প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ এবং নোবেল জয়ী বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব প্রফেসর মোঃ ইউনুস স্যারের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাননীয় উপদেষ্টা পরিষদের দক্ষ, প্রাজ্ঞ ও যোগ্য পরিচালনায় স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য দপ্তর /সংস্থায় সংস্কার কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে ইতোমধ্যেই স্থানীয় সরকারের সব পরিষদ বিলুপ্ত করা হয়েছে।

অভ্যুথ্যানের মাধ্যমে অতীতেও কয়েকবার সরকার পরিবর্তন হয়েছে। তখন কেন্দ্রীয় সরকারের পরিবর্তন /পতন হলেও স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠান সমূহ তথা সিটি কর্পোরেশন, জেলাপরিষদ, উপজেলা পরিষদ এবং পৌরসভা বিলুপ্ত করতে হয়নি। ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুথ্যানের ফলে বিগত সরকারের পতন হলেও অন্তবর্তীকালীন সরকার ১৯ আগষ্টের আগ পর্যন্ত স্থানীয় সরকারকে বিলুপ্ত করেননি। বরং নির্বাচিত প্রতিনিধিগনকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে উৎসাহিত করা হয়েছে। নারায়নগন্জ সিটি মেয়র, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সহ কিছু স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের প্রধানগন দাপ্তরিক কাজ করেছেন মর্মে পত্রিকান্তরে জানতে পারি। কিন্তু দেখা গেছে , অভ্যুথ্যানের প্রায় ১৩/১৪ দিন পরেও ৯৯.৯৯ শতাংশ নির্বাচিত প্রতিনিধিবৃন্দ হয় পলাতক অথবা আত্মগোপনে চলে গেছেন। এমতাবস্থায় জনগন নাগরিক সেবা থেকে বন্চিত।

দীর্ঘদিন এঅবস্থা চলতে পারেনা। অতীতে সরকার পতন/পরিবর্তনে কখনো এ অবস্থার সৃষ্টি হয়নি। এবার কেন হলো তা বিশ্লেষণ করা দরকার বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন।
স্বাধীনতার পর থেকে স্থানীয় সরকারের সকল নির্বাচন ছিল নির্দলীয়। জনগন ক্ষেত্র বিশেষে আঞ্চলিকতার ভিত্তিতে/আত্মীয়তার ভিত্তিতে অথবা দলমত নির্বিশেষে গ্রহনযোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচন করতে পারতেন। এঅবস্থায় সরকার পরিবর্তনের ফলে স্থানীয় সরকারে লেশমাত্র প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি। কিন্তু সাম্প্রতিককালে স্থানীয় সরকারের সর্বনিম্ন টায়ার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ টায়ার তথা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কখনো দলীয় প্রতীকে, আবার কখনো সরকার দলীয় সিদ্ধান্তে প্রার্থী মনোনয়ন দিতে দেখা গেছে । ফলাফল যা হওয়ার তাই হলো। বিগত নির্বাচন গুলোতে যেহেতু প্রধান /বড় দলগুলো অংশ গ্রহণ করেনি সেহেতু সরকারী দলের আস্থাভাজন ব্যাক্তিই প্রভাবশালী এবং তথাকথিত একমাত্র যোগ্য প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত ছিলেন। কত শতাংশ ভোটার ভোট দিলেন বা জনগনের ইচ্ছার প্রতিফলন হলো কিনা তা দেখার প্রয়োজন অনূভুত হয়নি। এভাবে নির্ধারিত প্রতিনিধি ইচ্ছায় হউক বা অনিচ্ছায়, দলীয় আনুগত্যের বাইরে গিয়ে জনগনের সেবা করার সুযোগ আছে কি? “নির্বাচিত”প্রতিনিধি না বলে “নির্ধারিত ” প্রতিনিধি বলার কারন হলো, স্থানীয় সরকারের অনেক পর্যায়ে বিশেষকরে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা এবং সিটি কর্পোরেশনের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পদে সরকার দলীয় প্রার্থী ছাড়া অন্য কেহ প্রার্থী হওয়ার সাহসও করেনি। এমন উপজেলাও আছে, ১৫ টি ইউনিয়নের ১৫ জন চেয়ারম্যান এবং মেম্বার সহ ১৮০ জন সদস্যদের সকলেই ক্ষমতাশীল দলের মন্ত্রী/এম পি দ্বারা নির্ধারিত / মনোনীত। এই পরিস্থিতিতে মনোনীত প্রতিনিধিদের দ্বারা ইচ্ছায় হউক, অনিচ্ছায় হউক দলের অন্ধ আনুগত্য করা ছাড়া বিকল্প আছে কি? এমতাবস্থায় সরকার জনস্বার্থে স্থানীয় সরকার সিটি কর্পোরেশন আইন ২০০৯ এর ১৩(গ) ধারায় মেয়রের পদ শুন্য করতে পারে। তদ্রূপ কাউন্সিলর সহ স্ব, স্ব আইনে জেলাপরিষদ,পৌরসভা এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান /মেয়রের পদ জনস্বার্থে শূন্য ঘোষনা করার বিধান রয়েছে। এতদসত্বেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার স্থানীয় সরকার( সিটি কর্পোরেশন) (সংশোধন), অধ্যাদেশ ২০২৪, জেলাপরিষদ (সংশোধন)অধ্যাদেশ ২০২৪ সহ কতিপয় সংশোধনী জারি করে শূন্য পদে প্রশাসক নিয়োগের আইনগত ভিত্তি আরো সুদৃঢ় করেছেন।সংশোধিত অধ্যাদেশ অনুসারে ইতোমধ্যে সিটি কর্পোরেশন, জেলা পরিষদ পৌরসভা এবং উপজেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এতে জনদুর্ভোগ লাগব হবে মর্মে জনগনের প্রত্যাশা।
স্বস্তির বিষয় এই যে, প্রশাসনে পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তাদের সদাসয় বর্তমান সরকার ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।
ইতিমধ্যে অবসরপ্রাপ্ত কিছু সংখ্যক সিনিয়র কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়ে সচিবালয়ে পদায়ন করেছেন, তা প্রশংসার দাবিদার । আরো উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পদোন্নতি বঞ্চিত অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান আছ মর্মে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি প্রদান পূর্বক যে সকল কর্মকর্তাকে নিয়মিত পদে পদায়ন করা সম্ভব হবে না তাদের মধ্যে থেকে অভিজ্ঞ, যোগ্য এবং দক্ষ কর্মকর্তাগণকে পদমর্যাদা অনুসারে স্থানীয় সরকার সহ বিভিন্ন সংস্থায় প্রশাসক / চেয়ারম্যান / ব্যবস্থাপনা পরিচালক / সদস্য /পরিচালক ইত্যাদি পদে পদায়ন করা যেতে পারে। এতে পদোন্নতি বঞ্চিত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বঞ্চনা উপশমের সুযোগ সৃষ্টি হলো মর্মে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন।

  • কাজী মোঃ শফিউল আলম
  • যুগ্মসচিব (অবসরপ্রাপ্ত)