শবে বরাতের
মহামারী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে এবার এক ভিন্ন পরিস্থিতিতে শবেবরাত উপস্থিত মুসলমানদের সামনে। আজকের রাতটি মুসলিম মিল্লাতের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ।

সামাজিক বিচ্ছিন্নতার স্বার্থে সারা দেশে মসজিদগুলোতে বড় জামায়াতে নামাজের বিষয়ে নিরুৎসাহিত করছেন আলেমরা। এমতাবস্থায় আজকে শবেবরাতের নামাজ ও অন্যান্য এবাদত বাসায় একাকী আদায়ের আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

করোনাভাইরাসের কারণে পবিত্র শবে বরাতে মসজিদ, কবরস্থান ও মাজারে যাওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইফা বলেছে শবে বরাতের রাতে মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ না পড়ে ঘরে নামাজ পড়তে। একই সঙ্গে মাজার ও কবরস্থানের গেট বন্ধ রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

হেফাজতে ইসলামের আমীর ও হাটাহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেন, শবে বরাতে একাকী ইবাদত করা রাসূল সা.-এর সহীহ হাদীস ও আছারে সাহাবা (সাহাবীদের আমল) থেকে প্রমাণিত। তাই বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করুন। নিজেদের কৃত গুনাহ থেকে তওবা করুন। বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়িতে না গিয়ে নিজ নিজ ঘরে একাকী ইবাদতের মাধ্যমে শবে বরাত পালন করা উচিত।

প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষায় সমাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পবিত্র শবে বরাতে ঘরে বসে ইবাদত করতে মুসল্লিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান ও শোলাকিয়া ঈদগাহের গ্র্যান্ড ইমাম মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ।

বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, শবে বরাতে আমাদের দেশের মানুষ মসজিদে সমবেত হয়ে ইবাদত করেন। কিন্তু ইবাদত ব্যক্তিগত বিষয়, সম্মিলিত নয়। তারাবির নামাজ ছাড়া অন্য কোনো নফল নামাজের জন্য মানুষকে ডাকাডাকি করে মসজিদে উপস্থিত করা- শরীয়ত অনুমোদিত নয়।

আল্লামা মাসউদ বলেন, করোনা সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষায় সমাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ঘরে বসে ইবাদত করে শবে বরাত পালনে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এজন্য ইবাদতকে কেন্দ্র করে মধ্যরাতে ঘোরাঘুরি করা, শোরগোল করা শরীয়ত ও আইনবিরোধী।

শায়খ জাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের মহাপরিচালক আল্লামা মুফতী মিজানুর রহমান সাঈদ যুগান্তরকে বলেন, দেশের আলেমদের পরামর্শ নিয়েই সবাইকে মসজিদে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। সরকার যদি জনস্বার্থে শরীয়ত বিরোধী নয় এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয় সেক্ষেত্রে তা মান্য করা জরুরি।

সুতরাং সরকার যে ঘোষণা দিয়েছে মসজিদে মুসুল্লিদের না যাওয়ার ব্যাপারে সেটা ওলামায়ে কেরামের পরমার্শ মোতাবেকই নিয়েছে। সবার জন্য এটা অনুসরণ করা কর্তব্য।

লালবাগ মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মুফতি ফয়জুল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, শবে বরাতে মসজিদে জামায়াতবদ্ধ হয়ে আনন্দ করা, হইচই করা ও গণজমায়েত করাও বিদআত। কেননা সালাফে সালেহীন থেকে এমন রীতি পাওয়া যায় না।

বিশেষত মহামারীর প্রেক্ষিতে এ বছর কোনভাবেই মসজিদে জমায়েত করা যাবে না। শবে বরাতের রাতের আমল মুসতাহাব আর নিজের-সমাজের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা রক্ষা করা ওয়াজিব।

তিনি বলেন, বর্তমান এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে শবে বরাতে নফল ইবাদতের জন্য মসজিদে জমায়েত হওয়ার কোন অনুমোদন কুরআন, সুন্নাহ ও ইসলামী আইনে নেই৷ শরীয়তের বিধান অমান্য করে যারা আবেগের টানে মসজিদে যাবে,তারা ভুল করবে এবং অন্যের ক্ষতির কারণ হবে, যা নাজায়েজ।

আরো পড়ুন : ইসলাম ও জীবন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here