চট্টগ্রামে প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা। গেল আগস্টে ডেঙ্গুতে প্রতিদিন গড়ে আক্রান্ত হয়েছিল ৯৭ জন। তবে সেপ্টেম্বরের ১৫ দিনে আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ৭৬৬ জন। মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের। এই হিসাবে এ মাসে প্রতিদিন গড়ে আক্রান্ত হয়েছে ১১৭ দশমিক ৭৪ জন। গত মাসের তুলনায় চলতি মাসে গড় রোগী শনাক্ত বেড়েছে ২০ জনের বেশি।

এ ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না। গত ২২ জুন থেকে মশক নিধনে ১০০ দিনের ক্রাশ প্রোগ্রাম গ্রহণ করেছিল চসিক। পরে বাড়ির ছাদবাগানে পানি, ময়লা-আবর্জনা জমে আছে কি না, সেটা ড্রোনের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণের ঘোষণা দেন মেয়র। লার্ভা পাওয়া যাওয়ায় বেশ কিছুদিন ভবন মালিকদের জরিমানাও করা হয়েছিল। তবে এখন এর কোনো কিছুই চোখে পড়ছে না।

চট্টগ্রামে আগস্টে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ৩ হাজার ১১ জন। একই সময়ে আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২৮ জনের।

সেপ্টেম্বরে এর ভয়াবহতা আরও বেড়েছে। সর্বশেষ সোমবার একদিনে ১৫৯ জন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছরে একদিনে আক্রান্ত এটাই সর্বোচ্চ। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার সকাল ৮টার পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১০২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত ৭ হাজার ৫৫৩ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। যার মধ্যে ৩১৮ জন রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাকিরা সুস্থ হয়ে ফিরে গেছেন।

চট্টগ্রাম জেলা কিটতত্ত্ববিদ এনতেজার ফেরদাওছ বলেন, ‘গত বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর পিক সময় ছিল নভেম্বরে। এই হিসাবে চলতি বছরের আগস্ট মাসের চেয়ে সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। একটানা বৃষ্টি হওয়ার কারণে আগস্টে পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে ছিল। সেভাবে সেপ্টেম্বরে বৃষ্টি হচ্ছে না। চলতি মাসে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত ও অসহনীয় গরম এডিস মশা প্রজনন বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। ফলে এই মাসে আক্রান্তের সংখ্যা সব রেকর্ড ভাঙতে পারে।’

ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি হাসপাতালের বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. মামুনুর রশিদ বলেন, ‘বিআইটিআইডি হাসপাতালে সর্বোচ্চ ৫২ রোগী চিকিৎসাধীন, যা চলতি বছরের মধ্যে রেকর্ড। আমরা ভেবেছিলাম, চলতি মাস থেকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসবে। কিন্তু অনিয়মিত বৃষ্টিপাত এবং গরমের তাপমাত্রা অসহনীয় থাকায় শঙ্কা তৈরি করেছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে না আসলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অতীতের কোনো রেকর্ডের সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতির মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই শঙ্কাও বেশি।’

তিনি আরও বলেন, ‘চলমান ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে সচেতনতার বিকল্প নেই। জ্বর হলেই যেকোনো বয়সি রোগীকে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ডেঙ্গু কি না তা নিশ্চিত হতে হবে। প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।’

ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চসিকের উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাসেম এবং ম্যালেরিয়া ও মশক নিধন কর্মকর্তা শরফুল ইসলাম মাহিকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল করলেও তারা রিসিভ করেননি।

চট্টগ্রাম