দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে চালু হচ্ছে ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট (ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট)। ২২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।

এর আগে গত বছরের ১ জুলাই এবং ২৮ নভেম্বর দুই দফায় দিনক্ষণ ঠিক করেও ই–পাসপোর্টের কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি।

পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্র জানায়, শুরুতেই ঢাকার আগারগাঁও, যাত্রাবাড়ী এবং উত্তরা পাসপোর্ট অফিস থেকে ই-পাসপোর্ট বিতরণ করা হবে। এ সময়ে ই–পাসপোর্টের পাশাপাশি মেশিন রিডেবল পাসপোর্টও চালু থাকবে।

ই–পাসপোর্ট প্রকল্প
পাসপোর্ট পাওয়া নিয়ে বিড়ম্বনার শেষ নেই সাধারণ মানুষের । অভিযোগ রয়েছে, জরুরি ফি দেওয়ার পরও সময়মতো পাসপোর্ট মিলে না। কেন সহজে পাসপোর্ট পাওয়া যায় না, তারও কোন সঠিক উত্তর পান না।

পাসপোর্ট নিয়ে জনগণের দুভোর্গ কমাতে বর্তমান সরকার উদ্যােগ নেয় ই–পাসপোর্ট চালুর। ২০১৬ সালের ২৪ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ই-পাসপোর্ট প্রদানের ঘোষণা দেন। এ জন্য জার্মানির প্রতিষ্ঠান ভেরিডসের সঙ্গে চুক্তি করে বহির্গমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৪ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা।

চুক্তি অনুসারে ৩ কোটি ই–পাসপোর্ট সরবরাহ করবে প্রতিষ্ঠানটি। যার মধ্যে ২০ লাখ জার্মানি থেকে তৈরি হয়ে আসবে, আর বাকি ২ কোটি ৮০ লাখ পাসপোর্ট বই মুদ্রণের জন্য কাঁচামাল সরবরাহ করবে। এই বই ছাপার যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজও ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে।

কেমন হবে ই–পাসপোর্ট
ই–পাসপোর্ট ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা প্রকল্প সূত্র জানায়, সাধারণ পাসপোর্ট থেকে ই-পাসপোর্টের পার্থক্য হলো, এতে মোবাইল ফোনের সিমের মতো ছোট ও পাতলা আকারের ইলেকট্রনিক মাইক্রোপ্রসেসর চিপ যুক্ত থাকবে। এই চিপ পাসপোর্টের একটি বিশেষ পাতার ভেতরে থাকবে। এই পাতা সাধারণ পাতার চেয়ে মোটা হবে। চিপে সংরক্ষিত বায়োমেট্রিক তথ্য বিশ্লেষণ করে পাসপোর্ট বহনকারীর পরিচয় শনাক্ত করা যাবে।

ই-পাসপোর্টের নমুনা
এতে করে একজনের নাম–পরিচয় দিয়ে অন্য নামে পাসপোর্ট কেউ করতে পারবে না। এই পাসপোর্ট নকল হওয়ার আশঙ্কাও থাকবে না। সাধারণ পাসপোর্টের তুলনায় ই–পাসপোর্টে নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যও থাকছে বেশি। এতে ৩৮ ধরনের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য থাকবে, যার অনেক বৈশিষ্ট্য থাকবে লুকানো অবস্থায়। ই–পাসপোর্ট করার সময় মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের (এমআরপি) ডেটাবেইসে পাওয়া তথ্যগুলো ই-পাসপোর্টে স্থানান্তর করা হবে।

ধরণ ও ফি
ই–পাসপোর্ট হবে দুই ধরণের। একটি ৪৮ পাতার, অন্যটি ৬৪ পাতার। সাধারণ, জরুরি ও অতি জরুরির জন্য ফি হবে তিন ধরনের। এবার দুই দিনের মধ্যে পাসপোর্ট দেওয়ার নিয়ম চালু হচ্ছে। এ জন্য ফিও বেশি গুনতে হবে।

সাধারণ পাসপোর্টের মতো ই–পাসপোর্টের আবেদনও অনলাইনে পাওয়া যাবে। চাইলে পিডিএফ ফরম ডাইনলোড করে হাতেও পূরণ করা যাবে। ফরম পূরণের সময় ছবি ও সত্যায়ন করা লাগবে না। তবে বয়স্কদের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র ও অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে জন্মনিবন্ধন সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

আবেদন প্রক্রিয়া
আবেদনপত্র গ্রহণের সময় আবেদনকারীর ১০ আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের ছবি নেওয়া হবে। সেই সব তথ্য চিপে যুক্ত হবে। ইমিগ্রেশন পুলিশ বিশেষ যন্ত্রের সামনে পাসপোর্টের পাতাটি ধরতেই সব তথ্য বেরিয়ে আসবে।

বিমানবন্দরে স্বয়ংক্রিয় গেট
এরই মধ্যে ই–পাসপোর্ট ব্যবহারের জন্য হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বয়ংক্রিয় গেটও এর মধ্যে স্থাপন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব বন্দরে এই গেট চালু করা হবে। মাত্র ১৫ সেকেন্ডে এই স্বয়ংক্রিয় গেট দিয়ে ইমিগ্রেশন পার হওয়ার সুযোগ পাবেন ই-পাসপোর্টধারী বিমানযাত্রীরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here