আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গাজা ভূখণ্ডের উত্তরাংশ ওয়াদির ১১ লাখ বেসামরিক ফিলিস্তিনিকে ভূখণ্ডের দক্ষিণাংশে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী ইসরাইলি ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ)। শুক্রবার ভোরের দিকে এই অবাস্তব আলটিমেটাম না মেনে বাসিন্দাদের তাদের বাড়িতেই অবস্থান করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। তারা ইসরাইলের এ আলটিমেটামকে ‘মিথ্যা প্রচারণা’ বলে উল্লেখ করেছে। এদিকে এত অল্প সময়ের মধ্যে দুর্ঘটনা ও মানবিক বিপর্যয় এড়িয়ে এত বিশাল জনগোষ্ঠীকে স্থানান্তর করা অসম্ভব বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।

বৃহস্পতিবার রাতেও গাজার ৭৫০টি সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ইসরাইল বৃষ্টির মতো বোমা হামলা চালিয়েছে। এতে ফিলিস্তিনে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১,৭৯৯ জনে দাঁড়িয়েছে। আর আহত হয়েছেন ৭,০১২ জন। খবর এএফপি, রয়টার্স, বিবিসি, স্কাই নিউজ, ডেইলি মেইল, আলজাজিরার।

ইসরাইলের সামরিক বাহিনী শুক্রবার সকালে ওয়াদি গাজা থেকে ১১ লাখ বাসিন্দাকে দক্ষিণে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এর অর্থ গাজা শহর এবং এর আশপাশের সব জনগোষ্ঠীকে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে যেতে হবে। ৩৬৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের গাজা উপত্যকায় বসবাস করেন ২৩ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি। তাদের প্রায় অর্ধেকই বসবাস করেন ওয়াদিতে।

আইডিএফের দেওয়া নির্দেশনার ফ্লাইয়ারে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনী গাজার বাসিন্দাদের জানাচ্ছে যে, ‘বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠন ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছে। এর ফলে ‘গাজা শহর যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।’ তাই গাজার বাসিন্দাদের অবিলম্বে উপত্যকার দক্ষিণে সরে যেতে হবে।

সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনিদের ইসরাইলে প্রবেশের চেষ্টা না করার জন্য কঠোর হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। ফ্লায়ারে আরও বলা হয়েছে, আপনার নিরাপত্তা স্বার্থে ইসরাইলের সেনাবাহিনী পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত আপনাদের এখানে ফিরে আসা উচিত হবে না। গাজা শহরের সুপরিচিত আশ্রয়কেন্দ্রগুলো অবশ্যই খালি করতে হবে। নিরাপত্তা প্রাচীরের কাছে যাওয়া নিষেধ এবং যে এই প্রাচীরের দিকে এগিয়ে যাবে সে মৃত্যুর মুখোমুখি হবে।

ফ্লায়ারের নিচে একটি ছোট মানচিত্রও দেওয়া হয়েছে। এতে গাজার উত্তর থেকে দক্ষিণে তীরচিহ্ন দিয়ে ১১ লাখ ফিলিস্তিনের সরে যাওয়ার পথ দেখানো হয়েছে। জাতিসংঘ ইসরাইলকে এ আদেশ প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলেছে, ধ্বংসাত্মক মানবিক পরিণতি ছাড়া এত বিপুল জনগোষ্ঠীকে স্থানান্তর করা সম্ভব নয়। শুক্রবার এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক বলেন, ‘জাতিসংঘ মনে করছে, বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয় এড়িয়ে যে এত অল্প সময়ের মধ্যে এত সংখ্যক মানুষকে এলাকা ত্যাগ রীতিমতো অসম্ভব।’

তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের কারণে এমনিতেই গাজা ভূখণ্ডের লোকজন নানামুখী বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আইডিএফের এই আলটিমেটামের জেরে বিপর্যয়ের মাত্রা আরও বাড়বে। জাতিসংঘ আইডিএফকে তাদের নির্দেশ পুনর্বিবেচনা করার জরুরি আহ্বান জানাচ্ছে।’

হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা বিভাগের মুখপাত্র জন কিরবি ইসরাইলের এ আলটিমেটামকে ‘টল অর্ডার’ বলে উল্লেখ করেছেন। এমএসএনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি শুক্রবার বলেন, খুব অল্প সময়ের মধ্যে বিপুলসংখ্যক জনতাকে সরে যেতে হবে। আমরা বুঝি তারা আসলে কী করতে চাচ্ছে, কেন করতে চাচ্ছে। বেসামরিক জনগণকে তারা হামাস থেকে দূরে রাখতে চাইছে। এটাই হচ্ছে মূল লক্ষ্য।

এদিকে এভাবে আলটিমেটাম দিয়ে গাজাবাসীকে জোর করে ঘরছাড়া করা যুদ্ধাপরাধ বলে উল্লেখ করেছে নরওয়ের শরণার্থী কাউন্সিল। তাদের সঙ্গে একমত প্রকাশ করে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও বলেছে গাজায় ইসরাইল ‘জাতিগত শাস্তি’ যুদ্ধাপরাধের শামিল। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, লাইফ সাপোর্টে থাকা আহত নাগরিকদের উত্তর গাজার হাসপাতাল থেকে সরানো মানেই তাদের ‘মৃত্যুদণ্ড’।

এদিকে হামাসের এক কর্মকর্তা ইসরাইলের আদেশকে ‘মিথ্যা প্রচারণা’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি ফিলিস্তিনিদের তাদের ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। হামাস অথরিটি ফর রিফিউজি অ্যাফেয়ার্স গাজার উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দাদের তাদের বাড়িতে অবিচল থাকতে এবং দখলদার বাহিনীর জঘন্য মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে দৃঢ় থাকার আহ্বান জানিয়েছে।

এদিকে হামাসের রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ব্যুরোর প্রধান বাসেম নাইম আলজাজিরাকে বলেছেন, ইসরাইলের নির্দেশ সত্ত্বেও গাজার বাসিন্দারা তাদের মাতৃভূমি ছেড়ে যাবে না। তিনি বলেন, আমাদের কাছে দুটি বিকল্প আছে : এই দখলদারিত্বকে পরাজিত করা বা আমাদের বাড়িতেই মৃত্যুবরণ করা। আমরা বাড়িঘর ছেড়ে যাচ্ছি না। আমরা নাকবার ঘটনা পুনরাবৃত্তি করতে তৈরি নই। ১৯৪৮ সালে ইসরাইল গঠনের সময় ফিলিস্তিনিদের ব্যাপক বাস্তুচ্যুতির কথা তিনি উল্লেখ করেন।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইসরাইলি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গাজা উপত্যকায় স্থল অভিযানের চূড়ান্ত প্রস্তুতির কাজ শেষ হয়েছে। আগামীকাল বা তার পরের দিন থেকে সেখানে অভিযান শুরু হবে। এ কারণেই সেখানকার বেসামরিক লোকজনকে সরে যেতে বলা হয়েছে। ওয়াদি সীমান্ত এলাকায় ইসরাইল লাখ লাখ সেনা, শত শত ট্যাংক এবং সামরিক যান মোতায়েন করেছে।

গাজার এক আইনজীবী মনে করছেন, এটা ইসরাইলের গাজা খালি করার একটি কূটকৌশলমাত্র। একবার গাজা ছেড়ে গেলে তারা আর সেখানে ফিরতে পারবে না। গাজা দখল করে নেবে ইসরাইল। চিরতরে ভিটেবাড়ি হারানোর ভয় পাচ্ছে গাজাবাসী। তবে ইসরাইলের আলটিমেটাম শুনতেই খাবার-পানি-বিদ্যুতের কষ্ট ভুলে তড়িঘড়ি করে পালাচ্ছে মানুষ।

বাঁচতে হবে এটাই যেন তাদের একমাত্র লক্ষ্য। ইসরাইলের আলটিমেটাম দেওয়ার পর গাজার পরিস্থিতি হয়ে উঠেছে আরও ভয়াবহ। বিমান হামলার কারণে এমনিতেই সেখানে রাস্তাঘাট, বাড়িঘর সব বিধ্বস্ত হয়ে আছে। এর মধ্যে জীবন রক্ষায় ফিলিস্তিনিরা দক্ষিণে ছুটে চলেছেন। কেউ গাড়িতে কেউ বা হেঁটে হাতে বহনযোগ্য জিনিসপত্র নিয়ে ছুটে চলেছেন নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে। তবে পরিস্থিতির কারণে অনেকেই নিজের জায়গা ছেড়ে যেতে পারছেন না।

ফিলিস্তিনের রেড ক্রস বলেছে, ইসরাইলের হুমকি এবং অভিযান সত্ত্বেও তারা গাজা ছেড়ে যাবে না। ফেসবুকে দেওয়া এক বিবৃতিতে শুক্রবার রেড ক্রস বলেছে, তাদের ডাক্তাররা মানবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখবেন। মৃত্যুর মুখে তারা ফিলিস্তিনের জনগণকে ফেলে যাবেন না। ইনস্টাগ্রামে দেওয়া আরেক বিবৃতিতে রেড ক্রস বলেছে, তাদের হাসপাতাল সরানো বা বয়োবৃদ্ধ, প্রতিবন্ধীদের সরিয়ে নেওয়ার মতো প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম তাদের কাছে নেই।

গত ছয় দিনের যুদ্ধে ইতোমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ৩ হাজারের বেশি মানুষ। এই নিহতদের মধ্যে ইসরাইলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিকের সংখ্যা ১ হাজার তিন শতাধিক এবং গাজার ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ১ হাজার ৭৯৯ জন। দুই অঞ্চলের সামরিক সদস্যদের পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু, নারী ও বেসামরিক লোকজনও রয়েছেন নিহতদের এ তালিকায়।

গাজায় অব্যাহত বিমান হামলা চালিয়ে আবাসিক ভবন ভূপাতিত করার মাধ্যমে ইসরাইল ‘গণহত্যা’ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শাতায়েহ। রামাল্লায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গাজায় আমাদের জনগণ গণহত্যার মধ্য দিয়ে দিন পার করছেন। গাজা এখন এক বিভীষিকাময় স্থানে পরিণত হয়েছে।

এখন নিরপেক্ষতার সময় নয় : মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী অস্টিন গাজার জনগণকে দক্ষিণে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, সন্ত্রাসবাদের পক্ষে কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। শুক্রবার তেল আবিবে ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গিলান্টের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এখন নিরপেক্ষতা বা মিথ্যা ভারসাম্য বা কোনো অজুহাতের সময় নয়। অস্টিন বলেন, ইসরাইলে প্রয়োজনে পেন্টাগন আরও সামরিক সাহায্য পাঠাতে প্রস্তুত।

অস্ত্র, গোলাবারুদ, আকাশ প্রতিরক্ষা সরঞ্জামসহ অন্যান্য সামগ্রী ইসরাইলে আসার পথে রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা যখন যুদ্ধের আইন (লস অব ওয়ার) সমুন্নত রাখি, তখন আমাদের মতো দেশের গণতন্ত্র আরও সুদৃঢ় এবং নিরাপদ হয়। হামাসের মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বেসামরিক জনগণকে লক্ষ্যবস্তু হিসাবে টার্গেট করে। কিন্তু গণতন্ত্রে এর কোনো সুযোগ নেই।

ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ইসরাইল কখনো ইচ্ছে করে বেসামরিক মানুষকে লক্ষ্য করে গুলি করে না। আর এ কারণেই তারা গাজার অধিবাসীদের দক্ষিণে সরে যাওয়ার অনুরোধ করেছে। তিনি বলেন, ইরান, হিজবুল্লাহ আর হামাস হচ্ছে ‘শয়তানের চক্র’। ইয়োভ গিলান্ট বলেন, সভ্য জনতার মাঝে হামাস থাকতে পারবে না। এ কারণে ইসরাইল তাদের গাজা এবং পৃথিবী থেকে উৎপাটন করার উদ্যোগ নিয়েছে।

ইসরাইলি হামলায় ১৩ জিম্মি নিহত : গাজায় ইসরাইলের বিমান হামলায় অন্তত ১৩ জিম্মি নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে হামাস। আল-কাসেম ব্রিগেড এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরাইলি বিমান হামলায় ছোড়া বোমার আঘাতে বিদেশিসহ ১৩ জিম্মি নিহত হয়েছেন। ভিন্ন ভিন্ন পাঁচ স্থানে বিমান হামলায় তাদের মৃত্যু হয়েছে।

সময়মতো ব্যবস্থা নেবে হিজবুল্লাহ : লেবাননভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর উপপ্রধান শেখ নাঈম কাসেম জানিয়েছেন, ইসরাইল ও হামাসের চলমান যুদ্ধে জড়িত না হতে বিদেশি শক্তিগুলো তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু এ আহ্বান সত্ত্বেও ইসরাইলের বিরুদ্ধে ‘নিজ পরিকল্পনায়’ হিজবুল্লাহ ব্যবস্থা নেবে এবং এক্ষেত্রে তারা প্রস্তুত রয়েছে।

শুক্রবার লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে আয়োজিত এক সমাবেশে অংশ নিয়ে নাঈম কাসেম আরও বলেন, আরব বিশ্ব এবং জাতিসংঘ ‘প্রত্যক্ষ’ এবং ‘পরোক্ষভাবে’ হিজবুল্লাহকে বলেছে, হামাস-ইসরাইল যুদ্ধে তারা যেন জড়িত না হয়। ইসরাইলকে রক্ষায় ভূমধ্যসাগরে মার্কিন রণতরী পাঠানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মার্কিন অস্ত্রের শক্তিকে হিজবুল্লাহ ভয় পায় না। তিনি বলেন, আপনাদের যুদ্ধজাহাজ নিয়ে আমাদের কোনো আগ্রহ নেই। আপনাদের রক্তচক্ষু ও রক্তব্যকেও আমরা ভয় পাই না।

জাহাজ ও গুপ্তচর বিমান পাঠাচ্ছে যুক্তরাজ্য : হামাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইসরাইলের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতির অংশ হিসাবে এবার নৌবাহিনীর দুটি জাহাজ, ১০০ নাবিক এবং নজদারি বিমান পাঠাচ্ছে যুক্তরাজ্য। শুক্রবার ভূমধ্যসাগরের পূর্বাঞ্চল থেকে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীকে এ সহায়তা দিয়েছে ঋষি সুনাক সরকার।

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে জানা গেছে, পসেইডন পি-৮ বিমান ও অন্যান্য বিমানের টহল ফ্লাইট শুক্রবার শুরু হচ্ছে। এ বিষয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ডাউনিং স্ট্রিট ঘোষণা করেছে, ইরান বা রাশিয়ার মতো দেশগুলো থেকে লেবাননের হিজবুল্লাহকে অস্ত্র সহায়তার যে কোনো প্রচেষ্টার পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সাইপ্রাসের আকটরিরির আরএএফ ঘাঁটিতে যোদ্ধা ও বিমানবাহিনী সতর্ক অবস্থায় থাকবে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

অবশেষে মুখ খুললেন মাহমুদ আব্বাস : ইসরাইল-হামাসের সংঘাত নিয়ে অবশেষে মুখ খুলেছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। তিনি বলেছেন, ‘ইসরাইলি বোমাবর্ষণে প্রায় ৫শ শিশু ও বিপুলসংখ্যক বেসামরিক নাগরিকের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে গাজা।’

শুক্রবার ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে জারি করা এক বিবৃতিতে বলা হয়, আম্মানে জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহর সঙ্গে বৈঠককালে প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেন, ‘যুদ্ধে বেসামরিক লোকদের হত্যার এ পদ্ধতি আমরা প্রত্যাখ্যান করি, কারণ এটি নৈতিকতা, ধর্ম ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।’ জনগণের বিরুদ্ধে একে নিষ্ঠুর আগ্রাসন বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গাজা উপত্যকায় অবিলম্বে একটি মানবিক করিডর খোলার আহ্বান জানাচ্ছি। চিকিৎসা ও মানবিক সহায়তাসহ পানি ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা বহাল রাখা জরুরি হয়ে পড়ছে।

জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ বলেন, ‘গাজায় চলমান সহিংসতা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। জর্ডান ফিলিস্তিনিদের সুরক্ষার জন্য জরুরিভাবে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনার সর্বাত্মক চেষ্টা করছে।’
এছাড়া জর্ডানে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে এক বৈঠকে মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, জোর করে ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করা হলে সেটা দ্বিতীয় নাকবায় পরিণত হবে।

গাজায় বেসামরিক মৃত্যু সীমিত করার আহ্বান ব্লিঙ্কেনের : মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন গাজায় বেসামরিক মানুষের মৃত্যু সীমিত করার জন্য ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি শুক্রবার কাতারের রাজধানী দোহায় সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান। ব্লিঙ্কেন ইসরাইলের রাজধানী তেল আবিব সফরের পর আরব বিশ্বের ছয়টি দেশ সফরে বের হয়েছেন।

অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, ইসরাইলের নিজেদের সুরক্ষার অধিকার রয়েছে। তবে ফিলিস্তিনের বেসামরিক হতাহতের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। তিনি বলেন, নিরপরাধ অনেক ফিলিস্তিনি সমস্যায় পড়েছে। অনেকে জীবন হারিয়েছে। তবে হামাসের হামলার পর ইসরাইলের এছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।
তিনি বলেন, ইসরাইল যা করছে তা প্রতিশোধ নয়, দেশের জনগণকে রক্ষার জন্য করছে। এক্ষেত্রে অন্য কোনো দেশ হলেও একই কাজ করত।