অভিযান চললেও বন গবেষণায় ফের অসামাজিক কার্যকলাপ — হেতু কী?

এবিএম ইমরান: চট্টগ্রাম শহরের পাঁচলাইশ থানার অধীন বন গবেষণাগার সংলগ্ন এলাকায় পুলিশের একের পর এক অভিযান চালানো সত্ত্বেও বারবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে অসামাজিক কার্যকলাপ। সম্প্রতি মাত্র ৫ দিনের ব্যবধানে ৮ জন নারী-পুরুষকে হাতেনাতে আটক করেছে পুলিশ। এর আগে ওই একই এলাকা থেকে আরও ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়, যা স্থানীয় এবং জাতীয় গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পায়।

অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মূল কেন্দ্র ছিল সামার হিল এলাকার বন গবেষণাগার ও মৎস্য অফিসের পেছনে অবস্থিত সরকারি খাসজমিতে গড়ে উঠা একটি সেমিপাকা ভবন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বহুতল আবাসিক প্রকল্প “সানমার প্রপার্টিজ”-এর পেছনে অবস্থিত এই ভবনটি দীর্ঘদিন ধরে আরমান গং নামের একটি চক্রের দখলে। তারা ভবনটি ভাড়া দেয় শিবু পালিত জুয়েল ওরফে জুয়েল নামের এক ব্যক্তিকে, যিনি ইয়াবা, মদ এবং নারী ব্যবসার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। আরও জানা যায়, জুয়েলকে সহযোগিতা করতেন থানার সোর্স হিসেবে পরিচিত সাবেক হোটেল কর্মচারী জসিম (মক্কা হোটেলের প্রাক্তন বয়)।

২০২৪ সালের আগস্ট মাসে ছাত্রসমাজ ও স্থানীয়দের সম্মিলিত উদ্যোগে ভবনটি একবার গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপরও আরমান ও জুয়েল পুনরায় ভবনটি সচল করে ফেলে এবং একই ধারা অনুযায়ী অসামাজিক কার্যকলাপ চালিয়ে যায়। একাধিক অভিযানের পরেও ভবনটি অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে বারবার, যা প্রশাসনিক ব্যর্থতার ইঙ্গিত বহন করে।

সর্বশেষ গত ২৮ জুলাই, পুলিশের ডিসি (উত্তর) ও পাঁচলাইশ থানার ওসির নেতৃত্বে বড় পরিসরের অভিযান পরিচালিত হয়। এতে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইমামসহ আরও দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়। এর ঠিক ৩ দিন পর, ১ আগস্ট সকালে, ওই ভবন থেকে আরও চারজন নারী ও চারজন পুরুষকে আটক করে পুলিশ।

পাঁচলাইশ থানার ওসি মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, “এই জায়গাটি বহু বছর ধরে অবৈধ দখলে রয়েছে। অভিযান চালিয়ে তালা লাগানো হলেও অল্প সময়ের মধ্যেই তা আবার চালু করে ফেলা হয়। এবার কঠোর ও স্থায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

বন গবেষণাগার মসজিদের উপদেষ্টা ও স্থানীয় সিটিজেনস ফোরামের সভাপতি তারেক রশীদ বলেন, “প্রশ্ন হলো, প্রতিবার তালা দেওয়া ভবন কিভাবে এত সহজে খুলে যায়? এটার পেছনে কারা আছে, তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।”

মহল্লা কমিটির নেতা আলমগীর আলম জানান, “যতক্ষণ না অ-জামিনযোগ্য কঠোর মামলা হয়, অপরাধীরা বারবার জামিনে বের হয়ে একই কাজ করবে।”

এলাকাবাসীর দাবি, শুধু অভিযান নয়, এই চক্রের পেছনে যেসব রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ছায়া রয়েছে, তা উন্মোচন করে ব্যবস্থা নিলেই কেবল এই দীর্ঘদিনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here