নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা ছাড়া কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়-নজরুল ইসলাম

চট্টগ্রাম: জুলাই আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে; নারীর অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা ছাড়া কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন পূরণ অসম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য, চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির পরিবেশবিদ মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম।

৩০ জুলাই বিপ্লব বার্ষিকী উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াত মহিলা বিভাগ কর্তৃক নগরীর একটি কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত মহিলা সমাবেশে তিনি উপরোক্ত মন্তব্য করেন। মহানগরী মহিলা বিভাগীয় সেক্রেটারি ফরিদা খানম উক্ত সমাবেশে চেয়ারপারসন ছিলেন।

মেরিন একাডেমি কলেজের প্রভাষক সীমাউল ফেরদাউসী ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ফিজিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শেলী আক্তারের সঞ্চালনায় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শামসুন্নাহার হলের প্রভোস্ট ও ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের অধ্যাপক ইসমত আরা হক। বিশেষ অতিথির আলোচনা পেশ করেন চট্টগ্রাম অঞ্চল দায়িত্বশীলা মেরিনা সুলতানা, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ফিজিওলজি বিভাগের ডা. শাওয়াল নওশীন নূর চৌধুরী ও চট্টগ্রাম সরকারি বিএড কলেজের প্রাক্তন প্রফেসর জোবাইদা নাসরিন। অর্থসহ কুরআন তেলাওয়াত করেন চান্দগাঁও থানার পেশাজীবী বিভােগের দায়িত্বশীলা তাসলিমা সুলতানা কলি। সমাবেশে আবৃত্তি করেন পাঁচলাইশ থানার সাহিত্য-সাংস্কৃতিক বিভাগীয় দায়িত্বশীলা নাজনীন আক্তার তানিয়া, হামদ পরিবেশন করেন পাঁচলাইশ থানা ইফফাত সাদিয়া এবং গীতি আলেখ্য পরিবেশন করেন রিদওয়ান শিল্পী গোষ্ঠী।

সমাবেশে মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ২০০১-২০০৬ মেয়াদে চারদলীয় জোট সরকার সফলভাবে মেয়াদ পূর্তির পর পরই বামপন্থীদের ঘাড়ে নিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ লগি-বৈঠা সন্ত্রাস করে গণতন্ত্রের যাত্রা রুদ্ধ করে দেয়। ১/১১ অসাংবিধানিক সরকারের দু’বছরের দাপুটে শাসনের পর ২০০৮ সালে ডিজিটাল কারচুপির অস্বাভাবিক নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় বসানো হয়। ২০১৪ সালে ভোটারবিহীন নির্বাচন, ২০১৮ সালে নিশিরাতের নির্বাচন এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালের আমি-ডামি নির্বাচন করে ফ্যাসিবাদী শাসন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠে। বাক স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক অধিকারসহ মানবাধিকার সম্পূর্ণভাবে হরণ করে নেয় ফ্যাসিবাদী সরকার। গুম, খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যার পাশাপাশি দেশকে নেতৃত্বশূন্য করার লক্ষ্যে একের পর এক বিচারিক হত্যাকাণ্ড সংগঠিত করে প্রশ্নবিদ্ধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে। আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে চিকিৎসার নামে হত্যা করার এক বছরের মাথায় শুরু হয় কোটা সংস্কার আন্দোলন। কোটা সংস্কারের নয় দফা থেকে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরানোর এক দফায় পরিণতি লাভ করে আন্দোলন।

তিনি আরো বলেন, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল অভূতপূর্ব। আন্দোলন যখন শান্তিপূর্ণভাবে বিকশিত হচ্ছিল, তখনও আমরা দেখেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কলেজ, এমনকি স্কুলের নারী শিক্ষার্থীরাও রাস্তায় নেমে এসেছে। মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে দেশ থেকে ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসন চিরতরে মুছে দিতে জীবনবাজি রেখে রাত-দিন রাজপথে ছিলেন আমাদের সংগ্রামী নারীরা। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ১৩২ শিশু-কিশোর এবং ১১ জন নারী শহিদ হয়েছেন। তথ্য বলছে, শহিদ ১১ নারীর মধ্যে রয়েছেন মায়া ইসলাম, মেহেরুন নেছা, লিজা, রিতা আক্তার, নাফিসা হোসেন মারওয়া, নাছিমা আক্তার, রিয়া গোপ, কোহিনূর বেগম, সুমাইয়া আক্তার, মোসা. আক্তার ও নাঈমা সুলতানা। সোস্যাল মিডিয়ায় ঝড় তোলার পাশাপাশি রাজপথে তাদের অবদান ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম আরো বলেন, নারীদের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা ছাড়া কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন কখনো পূরণ হবে না। ইসলাম নারী-পুরুষ সমন্বিতভাবে একটি সুন্দর সমাজ গঠন করতে চায়। সূরা তাওবার ৭১ নম্বর আয়াত, মুমিন পুরুষ আর মুমিন নারী পরস্পর পরস্পরের বন্ধু, তারা সৎকাজের নির্দেশ দেয়, অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করে, নামায কায়েম করে, যাকাত দেয়, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে। তাদের প্রতিই আল্লাহ করুণা প্রদর্শন করবেন। আল্লাহ তো প্রবল পরাক্রান্ত, মহা প্রজ্ঞাবান।’ এর আলোকে বাংলাদেশকে একটি কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করতে পারলেই জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্খা পূরণ হবে, ইনশা-আল্লাহ্।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here