আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে সম্পূরক প্রশ্ন করতে গিয়ে তিনজন সাংসদ দাবি জানান যে সৌদি আরবে নারী গৃহকর্মীদের শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে সৌদি আরবে নারী গৃহকর্মী পাঠানো বন্ধ করার দাবি উঠেছে জাতীয় সংসদে।
জবাবে মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেছেন, সৌদি আরবে নারী গৃহকর্মীদের সমস্যার বিষয়টি নিয়ে সরকারও চিন্তিত। তাঁদের প্রশিক্ষণসহ নানা সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমে পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর একেবারেই সম্ভব না হলে তখন নারী কর্মী না পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
সম্পূরক প্রশ্নে জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘বলা হচ্ছে রিক্রুটিং এজেন্সি বিদেশে কর্মী পাঠায়। তাহলে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বটা কী? মা-বোনদের আমরা পাঠিয়ে দিচ্ছি। ওখান থেকে যৌন নির্যাতনসহ নানা রকম অন্যায়-অত্যাচারের শিকার হয়ে অবশেষে লাশ হয়ে ফিরে আসেন। তাঁদের সবারই পোস্টমর্টেমে লেখা থাকে স্বাভাবিক মৃত্যু। সবাই একই রকম রিপোর্ট। এটা তারা (সৌদি আরব) করে। ওখানে পোস্টমর্টেম যে হয়, সেটাও বাংলাদেশ দূতাবাস দেখে না। মন্ত্রণালয় কোনো পদক্ষেপ নেয় না। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো পাঠিয়েই খালাস।’
ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘এভাবে আমাদের মা-বোনদের নিয়ে কি ব্যবসা করতে পারি? স্বাধীন দেশ হিসেবে আমাদের সম্মান আছে, ইজ্জত আছে। আমরা তো এখন তলাবিহীন ঝুড়ি নই। কেন কয়েকটি টাকার জন্য তাঁদের পাঠাতে হবে? অবিলম্বে এটা বন্ধ করতে হবে।’
প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রীর উদ্দেশে ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘একেকজন নারী ফেরত আসে, আপনি (মন্ত্রী) দেখেন না তাদের ওপর কী অন্যায়-অত্যাচার করা হয়? আমাদের ঘরে মা-বোন নেই? কেন কয়েকটি টাকার জন্য তাদের পাঠাব? আইন সংশোধন করে নারীদের সৌদি যাওয়া সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে। আমাদের দূতাবাস কোনো পদক্ষেপ নেয় না। মাননীয় মন্ত্রী কোনো খবর রাখেন না। পাঠিয়েছে দালালেরা, আর উনি (মন্ত্রী) খালাস। দালালেরা নিয়ে তাদের হাতে ছেড়ে দিচ্ছে। বেচাকেনা হচ্ছে দস্তুরমতো। মেয়েদের হাট বসে, কে কত দাম দিয়ে কিনে নিয়ে যাবেন। আমরা কেন এটার খবর রাখি না? স্পষ্টভাবে জানতে চাই, এটা অবিলম্বে বন্ধ হবে কি না। মা-বোনদের পাঠিয়ে দেশ বিক্রির টাকা আমাদের দরকার নেই। বন্ধ করবেন কি না?’
জবাবে মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, মন্ত্রী বা মন্ত্রণালয় কিছু করে না—এটা মাঠের বক্তৃতার মতো। গত কয়েক মাসে ১৬০টি ট্রাভেল এজেন্সির লাইসেন্স স্থগিত, তিনটি লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। দোষীদের জরিমানা করা হয়েছে। সরকার জিরো টলারেন্সে আছে। তিনি বলেন, ‘আমরা আইন করে দিচ্ছি, যারা বিদেশ পাঠাবে, সৌদি আরবে ওদের কাউন্টার পার্ট রিক্রুটিং এজেন্সির সম্পূর্ণ ডিটেইলস আমাদের দিতে হবে, যাতে আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারি।’
এর আগে জাতীয় পার্টির আরেক সাংসদ মুজিবুল হক বলেন, সৌদি আরবে গৃহকর্মীদের ওপর নানা ধরনের অত্যাচার ও যৌন নির্যাতন করা হয়। বহির্বিশ্বে নারী কর্মী পাঠানো নিয়ে নানা প্রশ্ন আসছে। তিনি নারী কর্মীদের যৌন নির্যাতন বন্ধ করে ইজ্জত–সম্মান নিয়ে চাকরিসহ বেতন নিশ্চিত করার পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চান।
জবাবে মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, গৃহকর্মীর বিষয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ে বেশি সরকার চিহ্নিত। এ ব্যাপারে অনেক পদক্ষেপ ইতিমধ্যে নেওয়া হয়েছে। কয়েক দিন আগে ঢাকাস্থ সৌদি আরব দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে ডেকে এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সৌদি আরবে রাষ্ট্রদূতকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ওই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এগুলো তোলার জন্য। ২৬ থেকে ২৭ নভেম্বর জয়েন্ট টেকনিক্যাল গ্রুপের বৈঠকেও এই প্রশ্নগুলো তোলা হবে।
মন্ত্রী বলেন, নারী কর্মীদের কোনো ব্রিফিং, প্রশিক্ষণ না দিয়ে পাঠানো হয়, সেটা দেখতে হবে। এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে, গৃহকর্মী পাঠাতে হলে ন্যূনতম এক মাসের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। পাশাপাশি আইনি ব্যবস্থাসহ তাঁদের অধিকার ও সুরক্ষার বিষয়ে অবহিত করার কাজ শুরু হয়েছে। তিনি আশা করেন, এই সমস্যার সমাধান হবে।
প্রশিক্ষণ দিয়ে নারী শ্রমিক পাঠানোর বিষয়ে মন্ত্রীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সম্পূরক প্রশ্নে গণফোরামের সাংসদ সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ বলেন, নির্যাতন বন্ধে প্রশিক্ষণ দিয়ে সৌদি আরবে পাঠানো হলো, কিন্তু বাংলাদেশ থেকে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। নিয়ন্ত্রণ করবে সৌদি আরবে। আর ওরা কীভাবে কন্ট্রোল করে, সেটা সবার জানা। তিনি বলেন, দেশের মান–মর্যাদা ও ঐতিহ্য রক্ষার স্বার্থে নারী শ্রমিক না পাঠিয়ে পুরুষ শ্রমিককে দ্বিগুণভাবে পাঠানো হোক। এতে দেশের মান ইজ্জতও বাঁচবে। না হলে দাসত্বের বাংলাদেশে পরিণত হতে হবে।
জবাবে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদ বলেন, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া বা যেদেশেরই শ্রমবাজার, তাদের চাহিদা অনুযায়ী কর্মী পাঠাতে হয়। না হলে পাঠানোর দরকার নেই। কেউ না চাইলে তো মানুষ ঠেলে পাঠানো যাবে না। তিনি বলেন, ‘আমাদের চেষ্টা থাকবে নারীরা যেন সম্মানজনকভাবে চাকরি করতে পারেন। আর একেবারেই যদি সম্ভব না হয়, তাহলে আমরা না পাঠানোর চিন্তা করব।’
ইমরান বলেন, দেশের স্বার্থেই বিদেশে শ্রমিক পাঠানো হয়। নারী শ্রমিকেরা যাতে লাঞ্ছিত হয়ে ফিরে না আসেন, সে জন্য কোনো পরামর্শ থাকলে তা তাঁরা বিবেচনা করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here