স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি প্রতিরোধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ২০১৮ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে সে খাতে দুর্নীতির ১১টি উৎস চিহ্নিত করে। প্রাথমিকভাবে প্রতিবেদনটি বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের কাছে হস্তান্তর করেন দুদকের কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মোজাম্মেল হক খান। এসব বন্ধে এতে যুক্ত করা হয়েছে ২৫ দফা সুপারিশ। প্রতিবেদনটি ইতোমধ্যেই রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে হস্তান্তর করেছেন দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।
সেই প্রতিবেদনে উল্লিখিত দুর্নীতির উৎসগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো -নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিসংক্রান্ত; প্রত্যন্ত এলাকায় পেশাগত দায়িত্ব পালনে চিকিৎসকদের অনাগ্রহ; সরকারি হাসপাতালে নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি ও প্রশিক্ষণার্থী বাছাইয়ে নীতিমালা অগ্রাহ্য; একই কর্মস্থলে দীর্ঘদিন থাকায় স্থানীয় দালালদের সমন্বয়ে সংঘবদ্ধ চক্র গড়ে তোলা; উপজেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালে যন্ত্রপাতি চালনায় দক্ষ জনবল নিয়োগ না হলেও যন্ত্রপাতি সরবরাহ; যন্ত্রপাতি সরবরাহ ও মেরামত ব্যয়ের নামে অর্থ আত্মসাৎ; প্রাইভেট হাসপাতালে রোগীদের নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে দালালচক্রের দৌরাত্ম্য; সরকারি ওষুধ রোগীদের না দিয়ে বিক্রি করে দেওয়া; নিম্নমানের/অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ক্রয় ইত্যাদি।
উক্ত দুর্নীতি রোধে প্রস্তাবিত সুপারিশগুলো হচ্ছে-সরকারি হাসপাতালের উন্মুক্ত স্থানে সিটিজেন চার্টার; ওষুধ ও যন্ত্রপাতি ক্রয় কমিটিতে সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্তকরণ; বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে যন্ত্রপাতি গ্রহণ ও এগুলো ব্যবহারে দক্ষ জনবল নিয়োগ; হাসপাতালগুলোতে সরকার নির্ধারিত ওষুধ এবং রোগ নির্ণয়সংক্রান্ত পরীক্ষার মূল্যতালিকা জনসমক্ষে প্রদর্শন; দালালদের দৌরাত্ম্য বন্ধে কঠোর নজরদারি; যেসব হাসপাতাল-ক্লিনিকে ডাক্তার, নার্স ও টেকনিশিয়ান নেই, সেগুলোসহ অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া; বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকের অনুমোদনে পর্যাপ্ত স্থায়ী চিকিৎসক, কর্মচারী সংস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত করা; স্বাস্থ্যবিষয়ক জনশিক্ষা কার্যক্রমে জেলা-উপজেলা প্রশাসনসহ অন্যান্য নির্বাহী দপ্তরকে অবহিতকরণ; বিল-ভাউচার ইত্যাদি সিভিল সার্জনসহ কমপক্ষে দুজন কর্মকর্তার মাধ্যমে যাচাই-বাছাই; নকল ওষুধ তৈরি বন্ধে সার্ভেইলেন্স টিম গঠন; চিকিৎসকদের জন্য সুনির্দিষ্ট বদলি নীতিমালা প্রণয়ন এবং একই কর্মস্থলে তিন বছর পূর্ণ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বদলি; হাসপাতালের রাজস্ব আদায় কার্যক্রম অটোমেশনের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান নিশ্চিত করা; চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশন লেখায় পরিচ্ছন্নতা; নীতিমালার মাধ্যমে বিশেষজ্ঞদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস ফি সুনির্দিষ্টকরণ; ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের তরফে দেওয়া উপঢৌকনের বিনিময়ে সেই প্রতিষ্ঠানের ওষুধ গ্রহণে নির্দেশনা বন্ধের ব্যবস্থা নেওয়া; সকল চিকিৎসকের প্রাত্যহিক রোগী দেখার সংখ্যা নির্ধারণে নীতিমালা প্রণয়ন; রোগীর স্বাস্থ্যবীমা চালু করা; স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর-এ দুই ভাগে রূপান্তর করা; সরকারি চিকিৎসকদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে পিএসসি, বেসরকারি চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে মহাপরিচালক (স্বাস্থ্য) ও পিএসসির প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত কমিটির মাধ্যমে সুপারিশ প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ; প্রেসক্রিপশনে ওষুধের ব্র্যান্ড (প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান থেকে দেওয়া নাম) নাম না লিখে জেনেরিক নাম লেখা বাধ্যতামূলক করা; চিকিৎসকদের শিক্ষানবীসকাল দুবছর করা এবং এর মধ্যে গ্রামে এক বছর বাধ্যতামূলক করা; তিন মাস অন্তর চিকিৎসকদের নৈতিকতামূলক প্রশিক্ষণ; প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি নিষিদ্ধ করা; ফার্মাসিস্ট ছাড়া ওষুধের দোকান পরিচালনা নিষিদ্ধ করা; হাসপাতালে হটলাইন রাখা; ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরিদর্শনকালে সরকারি বরাদ্দের অতিরিক্ত আপ্যায়ন সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা প্রভৃতি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here