কাসুন রাজিথার বল স্কয়ার লেগে ঠেলে দিয়ে রানের জন্য ছোটেন মেহেদী হাসান মিরাজ, দ্রুত প্রান্ত বদল করেন নাজমুল হোসেন শান্তও। কিন্তু বল ফিল্ডারের হাতে দেখে মিরাজ ফিরে যান নিজের প্রান্তে। দুজনই তখন একসঙ্গে। নাটক জমিয়ে মিরাজকে রানআউট করার আগে একই প্রান্তে দাঁড়ানো বাংলাদেশের দুই ব্যাটারকে বল দেখিয়ে ব্যঙ্গ করেন রাজিথা।

নাজমুলের ৮৯ রানের পরও মাত্র ১৬৪ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। অল্প রান নিয়েও শুরুতে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আঁচ দিয়েছিলেন তাসকিন-শরিফুলরা।

শেষ পর্যন্ত আধিপত্য বিস্তার করেই জিতেছে স্বাগতিকরা। ৬৬ বল হাতে রেখেই পাঁচ উইকেটে ম্যাচ জিতে নেয় শ্রীলংকা। এশিয়া কাপে হার দিয়ে শুরু করা বাংলাদেশের পরের রাউন্ডে ওঠার পথটা কঠিন হয়ে গেল। রোববার পাকিস্তানের লাহোরে আফগানিস্তানের মুখোমুখি হবেন সাকিব আল হাসানরা। ওই ম্যাচে জিতলেও পরের রাউন্ডে যেতে শ্রীলংকা ও আফগানিস্তানের ম্যাচের ফলাফলের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে বাংলাদেশকে। সেই ম্যাচে যদি আফগানিস্তান জিতে যায়, তাহলে নেট-রান রেটে গ্রুপ শীর্ষ দুই দল নির্ধারণ হবে।

১৬৫ রান তাড়া করতে নেমে ৪৩ রানে তিন উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। চতুর্থ উইকেটে সামারাবিক্রমা ও চারিথ আশালাঙ্কার ৭৮ রানের জুটিতে সহজ জয়ের দিকে এগিয়ে যায়। সামারাবিক্রমা হাফসেঞ্চুরি (৫৪) করে আউট হওয়ার পর দ্রুত ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে ফেরান সাকিব। পাঁচ উইকেটে শ্রীলংকার রান তখন ১২৮। পরে আশালাঙ্কা (৬২*) ও শানাকার (১৪*) ব্যাটে জয়ের বন্দরে পৌঁছায় স্বাগতিকরা।

উইকেট শুষ্ক দেখে টস জিতে ব্যাটিং নেয় বাংলাদেশ। দুদলের লড়াইয়ে আগে আলোচনা ছিল ইনজুরিতে দুর্বল হয়ে যাওয়া স্বাগতিকদের বোলিং। সেই দুর্বল বোলিং আক্রমণের এত শক্তি সেটা হয়তো অনুমান করতে পারেননি সাকিবরা। ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের হতাশার ছাপ অনেকদিন ধরেই। ওপেনিংয়ে তামিম ইকবাল-লিটন দাস না থাকায় প্রত্যাশা তেমন ছিল না শুরুটা নিয়ে।

তবুও বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য তানজিদ হাসান তামিমের আগ্রাসী ব্যাটিং অনেক যদি-কিন্তুর আশা দেখিয়েছিল। নাঈম শেখের সঙ্গে কিছুদিন আগেই তানজিদ শ্রীলংকায় ইমার্জিং এশিয়া কাপে খেলেছে। তানজিদে সম্ভাবনার শুরুটা হলো হতাশায় মুড়িয়ে। দুই বল খেলেই ডাক মেরে ফেরেন তিনি। লংকান দলের সবচেয়ে বিশ্বস্ত স্পিনার মাহিশ থিকশানার ভেতরে ঢোকা বল ভুল ব্যাট চালিয়ে এলবিডব্লুর শিকার হন তানজিদ।

স্বপ্নের অভিষেকে এমন যাত্রা হয়তো আজীবন পোড়াবে তাকে। দ্বিতীয় উইকেটে মন্থর ব্যাটিংয়ে গুছিয়ে নেওয়ার আভাস দিয়েছিলেন নাঈম ও নাজমুল। তবে ধনঞ্জয়া ডি সিলভার বলে উঠে এসে মারতে গিয়ে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফেলেন নাঈম (১৬)। চারে সাকিবকে দেখে অবাক হওয়ারই কথা। টানা চার ব্যাটার বাঁ-হাতি। লংকানদের কাজটা যেন তাতেই আরও সুবিধা হয়ে যায়। এছাড়া কিছুদিন ধরে চারে খেলে তাওহিদ হৃদয়ও আস্থা তৈরি করেছিলেন।

সাকিব উপরে এসে দলকে আরও হতাশায় ফেলেন। মাথেশা পাথিরানার শর্ট বল পয়েন্ট দিয়েই মারতে চেয়েছিলেন সাকিব। কিন্তু ব্যাটে লাগার আগেই গ্লাভস ছুঁয়ে মিস টাইমিং হয়। বল চলে যায় উইকেটকিপারের গ্লাভসে। সাকিবের (৫) বিদায়ে বাংলাদেশের স্কোর ৩/৩৬। এরপর তাওহিদ হৃদয় ও নাজমুলকে উদ্ধারকর্তা ভেবে আশায় বুক বাঁধা শুরু করেছিলেন দর্শকরা।

দুজন ৬৯ রানের ভালো একটি জুটিও গড়ে তোলেন। কিন্তু লংকান অধিনায়কের বলে এক পা সামনে এসে রক্ষণাত্মক খেলতে গিয়েও বল প্যাডে লাগান হৃদয়। আম্পায়ার আউট না দিলেও অধিনায়কের রিভিউতে ফেরেন তিনি। এরপর আর বড় জুটি হয়নি। একপাশ আগলে রেখে ধৈর্যশীল ব্যাটিংয়ে ব্যাটন ধরে রাখেন নাজমুল। মিস্টার ডিপেন্ডেবল মুশফিক একবার জীবনও পান। তার ব্যাটের কানায় লেগে বল উইকেটকিপারের পেছনে গেলেও বুঝতে পারেননি আম্পায়ার।

রিভিউ না থাকায় শানাকারও কিছু করার ছিল না। এরপরও উইকেটে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। পাথিরানার বাউন্সারে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ফেরেন ক্যাচ দিয়ে। দুই মিরাজকে নিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটিংটা অনেক লম্বা দেখাচ্ছিল। দুজনের আশাতীত ব্যর্থতায় শেষের পাঁচ উইকেট হারায় মাত্র ২৩ রানে!

ছন্দপতন ডেকে আনেন মিরাজ। রাজিথার লেংথ বল স্কয়ার লেগের দিকে খেলেন মিরাজ। বল যায় সোজা ফিল্ডার বরাবর। দ্রুত রানের আশায় ছোটেন নন স্ট্রাইকে থাকা নাজমুল। শুরুতে বের হলেও পরে আর তাতে সায় দিলেন না মিরাজ। বল ধরে নন স্ট্রাইক প্রান্তে থ্রো করেন ডি সিলভা। কিছুক্ষণ সময় নিয়ে, মজা করে মিরাজদের ডেকে স্টাম্প ভাঙেন রাজিথা। ততক্ষণে মিরাজের আগে স্ট্রাইক প্রান্তে পপিং ক্রিজে ঢুকে যান শান্ত। ফলে বেঁচে যান তিনি। রান আউটে কাটা পড়েন মিরাজ (৫)।

একপ্রান্তে লড়াই করে যাওয়া নাজমুলকে নিয়ে তখনও আশা বাংলাদেশের। সেঞ্চুরির দোয়ারে গিয়ে তিনিও ব্যর্থ হলেন। বাংলাদেশও দুইশ ছুঁতে পারেননি। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরির হাতছানি থেমে যায় ৮৯ রানে। থিকশানার বল ব্যাট-প্যাডের ফাঁক দিয়ে স্টাম্পে লাগে। তার ১২১ বলের ইনিংসে ছিল সাত চার। অথচ নাজমুলের এই সম্ভাবনাও শেষ হতে পারত দুই রানের সময়। অধিনায়ক ক্যাচ ফেলে দেন।

এরপর ৫২ রানে আরও একটি জীবন পান। তৃতীয়বার কোনো সুযোগই আসেনি। তার বিদায়ের পর শেষ দুই উইকেটে মাত্র দুই রান যোগ করে বাংলাদেশ। নিজের অষ্টম ওভারে তাসকিন ও মোস্তাফিজকে ফিরিয়ে চার উইকেট পূরণ করেন পাথিরানা। থিকশানা নেন দুটি উইকেট।