জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক,
ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির দুই মেয়রপ্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারে হামলা ও সংঘর্ষের পরও ভোটের পরিবেশ নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা।
সোমবার রাজধানীর টিকাটুলীতে সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজে ইভিএমের ভোটগ্রহণ প্রশিক্ষণ পরিদর্শনে শেষে সাংবাদিকদের সামনে তিনি এ দাবি করেন।
সিইসি বলেন, দুয়েকটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ছাড়া ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পরিবেশ কমিশনের নিয়ন্ত্রণে আছে।
“নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি। কোথাও কোথাও সামান্য ঘটনা ঘটেছে- সেটা ধর্তব্য নয়।”
গত ১০ জানুয়ারি দুই সিটিতে ভোটের প্রচার শুরুর পর থেকেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ও দলের সমর্থিত কাউন্সিল প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করে আসছেন বিএনপির মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা।
এসব বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে জানালেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে তাদের অভিযোগ।
গাবতলীতে তাবিথের প্রচারে হামলা
এর মধ্যেই গত মঙ্গলবার দারুস সালাম থানাধীন পর্বতার কলাবাজার এলাকায় প্রচারে গিয়ে হামলার মুখে পড়েন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল।
পুলিশের উপস্থিতিতে ৯ নং ওয়ার্ডে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী মুজিব সারোয়ার মাসুমের কর্মী-সমর্থকরা তার উপর চালানো এই হামলায় জড়িত বলে ছিলেন তার অভিযোগ।
এর কয়েক দিনের মাথায় রোববার রাজধানীর গোপীবাগে নিজ বাড়িতে ফেরার সময় বিএনপির মেয়রপ্রার্থী ইশরাক হোসেনের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
গোপীবাগে ইশরাকের প্রচারের মধ্যে সংঘর্ষ
বিএনপি কর্মীরা বলছেন, ইশরাক মিছিল নিয়ে গোপীবাগে নিজের বাসার দিকে যাওয়ার সময় সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজের মোড়ে ‘আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা’ তাদের ওপর হামলা করে।
এদিকে নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালন নিয়ে খোদ কমিশনেই ক্ষোভ রয়েছে। নির্বাচন আয়োজনের শুরুতেও অনিয়ম ঠেকাতে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের তৎপরতাহীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।এখন তিনি বলছেন, ইসির ভেতরেই ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই’ তাহলে ভোটে সমান সুযোগ কীভাবে থাকে।
সিইসি বলেন, “৩০ জানুয়ারি মক ভোটিংয়ের মাধ্যমে ইভিএমে ভোটদান পদ্ধতি ভোটারদের কাছে তুলে ধরা হবে।
“মক ভোটিং হবে, ভোটাদের আমরা আহ্বান জানাব, আপনারা দেখেন কীভাবে ইভিএমে ভোট দিতে হয়, কীভাবে চালু ও ভোট শেষ করতে হয়।”
লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড রয়েছে: সিইসি
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ রয়েছে বলে দাবি করেছেন সিইসি নূরুল হুদা।
বিএনপির পক্ষ থেকে বারবার অভিযোগ করা হয়েছে, ভোটের মাঠে সবার জন্য সমান সুযোগ নেই। আচরণবিধি লঙ্ঘন হলেও প্রতিকার নেই। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের অনেকেরই অননুমোদিত সাইজের পোস্টার সর্বত্র; ফুটপাতে নির্বাচনী ক্যাম্প ১০০টির বেশি।
এ বিষয়ে বিকালে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে সিইসি বলেন, “ইসির কাছে এই রকম কোনো তথ্য নেই (ফুটপাতে ১০০ নির্বাচনী ক্যাম্প)। তবে রাস্তা ও ফুটপাতের উপর যদি কোনো ক্যাম্প থাকে, তাহলে তা উঠিয়ে দেওয়া হবে।”
সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের বিষয়টিতে পুলিশ নজর রাখছে বলে জানান তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে নূরুল হুদা বলেন, “নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটনার কোনো আশঙ্কা নাই। পুলিশের প্রতি আমাদের নির্দেশনা রয়েছে, কোনো সন্ত্রাসী কার্যকলাপ যাতে পরিচালিত না হয়।”
তিনি বলেন, “বিএনপি বলেছে তাদের প্রার্থীদের হয়রানি করা হচ্ছে। তবে হয়রানি করার মতো কোনো ধরনের আলামত আমরা দেখছি না।”
গোপীবাগে সংঘাতের ঘটনায় পুলিশ মামলা নেয়নি বলে বিএনপির অভিযোগ।
সিইসি বলেন, “এ বিষয়ে আমি সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে বিএনপি চলে যাওয়ার সাথে কথা আমি কনফারেন্স রুমে বসেই কথা বলেছি। কিন্তু ওসি সাহেব বলেছেন, বিএনপি মামলা করতে আসেনি। আওয়ামী লীগ মামলা করেছে। তবে ক্রিমিনাল অফেন্স হয়ে থাকলে মামলা করতেই পারে। আর মামলা হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা হবে।”
সোমবার বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল সিইসির সঙ্গে দেখা করে নানা অভিযোগ জানিয়ে আসেন। পরে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলও যায় ইসিতে।
সিইসি বলেন, “আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল বলেছেন, গতকালকের ঘটনায় তারা বিএনপিকে দায়ী করেছেন। তারা আরো বলেছেন, নির্বাচনের সামনে তারা ঢাকাতে সন্ত্রাসীদের জমায়েত করেছে। তারা নির্বাচনের সময় সংঘাত ঘটাতে পারে। তাই ইসিকে ব্যবস্থা নিতে বলেছে। আমরা বলেছি, এই ধরনের ঘটনায় সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
“দুই দলই এই ধরনের কথা বলেছে, এগুলো সিরিয়াস কিছু না,” বলেন নূরুল হুদা।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “৫৪ লাখ ভোটারের মধ্যে দুটি ঘটনা ঘটেছে এত বড় শহরে। ফলে এই দুটি ঘটনা নিয়ে নির্বাচন বানচাল কিংবা নির্বাচন বিনষ্ট করার কোনো কারণ ঘটেনি।”
গোপীবাগের ঘটনায় দুই দল দুই ধরনের অভিযোগ দিয়েছে, কমিশনের কাছে কী মনে হয়েছে- এই প্রশ্ন করেন এক সাংবাদিক।
জবাবে সিইসি বলেন, “ফৌজদারি অপরাধের ব্যাপারে আমরা কিছু বলতে পারি না। তবে স্থানীয়ভাবে তদন্ত করতে সময় লাগবে। সেজন্য রিটার্নিং কর্মকর্তা, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।
“তবে এখনও প্রতিবেদন আসেনি। প্রতিবেদন এলে প্রার্থী দায়ী থাকলে তাকে নোটিস দেওয়া হবে। আর অন্যরা দায়ী থাকলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”