চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের একটি কনটেইনার ডিপোতে আগুন ও বিস্ফোরণের ঘটনায় কমপক্ষে ২১ জন নিহত হয়েছেন। ভয়াবহ বিস্ফোরণে চতুর্দিকের অন্তত ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার এলাকা প্রচণ্ডভাবে কেঁপে উঠে। এ ঘটনায় দুই শতাধিক অগ্নিদগ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেলেও এ সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। অনেক মানুষের প্রাণহানি ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির হতাহতের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আগুনে পোড়াসহ নানাভাবে আহতদের চিকিৎসায় রক্তের জন্য সাহায্য চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মেডিকেলে বর্তমানে ডিউটি নেই তাদেরকেও দ্রুত মেডিকেলে গিয়ে আহতদের চিকিৎসা দেয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন। মেডিকেল কলেজ এলাকায় যেসব এম্বুলেন্স থাকে তার সবগুলোকেই দুর্ঘটনাস্থল থেকে মেডিকেলে নিয়ে আসার জন্য পাঠানো হয়েছে। রাত ২টার দিকে মেডিকেলে এক অবর্ণনীয় মানবিক বিপর্যয়ের চিত্র দেখা গেছে। চট্টগ্রামে নিকট অতীতে যত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে তাতে এতবড় মানবিক বিপর্যয় ঘটেনি। সীতাকুণ্ড থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পর্যন্ত এই রাতের নিস্তব্ধতা মধ্যে নিহত-আহতদের স্বজনদের আর্তনাদে উপস্থিত সবাই সমব্যাথী হয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। শুধু এম্বুলেন্সের চিৎকার, গুরুতর আহতদেরকে নিয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসক নার্স ও রোগীদের দোড়াদৌড়িতে পুরো হাসপাতাল জুড়ে প্রচন্ড শোকের আবহ বিরা করছে।

শনিবার (৪ জুন) দিবাগত রাত ১১টার পর এ ঘটনা ঘটে। এ বিস্ফোরণে ফায়ার সার্ভিস কর্মী এবং শিল্প পুলিশের সদস্যসহ অন্তত অর্ধশত লোক আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ফায়ার-সার্ভিস সূত্র জানায়, এদিন রাত ১১টার দিকে সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারী এলাকার বিএম কন্টেইনার ডিপোর একটি কন্টেইনার এ আগুন লাগে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট এবং ডিপোতে কর্মরতরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। এরমধ্যে রাত ১১টার দিকে বিকট শব্দে ওই কন্টেইনার বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর পর ডিপোতে থাকা অন্যান্য কনটেইনারে আগুন ধরে যায়। ধীরে ধীরে আগুনের তীব্রতা আরও বাড়তে থাকে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের আরো কয়েকটি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজে নিয়োজিত হয়। আগুন লাগার কয়েক ঘণ্টা পার হলেও এখনো আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের ২৯টি ইউনিট।

আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক ফারুক হোসেন সিকদার বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে আমাদের ২৯টি ইউনিট কাজ করছে।
আগুন লাগার পর কনটেইনারে বিস্ফোরণ হয়, সেখানে থাকা ক্যামিক্যালের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে । আগুনের সূত্রপাত কিভাবে তা তাৎক্ষণিক জানাতে পারেননি তিনি।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ওই কন্টেইনার ডিপোতে অবস্হানরত বেশ কয়েকজনকে অগ্নিদগ্ধ অবস্হায় চট্টগ্রাম মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।

রাত ১টা ৫০ মিনিটের দিকে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত, আগুন জ্বলছে। ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে। স্থানীয় লোকজনও আগুন নেভানোর কাজে সহায়তা করছেন।

ডিপো মালিকদের সংগঠন বিকডার মহাসচিব রুহুল আমিন বিপ্লব জানান, ওই ডিপোতে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের একটি চালান ছিল। ওই পণ্যভর্তি কনটেইনারে বিস্ফোরণের খবর পেয়েছি।

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে কর্মরত পাঁচলাইশ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাহ আলম বলেন, এরইমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত ভর্তি হয়েছে শতাধিক। পুলিশের ৭ জন ও ফায়ার সার্ভিসের ৩ জন সদস্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, বহু মানুষের বাড়ি ঘরের জানালার গ্লাস ভেঙে যায় বলে জানা যায়।

বিএম কন্টেইনার ডিপোর পরিচালক মুজিবুর রহমান বলেন, কি কারণে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে কন্টেইনার থেকেই আগুন ধরেছে বলে ধারণা করছি। নৈতিকতা ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে হতাহতদের পাশে থাকব বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। আহতরা যাতে সর্বোচ্চ চিকিৎসা পায় সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার আমরা বহন করবো। এ দুর্ঘটনায় যারাই হতাহত হয়েছেন তাদেরকে সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। পাশাপাশি সকল হতাহতের পরিবারের দায়িত্ব নেয়া হবে। প্রশাসন যেভাবে সিদ্ধান্ত দিবে সেভাবেই সহায়তা করা হবে। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সবাই পাশে থাকুন।