জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গাকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিষাক্ত কটূক্তি করে সীমা লঙ্ঘন করবেন না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নূর হোসেনকে কটাক্ষ করলে জনগণ ক্ষমা করবে না। একবার মুখ ফসকে গেলে যতই ‘সরি’ বলুন কাজে আসবে না।’
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে (কেআইবি) ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
রাঙ্গার উদ্দেশ্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নূর হোসেনকে হত্যার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে হত্যার চেষ্টা কারা করেছিলেন সেটা জাতি জানে। সেই নূর হোসেনকে অশ্রাব্য ভাষায় কটাক্ষ করা হয়েছে। আমাদের নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার আদালতে অক্সিজেন নিয়ে যারা রাজনীতিতে অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছে তারা আজ নেত্রীকে কটাক্ষ করে। কথা মুখ থেকে একবার ফসকে গেলে মুখে আর ফিরে আসে না, যতো সরিই বলুন না কেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ধরনের মন্তব্য কটাক্ষ আমাদের রাজনৈতিক পরিবেশকে নষ্ট করছে। আবারও বলছি, শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটাক্ষ করলে বাংলাদেশের মানুষের অনুভূতিতে আঘাত করা হবে। বাংলাদেশের মানুষ কটাক্ষকারীদের ক্ষমা করবে না।’
গত রবিবার (১০ নভেম্বর) দুপুরে জাপা চেয়ারম্যানের বনানী অফিস মিলনায়তনে জাপা মহানগর উত্তরের আয়োজনে ‘গণতন্ত্র দিবস’ উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় দেয়া বক্তব্যে রাঙ্গা বলেন, ‘নূর হোসেন ইয়াবাখোর, ফেনসিডিলখোর ছিলেন। যারা গণতন্ত্রের ‘গ’-ও বুঝে না, সেই অ্যাডিক্টেড ছেলেকে নিয়ে নাচানাচি করছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তাদের কাছে ইয়াবা-ফেনসিডিলখোর ও ক্যাসিনো ব্যবসায়ীদের গুরুত্ব বেশি। এরশাদ সাহেবের কাছে এরা কোনও গুরুত্ব পায়নি।’
এসময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ‘স্বৈরাচার’ আখ্যা দিয়ে এরশাদকে ‘গণতন্ত্রের ধারক-বাহক’ বলে দাবি করেন।
রাঙ্গার এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম হয়। এরইমধ্যে নিজের বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমাও চেয়েছেন তিনি।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ৭৫-এ জাতির পিতার খুনিদের রাজনীতিতে পুনর্বাসন করেছিলেন অভিযোগ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে জাতির পিতার খুনিদের পুরস্কৃত করছিলো। তাদের বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমাদের দূতাবাসগুলোতে চাকুরি দেয়া হয়েছিলো।’
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘এটাই বিএনপির মূল চরিত্র ও চেহারা। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তারা বোমা হামলা চালিয়ে আমাদের নেত্রীকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিলো। এরপরও বারবার আমাদের নেত্রীকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি বলে দিতে চাই, আমরা অনেক ধৈর্য ধরেছি, আর নয়।’
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, ৩ নভেম্বরের জাতীয় চার নেতার হত্যার বিচার এবং ৭১’র রাজাকারদের বিচার সম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা দেশকে কলঙ্কমুক্ত করেছেন বলেও মন্তব্য করেন কাদের।
এসময় তিনি স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রসংশা করে বলেন, ‘স্বেচ্ছাসেবক লীগ সব সময়ই সুসংবদ্ধ। বরাবরই আমাদের যেকোন বড় আয়োজনে শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব তাদের থাকে। আমাদের নেত্রী আপনাদের ওপর খুশি। এখানে সম্মেলনে এসে আমার মনে হচ্ছে উত্তরের নয় জাতীয় সম্মেলনে চলে এসেছি।’
এসময় নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের নিয়ম তুলে ধরে কাদের বলেন, ‘সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক পদে যে ক’জনের নামই আসুক না কেন সমঝোতার মাধ্যমে একজনের নাম আমাদের দিতে হবে। না হলে নেত্রী যে সিদ্ধান্ত দেবেন তা মেনে নিতে হবে।’
সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ. ফ. ম. বাহাউদ্দীন নাছিম, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক নির্মূল রঞ্জন গুহ ও সদস্য সচিব গাজী মেসবাউল হোসেন সাচ্চু প্রমুখ।