অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “পৃথিবীর যে সর্বনাশ আজ আমরা প্রত্যক্ষ করছি, তার জন্য দায়ী কেউ একজন না—আমরাই, এই সভায় উপস্থিত প্রত্যেকে, এই অপরাধের আসামি।”
বুধবার (২৫ জুন) রাজধানীর চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বিশ্ব পরিবেশ দিবস এবং পরিবেশ ও বৃক্ষমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের প্রাচীন কবিরা বলেছিলেন, সাগরের সমস্ত পানি যদি কালি হত, আর বনের সব গাছ যদি কলম হত, তাহলেও মানুষের এই অপরাধের বিবরণ লেখা শেষ হতো না। আমরা প্রতিদিন সেই একই অপরাধ করে চলেছি।”
তিনি বলেন, “আজকের পৃথিবী একাধিক সংকটে জর্জরিত—যুদ্ধ, প্রযুক্তির অপব্যবহার, এবং তার চেয়েও ভয়ংকর, প্রকৃতির উপর আমাদের নিয়মিত আঘাত। প্রকৃতির প্রতিক্রিয়া এখন ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে। কিন্তু এটি প্রকৃতির দোষ নয়—এটি আমাদের, মানুষের দোষ। প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার কথা ছিল, আমরা উল্টো তার বিরুদ্ধে চলেছি।”
ড. ইউনূস হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “জলবায়ু সংকট এখন দৈত্যের মতো এগিয়ে আসছে। সে আমাদের বলে দিচ্ছে—‘তোমরা থাকবে, না আমি থাকব।’ আমরা দুইজন একসঙ্গে থাকতে পারব না।”
তিনি আরও বলেন, “বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক ব্যবহারের কারণে তিনটি বড় বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে—জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক ভারসাম্যের হুমকি এবং জীববৈচিত্র্যের ধ্বংস। প্লাস্টিক যেন প্রতিনিয়ত আমাদের চ্যালেঞ্জ করছে—‘তোমরা না আমি, কে থাকবে পৃথিবীতে?’ প্লাস্টিক আমাদের ব্যর্থতা আর উদ্যোগহীনতাকে উপহাস করছে। তারা দাঁড়িয়ে হাসছে, আর আমরা অসহায়ভাবে তাকিয়ে আছি।”
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা দিবস উদযাপন করি, বক্তৃতা দিই, কিন্তু ঘরে ফিরে গিয়ে আবার প্লাস্টিকই ব্যবহার করি। এভাবেই চলছে। অথচ, প্লাস্টিক এমন এক উপাদান যার জন্ম আছে কিন্তু মৃত্যু নেই। পৃথিবীর প্রায় সব কিছুরই শেষ আছে, কিন্তু এর নেই। এটি জমে জমে আমাদের অস্তিত্বকে গ্রাস করছে।”
অবশেষে তিনি বলেন, “যদি আমরা আমাদের জীবনধারা বদলাতে না পারি, তাহলে এই যুদ্ধে মানবজাতির পরাজয় নিশ্চিত। তাই এখনই সময়—নিজেকে বদলে ফেলার, প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার। আজকের মূল আলোচনার বিষয় হোক—আমরা কীভাবে এই ধ্বংস থেকে নিজেদের বাঁচাতে পারি।
