রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের ৯০ শতাংশ বহুতল ভবনের অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা নাজুক। ঢাকার কারখানা, বাণিজ্যিক ভবন, বিপণিবিতান, হাসপাতালসহ সেবা খাত সংশ্লিষ্ট ভবনগুলোর বেশির ভাগই রয়েছে আগুনের ঝুঁকিতে। এ অবস্থায় অহরহ ঘটছে অগ্নিকাণ্ড। আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে প্রাণহানি। ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারিয়েছে এক হাজার ৪৯০ জন। এর মধ্যে বিগত এক বছরেই আগুন কেড়ে নিয়েছে ৩৮৯ জনের প্রাণ।

আবাসিক ভবনে অপরিকল্পিতভাবে কারখানা, গুদাম, অফিস ও গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হলেও অগ্নিঝুঁকির বিষয়টি আশঙ্কাজনকভাবে উপেক্ষিত। নেই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। নতুন ভবনে নিরাপত্তা স্থাপন করা হলেও পুরান ঢাকাসহ নগরজুড়ে পুরনো ভবনগুলো রয়ে গেছে আগের মতোই।

সর্বশেষ গত বুধবার রাতে রাজধানীর দিলু রোডে একটি আবাসিক ভবনে অগ্নিকাণ্ডে শিশুসহ তিনজন প্রাণ হারিয়েছে। বাড়িটিতে বায়িং হাউসের অফিস ও পার্কিংয়ে বেশ কয়েকটি গাড়ি ছিল। সেখানে গাড়ির সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

গত বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৭৪ জন নিহত হয়। সেখানে অনিরাপদ ভবন থেকে আশপাশে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ওই বছরের ২৮ মার্চ রাজধানীর বনানীতে ২৩ তলা এফআর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ২৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার পর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বহুতল ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে ব্যানার ঝুলিয়ে দেয় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও ফায়ার সার্ভিস। ২০১৯ সালে বেসরকারি ৪৫টি ও সরকারি ১০টি ভবনে অতি ঝুঁকিপূর্ণ শনাক্ত করে ব্যানার টাঙিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। এ সময় ২৫৪টি বেসরকারি ভবন ও ২০টি সরকারি ভবনে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে ব্যানার টাঙানো হয়েছে। তবে এখনো বেশির ভাগ ভবনেই অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়নি।

ফায়ার সার্ভিসের সূত্র জানায়, রাজধানীর বিভিন্ন খাতের ভবনগুলো যাচাই করে ৯০ শতাংশেই অগ্নিনিরাপত্তার ঘাটতি দেখা গেছে। ২০১৭ সালে অগ্নিনিরাপত্তা যাচাই করতে ফায়ার সার্ভিস রাজধানীর এক হাজার ৩০৫টি বিপণিবিতান পরিদর্শন করে। এর মধ্যে অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে এক হাজার ৩০০টি। আর মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে ৬২২টি মার্কেট ও শপিং মল। অধিক ঝুঁকিপূর্ণ শপিং মল/মার্কেটগুলোতে অক্সিজেন সিলিন্ডার, পানির রিজার্ভ ট্যাংক, বালুভর্তি বালতি, রেসকিউ সিঁড়িসহ অন্যান্য অগ্নিনির্বাপণ সামগ্রী নেই। ওই সময়ই ঢাকার ৪২৩টি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের মধ্যে খুবই ঝুঁকির মধ্যে থাকা ১০৫টি ভবন শনাক্ত করা হয়। এর মধ্যে ৩১১টি ঝুঁকিপূর্ণ। অগ্নিঝুঁকির ক্ষেত্রে মাত্র সাতটি হাসপাতাল ও ক্লিনিক সন্তোষজনক ব্যবস্থাপনায় রয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা কমাতে জনসচেতনতা বাড়ানোর বিষয় নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বহুতল ভবনগুলোতে মহড়া দেওয়া, পরিস্থিতি মোকাবেলায় করণীয় ও অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জামের ব্যবহার সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ করা হয়েছে। নতুন ভবন নির্মাণের সময় ফায়ার সেফটির বিষয়টি ভাবা হচ্ছে। কিন্তু পুরনো ভবনগুলোতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নতুন করে স্থাপন করা কঠিন। এসব দিকে সচেতন হয়ে ভবন মালিকদের উদ্যোগ নিতে হবে।’

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আলী আহম্মদ খান বলেন, ‘অগ্নিনিরাপত্তার ব্যাপারে ভবন মালিকরা উদাসীন। কোনো ঘটনা ঘটার পর দেশের মানুষ সচেতন হয়। এর আগে তাদের মাঝে সচেতনতা আসে না। অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা শুধু ফায়ার সার্ভিসের কাজ নয়, নিজ উদ্যোগে সবাইকে এই কাজ করতে হবে। যেকোনো ভবন নির্মাণে ন্যূনতম অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকাটা জরুরি।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here