হাতে থাকা মাত্র ১০ হাজার টাকায় নিজের ব্যবসা শুরু করেন ফারজানা। তখন অনেকেই তার স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টাকে সমর্থন করেননি। এছাড়া ধর্মভীরু পরিবারের কর্তারাও চাননি তাদের মেয়ে ঘরের বাইরে যাক, ব্যবসা করুক। আরো ছিলো নানা সীমাবদ্ধতা। তবে সব প্রতিবন্ধকতা ডিঙিয়ে কেবল দৃঢ মনোবল আর অদম্য সাহসের জোরে এগিয়ে গেছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত এই নারী হয়েছেন একজন সফল উদ্যোক্তা।

গল্পটি চট্টগ্রাম শহরের সফল নারী উদ্যোক্তা সৈয়দা ফারজানা হারুনের। একান্ত নিজের প্রচেষ্টায় যিনি আজ সফলতা পেয়েছেন। মাত্র ১০ হাজার টাকার শুরুটা আজ প্রায় সাড়ে ৬ লক্ষাধিক টাকার ‘এসএফ বুটিক’ এ পরিণত হয়েছে। অদম্য ইচ্ছা আর সৎসাহস এই নারীর স্বপ্নকে দিয়েছে পূর্ণতা।পাশাপাশি নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করছেন আরো অনেক নারীকে।

চট্টগ্রাম শহরের চাঁদগাঁও এলাকায় জম্ম ফারজানা হারুনের। ছয় ভাইবোনের আদরের ফারজানার ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিলো নিজে কিছু করার। তবে উচ্চ মাধ্যমিকে বিয়ে করায় তার স্বপ্ন অনেকটা থেমে যায়। বিয়ের পর তিনি পরিবারের সাথে সৌদি আরব চলে যান। সেখাম থেকে দশ বছর পর স্বপরিবারে দেশে ফিরেন তিনি। এখানে এসে আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখতে থাকেন নিজে কিছু করার।

ফারজানা হারুন জানান, তিন বছর আগে দেশে ফিরেই নিজে কিছু করার সিদ্ধান্ত নেই। তবে তখন আমার কাছে পুঁজি বলতে ছিলো ক্যাশ ১০ হাজার টাকা। এই সামান্য টাকায় ব্যবসার মতো সম্পূর্ণ নতুন জগতে প্রবেশ করি। আর এক্ষেত্রে আমার ভাই বোনেরা উৎসাহ দেয়ার পাশাপাশি খুব বেশি সহযোগিতা করেছিল।

এই সাহসী নারী জানান, প্রথমে হাতে থাকা সবকটি টাকায় ভালো ডিজাইনের কিছু কাপড় সংগ্রহ করি। এরপর এক নিকটাত্মীয়ের সহযোগিতায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘এসএফ বুটিক’ নামে একটি পেজ খুলি। আর সেই ১০ হাজার পুঁজির যাত্রাটা এখন প্রায় ৭ লক্ষ টাকার পরিণত হয়েছে। আর এই প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত থেকে এখন ১৪/ ১৫ জন নারী জীবিকা নির্বাহ করেন।

ফারাজানা বলেন, আমার এই এগিয়ে যাওয়াতে আমার পরিবারকে সনসময় সাথে পেয়েছি। বিশেষ করে আমার ভাইবোনদের কাছ থেকে অনেক বেশি সহযোগিতা পাচ্ছি। বলতে গেলে তারাই এখন আমার এগিয়ে যাওয়ায় রসদ যোগাচ্ছেন। পাশাপাশি আমার এখন অনেক শুভাকাঙ্ক্ষীও হয়েছে। তাঁরাও আমাকে নানাভাবে সহযোগিতা করছেন। তাদের সবার কাছেই আমি কৃতজ্ঞ।

তবে ফারজানার আক্ষেপ, নারীর আত্মনির্ভরশীল হওয়ার ক্ষেত্রে সরকারি নানা উদ্যোগ সমূহের যথাযথ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। নারীদের প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পগুলো অব্যস্থাপনা আর দূর্নীতির কারণে যথাযথ ফল বয়ে আনতে পারছেনা।

এদিকে ফারজানা নিজের মতো অন্য নারীদেরকে ও স্বাবলম্বী হতে উৎসাহিত করেন। বিশেষ করে তার প্রতিষ্ঠানে কাজ করে অনেক নারীই আজ সফল উদ্যোক্তা।

ফারজানা বলেন, নারীদের আত্ননির্ভরশীল হওয়ার ক্ষেত্রে সনাতনী পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব পুরোটা না কাটার পাশাপাশি সরকারের যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা না পাওয়াটাও অনেকটাই দায়ী। এছাড়া নারীদের পরনির্ভরশীল থাকার মানসিকতাও তাদের ভাগ্য পরিবর্তনে বাঁধা বলে মনে করেন এই সফল নারী।

তবে ফারজানার মতে , এখানকার নারীরা আগের চেয়ে অনেক সচেতন। তাদের একটি বড় অংশ বলতে গেলে পুরুষদের সমানতালেই এগিয়ে যাচ্ছেন। এর পেছনে নারী শিক্ষার প্রসারের পাশাপাশি তাদের অদম্য ইচ্ছা অনেকটা কাজ করছে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি নারীদের অগ্রযাত্রায় বর্তমান গণমাধ্যমের সহযোগিতার বেশ প্রশাংসা করেছেন এই সফল নারী।

এদিকে অন্যান্য নারীদের প্রতি এই সফল নারী উদ্যোক্তার অনুরোধ, প্লিজ আপনারা শিকল ছিড়ে বেরিয়ে আসুন। নিজের পায়ে নিজে দাঁড়ানোর চেষ্টা করুন। নিজের ভাগ্য নিজেই তৈরী করুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here