শাহনেওয়াজ শাহীদ
অহে নারী, তোমারে বোঝাতে নারি, নারীবাদী হয়েছো তব নারী হতে পারোনি।
নারীবাদের উৎপত্তি নারীকে অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা দেবার জন্য হয়নি। নারীবাদ তত্ত্ব বা ফেমিনিস্ট থিওরির মূল কথা হচ্ছে লিঙ্গ সমতা নির্ধারণ ও স্থাপন। সাম্য আনতে গিয়েও তত্ত্বের নামে শুধু ‘নারী’ ট্যাগ লাগানো এবং এই তত্ত্বের মূল কথাকে অতিক্রম করে এর নাম অর্থাৎ ‘নারীবাদ’ শব্দটি ধারণার সাথে পরস্পরবিরোধিতার শিকার হচ্ছে আজকের সমাজে।
নারীবাদী বলতেই উপরি সুযোগ-সুবিধা হাতিয়ে নেওয়া, এমনটাই হচ্ছে বর্তমানে। মূল নারীবাদ সাম্য চেয়েছে, অতিরিক্ত লাভ কিংবা লোকসানও নয়। কিন্তু আদৌ কি নারীর অধিকারের জন্য নারীবাদের প্রয়োজনীয়তা আছে? কারণ ছবিতে। যদি সমতা চাওয়া হয় তবে নারীর অধিকার কখনোই প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু ন্যায় বিচারে অবশ্যই সম্ভব। অথচ বর্তমানে দেখা যায় নারীবাদ কাকে বলে তাই লোকে জানে না, তবুও নারীবাদী সেজে নিজের অজান্তেই নিজেকে লোকালয়ে পরিচিত করতে চায়। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
সাধারণ আমার মা-বোনদের প্রতি আমার একটি শিশুসুলভ প্রশ্ন। ” এক লোক সমাজের খুবই ভালো মানুষ, তিনি ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন এবং সব সময় নামাজের কথা বলেন, অপরদিকে আরেকজন তার ভালো-মন্দের কোনো ঠিক নেই কিন্তু তিনি সমাজে পরিচিতি পাওয়ার জন্য সবাইকে নামাজের দাওয়াত দেন।” এখানে কার কথা শুনে আপনি নামাজে আকৃষ্ট হবেন? এখন অনেকেই বলবেন দ্বিতীয় ব্যক্তি যেমনই হোক তিনিও তো ভালো কাজে ডাকছেন। কিন্তু আসলে তা নয়। তিনি আজ নিজের লাভের জন্য ভালো কাজের প্রচার করছে, কাল অন্য লাভের জন্য আপনাদের ব্রেন ওয়াসের মত অডিও-ভিডিও বার্তা দিবেন না তার কি নিশ্চয়তা আছে? খেয়াল করলে দেখবেন যারা এরুপ অপপ্রচার চালায় তারা তাদের বার্তায় বিভিন্ন এপস, গেইম অথবা পন্যর কথা বলে। এখন এরুপ নারীবাদী, হিংসাত্মক কথাবার্তার মাধ্যমে তারা খুব সহজে এবং অনেক বেশি পরিমানে অডিয়েন্স কভার করতে পারে। যার ফলে তাদের ব্যবসাও রমরমা হয়। আর বড় মাপের প্রচারনায় সংস্থার ফান্ডিং তো আছেই। আর একটি জিনিস খেয়াল করলে দেখা যাবে মানুষ পজিটিভ থেকে নেগেটিভ জিনিসের প্রতি বেশী আকৃষ্ট হয়।
ইতিহাস পড়লে দেখা যায়, প্রথমদিকে নারীবাদী আন্দোলনকারীরা নিজেদের আদৌ ‘নারীবাদী’ ভাবতেন না। তারা নিজেদেরকে ভোটাধিকারপ্রার্থী বলেই অভিহিত করতে স্বচ্ছন্দবোধ করতেন। ফেমিনিজম শব্দটি প্রথম পরিচিতি পায় ফ্রান্সে, অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে। তখনও পর্যন্ত কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই শব্দটি অজানাই ছিল। এমনকি যাকে বলা হয় ফেমিনিজমের প্রথম ঢেউ, সে সময়েও ‘ফেমিনিজম’ শব্দটি আসেনি। ফ্রেঞ্চ শব্দ ‘Feminisme’ থেকে উৎপত্তি হয়েছে ইংরেজি ‘Feminism’-এর। এটি প্রথম প্রবর্তিত হয় সমাজতন্ত্রবিদ চার্লস ফুরিয়ারের মাধ্যমে। ইংরেজি ভাষায় সর্বপ্রথম এর ব্যবহার এই আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়ে, ১৯৯০ সালে।
ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, নারী হিসেবে হিংসাত্মক প্রচারণা সবচেয়ে বেশী হয় ভারতীয় উপমহাদেশে অর্থ্যাৎ ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান এইদিকেই। অন্যান্য দেশে নারীর অধিকার ও ন্যায় বিচারমূলক প্রচারণাই হয়।
মোদ্দা কথা “একটি ছেলে সাধারণত তার পুরুষ হিসেবে দ্বায়িত্ব যেমনঃ পরিবারের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান নিশ্চিতকরনের পর যদি ঘরে রান্না করে, পরিবারের মানুষের সাহায্য করে তাতে দোষের কি? তদ্রূপ একটি মেয়ে সাধারণত তার নারী হিসেবে দায়িত্ব যেমনঃ পরিবারের সুখের নিশ্চয়তা দেওয়ার পর যদি সামাজিক ভাবে নিজের জন্য একটি নতুন পদ তৈরী করে তাতেও দোষের কিছু নয়।
এখন এই কথা শোনার পর অনেকেই বলবেন আমি তো তাহলে আবারও নারীদের ছোটই করলাম। কথাটি নিত্যান্তই হাস্যকর। কারণ আমার কথা মুল উদ্দেশ্য ব্যক্তি হিসেবে প্রথম দায়িত্বটি বুঝিয়ে দেওয়া। যেমন আদিযুগে পুরুষ তুলমূলক সাহসী, শারিরীক ভাবে শক্তিশালী হওয়ায় শিকারের মাধ্যমে খাদ্য নিশ্চয়তা ছিলো পুরুষের দায়িত্ব। অপরদিকে নারী তুলনামূলক বুদ্ধিমান বেশী হওয়ায় খাদ্যের সুষম বন্টন ছিল তাদের দায়িত্বে। তাতেও যদি নারীদের সম্মানের হানী ঘটে তবে দয়া করে আপনারা ” সংসার সুখী রমনীর গুনে হয় না” এমন প্রবাদের আরম্ভ করুন।