ভারত খুলে দিয়েছি বাঁধ, অবিরাম ভারী বর্ষণ ও উজানের পানির তোড়ে ভাসছে ফেনী জেলা। সীমান্তবর্তী অন্য সাত জেলার বাসিন্দাও রয়েছেন বিপদে।

ত্রিপুরায় ডুম্বুর জলাধারের বাঁধের স্লুইস গেট খুলে দেওয়ায় ওই পানি বিভিন্ন জনপদ ভাসিয়ে হু-হু করে ঢুকছে দেশে। পানির তোড়ে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদী খোয়াই, গোমতী, ধলাই, মুহুরী, হালদা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম ও রাঙামাটি জেলার বিভিন্ন এলাকায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

 

এসব জেলার পাঁচ শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লাখো মানুষ। জেলাগুলোর মধ্যে ফেনীতে ২শ’ গ্রাম প্লাবিত হয়ে দুই লাখেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি। প্রবল স্রোতে একজন নিহত ও একজন নিখোঁজ রয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। প্রধান সড়ক ২ থেকে ৪ ফুট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় জেলা সদরের সঙ্গে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলা। বন্যা পরিস্থিতি সামাল দিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।

 

এদিকে খাগড়াছড়িতে ডুবেছে ৩০ গ্রাম। সাজেকে আটকা পড়েছেন আড়াইশ পর্যটক। সংযোগ সড়ক ভেঙে মহালছড়ি উপজেলার সঙ্গে মুবাছড়ি ইউনিয়নের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। জলাবদ্ধতায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরে সব ধরনের কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। পানিতে ডুবে মারা গেছেন এক নারী। মৌলভীবাজারে পাঁচটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে অর্ধশত গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে রয়েছেন দেশ লাখের বেশি মানুষ।

নোয়াখালীর সাতটি উপজেলায় অবনতি হয়েছে বন্যা পরিস্থিতির। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লাখ লাখ মানুষ। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে জেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কুমিল্লায় নদীতে পানি বাড়তে থাকায় চরাঞ্চলের সহস্রাধিক পরিবার কাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন দেড় লাখের বেশি মানুষ।

বুধবার বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, অবিরাম ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে আগামী ২৪ ঘণ্টায় মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার মনু, খোয়াই, ধলাই নদীর পানি এবং ফেনী ও চট্টগ্রাম জেলার মুহুরী ও হালদা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। এসময় এসব এলাকায় নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে।

 

কুমিল্লা জেলার গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে এবং সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। কেন্দ্র থেকে আরও বলা হয়েছে যে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার প্রধান নদীসমূহের পানিও কিছু পয়েন্টে সময় বিশেষে বৃদ্ধি পেতে পারে।

এদিকে, আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঢাকাসহ দেশের পূর্বাঞ্চলজুড়েই বর্ষণ চলছে। আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান জানান, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় যে লঘুচাপটি ছিল, তা দুর্বল হয়ে এমন বৃষ্টিপাত ঘটাচ্ছে। এই বৃষ্টিপাত আরও দুইদিন অব্যাহত থাকতে পারে। সমুদ্রবন্দরে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

৩১ বছর পর স্লুইস গেট খুলল ত্রিপুরা

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে কয়েকদিন ধরে চলছে টানা ভারী বর্ষণ। অবিরাম বর্ষণে সেখানকার বিভিন্ন জনপদ পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় ডুম্বুর জলাধারের বাঁধের স্লুইস গেট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ফলে উজানের ওই পানি ত্রিপুরার বিভিন্ন জনপদ ভাসিয়ে হু হু করে ঢুকছে বাংলাদেশে।

ত্রিপুরা টাইমস ও বোরোক টাইমসের প্রতিবেদনে ডুম্বুর জলাধারের বাঁধের স্লুইস খুলে দেওয়ার এ খবর জানানো হয়েছে। স্লুইস গেট খুলে দেওয়ার ফলে গোমতী ও সিপাহীজলা জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার বাড়িঘর ও কৃষিজমি ভেসে গেছে। বিভিন্ন নদনদী বেয়ে সেই পানি ছুটে আসছে ভাটির দিকে।

ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা বুধবার তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভারী বৃষ্টির কারণে গোমতী জেলায় রাজ্যের একমাত্র পানিবিদ্যুৎ প্রকল্পের ডুম্বুর জলাধারে প্রয়োজনের তুলনায় অধিক পানি জমা হয়ে পড়েছে, তাই যে কোনো সময় বাঁধ ভেঙে বড় বিপর্যয় ঘটতে পারে; এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় এলাকায় আগাম ঘোষণা দিয়ে জলাধার কর্তৃপক্ষ স্লুইস গেট খুলে বাড়তি পানি ছেড়ে দিয়েছে। এর ফলে গোমতী ও সিপাহীজলা জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার বাড়িঘর ও কৃষিজমিতে ভয়ানক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।’

বোরোক টাইমস বলছে, ৩১ বছর পর ত্রিপুরা কর্তৃপক্ষ ডুম্বুর জলাধারের বাঁধের স্লুইস গেট খুলেছে। ভারী বর্ষণের সঙ্গে উজান থেকে বানের পানি ঢুকতে থাকায় ফেনী জেলায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। জেলার উত্তরের তিন উপজেলা ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়ার রাস্তা-ঘাট ও ঘর-বসতি এখন পানির নিচে। সদর উপজেলা, সোনাগাজীর অনেক গ্রামও প্লাবিত হয়েছে। বানের পানিতে এখন পর্যন্ত একজন নিহত ও একজন নিখোঁজ রয়েছেন।

২শ’ গ্রামের দুই লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি

ফেনীর পরশুরাম ও ফুলগাজীতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এ ছাড়া মঙ্গলবার রাত থেকে নতুন করে ছাগলনাইয়া উপজেলার অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলার হাজারও মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। গ্রামীণ সব সড়ক, ফসলি মাঠ এখনো পানিতে তলিয়ে আছে। ভেসে গেছে পুকুর ও খামারের মাছ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর পানি উপচে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়েছে বলে স্থানীয়রা বলছেন। পরশুরামে বন্যার পানিতে ভেসে গিয়ে একজন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা যায়। ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

কয়েকটি ডিঙি নৌকায় লোকজনকে উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হলেও বেশিরভাগ মানুষ এখনো পানিবন্দি। দুর্গতদের উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরাও কাজ করছেন। বন্যা পরিস্থিতি সামাল দিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।

আবহাওয়া অফিস গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৯৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যবেক্ষক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, গত ৪৮ ঘণ্টায় ২৮২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী কয়েকদিন জেলাজুড়ে বৃষ্টি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা আছে।

ফেনীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম বলেন, ‘টানাবর্ষণ আর উজানের পাহাড়ি ঢলে মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মুহুরী-কহুয়া-সিলোনীয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২৭টি ভাঙা অংশ দিয়ে হু-হু করে পানি ঢুকছে লোকালয়ে। গত বন্যায় ভেঙে যাওয়া ২৬টির সঙ্গে এবার নতুন করে আরও একটি বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসসহ একাধিক সংস্থা পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাচ্ছে।’

পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা হাবিব বলেন, ‘পরশুরাম উপজেলায় বন্যায় আগেই বেড়িবাঁধের ১২টি স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছিল। গত কয়েক দিনের অতিবৃষ্টিতে সৃষ্ট পাহাড়ির ঢলের পানি নদীতে প্রবেশ করেছে। নদীর বেড়িবাঁধের ভাঙনের স্থান দিয়ে ঢলের পানি লোকালয়ে ঢুকে বিস্তীর্ণ এলাকা ডুবিয়ে দিয়েছে। পরশুরাম উপজেলায় পৌরসভা এবং তিনটি ইউনিয়নের প্রায় ৯৫ শতাংশ এলাকা এখন পানির নিচে। মঙ্গলবার রাত থেকে ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় ১০০ জনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। ৫০০ পরিবারকে শুকনা খাবার দেওয়া হয়েছে। আরও ৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবার এবং ৫০ টন চাল মজুত আছে।’

ফেনীর জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন কাজ করছে। পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধারে স্থানীয় কিছু স্বেচ্ছাসেবীও কাজ করছেন। প্রয়োজনের তুলনায় সেটা খুব সামান্য। উদ্ধারকাজে সহযোগিতার জন্য সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। খবর পেয়ে ইতোমধ্যে সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সদস্যরা স্পিডবোট নিয়ে রওনা হয়েছেন।’

সাজেকে আটকা আড়াইশ পর্যটক

ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে খাগড়াছড়ির মাইনি ও কাচালং নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় ডুবে গেছে খাগড়াছড়ি-সাজেক সড়কের একাধিক অংশ। ফলে সাজেক বেড়াতে এসে আটকা পড়েছেন প্রায় আড়াইশ পর্যটক। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে দীঘিনালার মেরুং ও কবাখালী ইউনিয়নের ৩০ গ্রাম।

অন্যদিকে চেঙ্গী নদীর পানি কমে যাওয়ায় খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা থেকে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে।

বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শিরিন আক্তার জানান, ‘সাজেক সড়কের বিভিন্ন অংশে পানি উঠে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ আছে। এতে সাজেকে আটকা পড়েছেন অন্তত ২৫০ জন পর্যটক। তারা আজকে ফিরতে পারবেন না।’

 

এ ছাড়া পাহাড়ি ঢলে দীঘিনালা-লংগদু সড়কের হেড কোয়াটার এলাকায় সড়ক ডুবে যাওয়ায় রাঙামাটির লংগদুর সঙ্গে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।

টানা বর্ষণ ও বন্যার কারণে খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার সঙ্গে মুবাছড়ি ইউনিয়নের সিঙ্গিনালা গ্রামের কাপ্তাইপাড়া এলাকায় একমাত্র সড়কের সেতুর সংযোগ সড়কটি ভেঙে গিয়ে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বুধবার ভোরে সংযোগ সড়কটি ভেঙে যায়।

পানিবন্দি দেড় লক্ষাধিক মানুষ

জুড়ী (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি জানান, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তবর্তী নদী বেষ্টিত মৌলভীবাজার জেলার পাঁচটি নদনদীতে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদী, মনু, ধলাই ও জুড়ী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। এতে নদনদী ভাঙনে প্লাবিত হয়েছে অর্ধশত গ্রাম। এতে দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বন্যার পানি বাড়তে থাকায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

বুধবার নিয়মিত বুলেটিনে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজার জানায়, সাগরের লঘুচাপের প্রভাব ও ভারতের অতিবৃষ্টির ঢলে পানি বেড়েছে। জেলার জুড়ী নদে বিপৎসীমার প্রায় ১৭৪ সেন্টিমিটার ওপর, ধলাই নদে বিপৎসীমার ৮ সেমি ও মনু নদীর চাঁদনীঘাটে ৭০ সেমি ও রেলওয়ে ব্রিজে ১০৫ সেমি ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

জুড়ীর ফুলতলা ইউনিয়নের তানভীর চৌধুরী বলেন, টানা তিনদিনের যে বৃষ্টি এতে আমাদের এলাকার সাধারণ মানুষ ও কৃষক ভাইয়েরা বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। আমরা এখন সবার সহযোগিতা চাচ্ছি।

জুড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল আলম খান জানান, অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে উপজেলার ৪০ হেক্টর আমন ধান পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এতে অনেক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।

আখাউড়া স্থলবন্দরে কার্যক্রম ব্যাহত, মারা গেছেন এক নারী স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। ইমিগ্রেশন ভবনে হাঁটুপানি জমায় যাত্রী পারাপার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

উপজেলার গাজির বাজার এলাকার একটি অস্থায়ী সেতু ভেঙে আখাউড়া-আগরতলা সড়কে যান চলাচল বন্ধ গয়ে যায়। এ ছাড়া বন্দরের সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় পণ্য আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আখাউড়া স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান।

মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় বুধবার সকাল থেকেই আখাউড়া স্থলবন্দরে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। মাহমুদুল হাসান জানান, আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ভবনেও পানি প্রবেশ করেছে। এর ফলে যাত্রী পারাপার কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া পানির তোড়ে স্থলবন্দর সড়কের পাশে আমদানি-রপ্তানিকারকদের বেশ কয়েকটি অফিসও তলিয়ে গেছে।

এদিকে বানের পানি ঘরে ঢুকে পড়ায় ঘর থেকে বের হতে গিয়ে উপজেলার বীরচন্দ্রপুর গ্রামে সুবর্ণ আক্তার নামে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর মৃত্যু হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গাহালা পারভীন রুহি জানান, পানিতে উপজেলার ৩৪ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আখাউড়া-আগরতলা আন্তর্জাতিক সড়কের আখাউড়ার জাজিরা খালের ওপর একটি বেইলি সেতু পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

ফটিকছড়ির নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, ভোগান্তি

ফটিকছড়ি প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে অবিরাম বৃষ্টি ও নদনদী দিয়ে পাহাড়ি ঢলের পানিতে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তবে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে উপজেলা নাজিরহাট পৌরসভার হালদার বাঁধ। এ এলাকার মালেকার পাড়া এলাকায় বাঁধ প্রায় ভেঙে গেছে। যে কোনো সময় তলিয়ে যেতে পারে প্রায় ১৫০ বসতঘর।

ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানান, অতিভারী বৃষ্টির কারণে ফটিকছড়ির বিভিন্ন স্থানে খালগুলো উপচে লোকালয়ে প্লাবিত হচ্ছে। ধুরং খাল বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। বিভিন্ন স্থানে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে। প্রয়োজন অনুসারে আরও বাড়ানো হবে।

নোয়াখালীর বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত

ফেনীর মুহুরী নদীর পানিতে নোয়াখালীর সাতটি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। নতুন করে জেলার আরও অনেক এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৭১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে জেলায়। জেলার উপজেলা ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। গ্রামীণ সব সড়ক, ফসলি মাঠ পানিতে তলিয়ে আছে। ভেসে গেছে পুকুর ও খামারের মাছ।

জানা যায়, টানা বৃষ্টিতে জেলা শহর মাইজদীসহ সাতটি উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে জেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। নোয়াখালী পৌরসভার বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয়রা জানায়, জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করায় মানুষজন ছুটছে আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে। বন্যা পরিস্থিতি সামাল দিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।

সরেজমিন বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনে দেখা গেছে, অনেক ঘরে হাঁটুপানি, রান্নাঘরেও পানি। পানির কারণে রান্না করতে পারেনি অনেকে। আশপাশের নালায় জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা বৃষ্টির পানির সঙ্গে মিশে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে রোগ-জীবাণু ছড়িয়ে পড়ায় অনেক শিশু ও বয়স্করা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। জেলার সাতটি পৌরসভার বেশিরভাগ এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকায় সব ধরনের গ্রামীণ সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ফেনীর মুহুরী নদীর পানি বেড়ে নোয়াখালী জেলায় ঢুকতে শুরু করেছে। এরপর লক্ষ্মীপুর হয়ে নেমে যাবে। প্রথমে বৃষ্টির পানিতে নোয়াখালীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় পরে মুহুরী নদীর পানি এসে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়। এখন এমন অবস্থা যে পানি নামার কোনো সুযোগ নেই। হু হু করে মুহুরী নদীর পানি ঢুকছে।’