আবদুল আউয়াল (লেখক)
আধুনিক প্রযুক্তির যুগে যখন আমাদের যোগাযোগের পথ সহজ হয়েছে, তখনই কিছু অসাধু ব্যক্তি সেই সহজতাকেই অস্ত্র বানিয়ে মানুষের বিশ্বাস, সম্পর্ক ও সম্মান নিয়ে খেলছে এক নির্মম প্রতারণার খেলায়। সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উঠে আসছে এক ভয়ানক বাস্তবতা—যা অনেক সময় আলোচনায় আসে না, কিন্তু নীরবে বহু মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলছে।
ঘটনাগুলোর শুরুটা খুব সাধারণ, নিরীহ এক পরিচয়ের মধ্য দিয়ে। হয়তো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বা ফোনে পরিচয়—সাধারণভাবে কথা বলা, হালকা খোঁজখবর নেওয়া, আর কিছুদিন যেতে না যেতেই গড়ে ওঠে একধরনের বন্ধুত্ব। সেই বন্ধুত্বে ছড়িয়ে পড়ে সহানুভূতি—প্রতিপক্ষ জানায় তার জীবনের দুঃখ, একাকীত্ব, পরিবারের অশান্তি কিংবা আর্থিক সমস্যা। ধীরে ধীরে সম্পর্কের এই জায়গাটাকে ‘সিকিউর’ ভাবতে শুরু করে একজন সম্মানিত, সরলমনা মানুষ।
এরপরই সেই সম্পর্কের খোলসের ভেতর লুকিয়ে থাকা হায়েনার মুখটি ধীরে ধীরে উন্মোচিত হতে শুরু করে। বলা হয় দেখা করার কথা। কখনো রেস্তোরাঁ, কখনো পার্ক, কখনো আবার নির্জন জায়গা—যেখানে কেউ সাহায্য করতে পারবে না সহজে। সেখানে যা হয়, তা ভয়াবহ। পূর্বে রেকর্ড করে রাখা চ্যাট, কল, এমনকি ভিডিও বা ছবি—এসবকে অস্ত্র বানিয়ে শুরু হয় ব্ল্যাকমেইলিং। সম্মান, পরিচিতি ও সামাজিক অবস্থান—এই তিনটি জায়গাকেই ব্যবহার করে দাবি করা হয় অর্থ।
আরও ভয়ঙ্কর দিক হলো, প্রতারণায় ব্যবহৃত মানুষটি একা নয়—তার সাথে থাকে আরও কিছু অসাধু ব্যক্তি। তারা মিলে তৈরি করে ফাঁদ—মানুষের অসতর্ক মুহূর্তকে ধরে নিয়ে গড়ে তোলে চরম মানসিক ও আর্থিক শোষণের পথ। কখনো সরাসরি টাকা দাবি, কখনো জিম্মি করে রাখা, কখনো ভয় দেখিয়ে আদায় করা হয় মোটা অঙ্কের অর্থ। এবং সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো, যারা এই ফাঁদে পড়ে, তারা অধিকাংশ সময়েই তাদের সম্মানের কথা ভেবে মুখ খুলতে পারেন না।
এই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন মূলত সম্মানিত ও শিক্ষিত মানুষরা, যারা ভালোবাসা, সহানুভূতি ও বন্ধুত্বের নামেই এমন মানুষের ফাঁদে পা দেন। এ এক গভীর সামাজিক ব্যাধি, যা কেবল প্রযুক্তির নয়—বরং আমাদের অসচেতনতারও ফল।
কী করণীয়?
• অপরিচিত কারও সঙ্গে অতিমাত্রায় ব্যক্তিগত কথা ভাগাভাগি না করা।
• সব সময় সতর্ক থেকে সম্পর্ক গড়ার পেছনে কোন উদ্দেশ্য আছে কি না তা বোঝার চেষ্টা করা।
• কোনো সম্পর্ক খুব দ্রুত ঘনিষ্ঠ হলে, প্রশ্ন তোলা—কেন এত তাড়াতাড়ি?
• দেখা করার আগে কাউকে জানানো, বিশ্বাসযোগ্য জায়গায় থাকা, প্রয়োজনে নিজের লোক নিয়ে যাওয়া।
• এমন কোনো পরিস্থিতি ঘটলে দ্রুত আইনি সহায়তা নেওয়া।
শেষ কথা:
সবচেয়ে বড় প্রতারণা হয় তখনই, যখন বিশ্বাসকে হাতিয়ার বানানো হয়। সময় এসেছে নিজেদের সুরক্ষিত রাখার। স্মার্ট হওয়ার মানে কেবল প্রযুক্তি জানাই নয়, বরং এই ডিজিটাল সম্পর্কগুলোর পেছনের হিংস্রতা চিনে নেওয়াও বুদ্ধিমানের কাজ।
“অন্ধ বিশ্বাস নয়, সচেতন সম্পর্কই পারে ফাঁদ থেকে রক্ষা করতে।”
