নিউজ ডেস্ক,
চট্টগ্রাম নগরীতে শিক্ষার্থীদের চলাচলের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার বিআরটিসির ১০টি দোতলা বাস উদ্বোধন করেছেন প্রয়াত সিটি মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর পুত্র শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

শনিবার সকালে এম.এ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেসিয়াম মাঠে এক অনুষ্ঠানে বাসগুলোর উদ্বোধন করা হয়।

রোববার থেকে বিভিন্ন রুটে পাঁচটি করে বাস চলবে।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, “১৭ মার্চ মুজিব বর্ষ শুরু হবে। আমরা ক্ষণগণনা করছি। সেই মুহূর্তে তোমাদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই উপহার দিয়েছেন। আমরা সবাই সেই উপহার দেখতে এসেছি।

“তৎকালীন ছাত্রলীগ (নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময়) নেতৃবৃন্দের সাথে তোমরাও চেয়েছিলে স্কুলে আসা-যাওয়ার জন্য বাস। প্রধানমন্ত্রী মাতৃস্নেহে তা গ্রহণ করে তোমাদের জন্য বাস দিয়েছেন। আমি প্রধানমন্ত্রীকে জানাব, তার ভালোবাসার নিদর্শন তোমরা দেখভাল করছ।”

এই বাসগুলোতে ‘সততা কাউন্টার’ থাকবে, যাতে শিক্ষার্থীরা প্রতিবার যে কোনো গন্তব্যে চলাচলের জন্য ৫ টাকা করে ভাড়া দেবেন।

শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল বলেন, “সততার চর্চা বিদ্যালয় থেকে শুরু করতে হবে। ভবিষ্যতে একদিন বড় পদে সততার সাথে তোমরা যেন তোমাদের দায়িত্ব পালন করতে পার। যে বিশ্বাস ও আস্থা প্রধানমন্ত্রী রেখেছেন তার প্রতিদান তোমরা দেবে।”

নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছাত্রনেতাদের ধন্যবাদ দিয়ে তিনি ‘গঠনমূলক রাজনীতি’ করার আহ্বান জানান।

প্রাতিষ্ঠানিক উচ্চ শিক্ষার পাশাপাশি প্রযুক্তিগত ও কারিগরি দক্ষতা অর্জনে শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে নওফেল বলেন, লেখাপড়া শেষ করে বড় পদে যেতে হবে, বড় চাকরি পেতে হবে, সেটা সংকীর্ণ চিন্তা।

“বড় হয়ে সাধারণ জীবন যাপন করবেন, কোন পেশাকে ছোট করে দেখবেন না। বিদেশে পড়ার সময় আমি তিনটা চাকরি করেছি। এটা দেশে আমাদের সন্তানদের অনেকের করতে হয় না। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর শিয়ালদহ স্টেশনে আমার বাবা কাগজ বিক্রি করেছেন। পরে আবার দেশের জন্য কাজ করেছেন।”

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন বলেন, মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন চট্টগ্রাম সবার আগে। আসলেই চট্টগ্রাম সবসময় এগিয়ে।

“এটা তোমাদের অর্জন। সারাদেশে যখন আন্দোলন তখন তোমরা কিছু দাবি দিয়েছিলে তারই একটি এই দ্বিতল বাস। প্রতিটি বাসে ছয়টি করে সিসি ক্যামরা থাকবে। আশা করি নিজ দায়িত্বে সততা বক্সে ভাড়া দিবে। নিজেদের সম্পদ নিজেরা ধরে রাখবে।”

বিশেষ অতিথি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম ফারুক বলেন, “দেশে এই প্রথম স্কুলছাত্রদের জন্য বাস দিয়ে তোমাদের দাবি পূরণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। গুণগত শিক্ষার পথে আমরা একধাপ এগিয়ে গেলাম।

“তোমরা এমন ভাবে বাসগুলো দেখবে যাতে এই দৃষ্টান্ত দিয়ে সারাদেশের শিক্ষার্খীদের জন্য আরও বাস চাইতে পারি “

অনুষ্ঠানে সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী রিহাত বিন মহি বলেন, “আমাদের আর টেম্পোর পিছনে ঝুলে, বাসে দাঁড়িয়ে থেকে স্কুলে যেতে হবে না। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। আশাকরি তিনি চট্টগ্রামে আরো কিছু স্কুল বাস দেবেন। আমরা ভালো করে লেখাপড়া করব।”

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আবু হাসান সিদ্দিকী, বিআরটিসি’র ম্যানেজার এম জে রহমান এবং স্পন্সর প্রতিষ্ঠান জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলমাস শিমুল।

উপস্থিত ছিলেন নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে চট্টগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি ও মিনহাজ উদ্দিনসহ ছাত্রনেতারা।

রোববার সকাল থেকে নগরীর প্রথম রুটের পাঁচটি বাস বহদ্দারহাট মোড় থেকে ছেড়ে বাদুরতলা, মুরাদপুর, চকবাজা, গণি বেকারি, জামালখান, চেরাগি পাহাড়, আন্দরকিল্লা, কোতোয়ালী মোড় হয়ে নিউমার্কেট যাবে।

দ্বিতীয় ‍রুটের বাকি পাঁচটি বাস অক্সিজেন মোড় থেকে ছেড়ে মুরাদপুর, দুই নম্বর গেট, জিইসি মোড়, ওয়াসা, টাইগার পাস হয়ে আগ্রাবাদে যাবে। বাসগুলো একই পথে ফিরবে।

৭৫ আসন বিশিষ্ট বাসগুলোর নিচতলা ছাত্রীদের এবং দ্বিতীয় তলা ছাত্রদের জন্য নির্ধারিত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here