিভেদ করা হবে কেন? এটি কখনই মেনে নেয়া যায় না। আমি চাই– আমার সন্তানদের, এ দেশের সব শিশুর, ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত থাকুক। সে জন্যই আমি সমাবেশে যাচ্ছিলাম। সে জন্যই ফের যাব।’
তবে নাজিয়া জানিয়েছেন, এবার আর কোনো সন্তান নিয়ে নয়, একাই যাবেন শাহিনবাগে। সূত্র: আনন্দবাজার।